পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম, দেখতে পেলাম চাঁদের পাহাড়, ’ফেসবুক খুললেই রাঢ়বঙ্গের উজ্জ্বল পালের ট্যাগলাইন এখন এটাই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শঙ্কর’ পারেননি, কিন্তু সিউড়ির উজ্জ্বল পেরেছেন। সাইকেল উজিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেছেন আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে।প্রথম ভারতীয় হিসেবে ‘চাঁদের পাহাড়’ জয় করে নজির গড়েছেন তিনি।
সেভেন সামিট (সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ) ও সেভেন ভলক্যানো (সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি) আরোহণ করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছেন বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত।এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বতের সর্বোচ্চ স্থান উহুরু শৃঙ্গে (৫,৮৯৫ মিটার) জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বাঙালির মুকুটে ফের গর্বের পালক জুড়লেন আরও এক বঙ্গসন্তান উজ্জ্বল।
জন্ম সিউড়ি নতুন ডাঙ্গালপাড়ায়।কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।পরে চাকরি শুরু করে একটি বেসরকারি সংস্থায়। তবে সেটাও বেশিদিন নয়।অভিযানের নেশায় চাকরি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন দেশ ভ্রমণে।
অভিযানের নেশা তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী।দুরন্ত সাহস নিয়ে দুর্গমকে জয় করার টান তাঁর শিরায় উপশিরায়। স্বপ্ন দেখেন সবুজ পৃথিবীর। ‘চাঁদের পাহাড়’ জয় করার বাসনা নিছক অভিযানের দুর্নিবারের নেশা নয়,এর পিছনে রয়েছে সামাজিক বার্তাও।ছোট থেকেই গাছপালা ঘেরা পরিবেশে বড় হওয়া উজ্জ্বল গোটা বিশ্বকেই একদিন ভরিয়ে দিতে চান সবুজ দিয়ে।গাছ লাগানোর উপকারিতা মানুষের মনে গেঁথে দিতেই তাঁর এই অভিযানের নাম ‘গ্রিন অন হুইল’। আদরের সাইকেল ‘চেতক’কে দোসর করে উজ্জ্বল তাই বেরিয়ে পড়েছেন বিশ্ব জয় করতে। ‘‘সারা জীবনে অন্তত একটি গাছ লাগান।তাকেই যত্নে বড় করে তুলুন,’’ উজ্জ্বলের ‘গ্রিন অন হুইল’ অভিযানের বার্তা এটাই।
সাইকেলে চড়ে ভ্রমণের নেশা তাঁকে পেয়ে বসে গত কয়েক বছরে। এমনটাই জানিয়েছেন উজ্জ্বলের পরিবারের লোকজন। কখনও দেশের মধ্যে, আবার কখনও দেশের বাইরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, জার্মানি, তুরস্ক, গ্রিস, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নানা দেশ ঘুরে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। ‘চাঁদের পাহাড়’ অভিযান শুরু হয় গত ২৮ নভেম্বর। মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে সাইকেলে চেপে শুরু হয় যাত্রা। তিন মাসে আফ্রিকা সুদান, কেনিয়া, ইথিওপিয়া-সহ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি পৌঁছন তানজানিয়ায়।স্থানীয় পর্বতারোহীদের সংস্থা থেকে পরামর্শ ও সাহায্য নিয়ে মাসাইমারা থেকে ফের শুরু হয় যাত্রা।২৬ জানুয়ারি সকাল ৬টায় উহুরু শৃঙ্গে তেরঙ্গা পতাকা ওড়ান উজ্জ্বল।
“আমি মনে হয় প্রথম ভারতীয় যে সাইকেলে চেপে কিলিমাঞ্জারোতে উঠেছে।লক্ষ্য ছোঁয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিল এবং আমি সেটা করে দেখিয়েছি,’’ সুদূর আফ্রিকা থেকে ফোনে পরিবারের লোকজনকে এমনটাই জানিয়েছেন উজ্জ্বল।তাঁর বৌদী মানসী পাল জানান ২৩ তারিখ ফোন করে উজ্জ্বল বলেন কিলিমাঞ্জারো জয় করেছেন।মানসী দেবী বলেন,”আমি শুধু ওর পরিবারের লোক হিসেবে বলছি না,ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করছি।’’
আরও পড়ুনঃ দেখে নিন পোস্ট অফিসে এটিএম ব্যবহারের নিয়মাবলী
গাছ লাগানোর বার্তা নিয়ে গত দু’বছরে ১৭টি দেশের প্রায় ৪৫ হাজার কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন উজ্জ্বল। সাইকেলে চেপেই জয় করেছেন ‘চাঁদের পাহাড়’। তবে অভিযানের এখনও শেষ হয়নি।আগামী দিনে আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে উজ্জ্বলের। তারই প্রস্তুতিতে এখন ব্যস্ত তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584