রিপোর্ট আসার আগেই সৎকার দেহ! কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসক-সহ শ্মশানযাত্রীরা

0
121

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

রাজ্যে মৃতদেহের সংখ্যা লুকনো নিয়ে এমনিতেই সমালোচনায় সরব বিরোধী রাজনৈতিক দল। তার মধ্যে লালারসের রিপোর্ট আসার আগে করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধার মৃতদেহ সৎকার করে ফেললেন তাঁর আত্মীয়রা।

corona | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

বুধবার রাতে উত্তর কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ পরিবারের হাতে কি ভাবে চিকিৎসকরা তুলে দিলেন, তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী মাড়োয়ারি হাসপাতালেও। আর এই ঘটনার জেরে মৃতার পরিবারের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হল শ্মশানযাত্রীদেরও।

একই সঙ্গে হাসপাতালে ২ জন চিকিৎসক-সহ ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীকেও দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হল। কি ভাবে করোনার রিপোর্ট আসার আগেই ওই রোগীর দেহ ছেড়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে শো-কজের মুখে পড়তে হতে পারে ওই চিকিৎসককে।

আরও পড়ুনঃ লকডাউন ভেঙে খাবারের দাবিতে অবরোধ ডোমকলে

জানা গিয়েছে, মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাসিন্দা ৮৫ বছরের বৃদ্ধা আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মল-মূত্র ত্যাগে নিয়ন্ত্রণ না-থাকায় বৃদ্ধাকে ১০ এপ্রিল শুক্রবার ভর্তি করানো হয়। ভর্তির সময়ে রোগিণীর কোনও করোনার উপসর্গ ছিল না। করোনা প্রভাবিত কোনও জায়গায় বৃদ্ধা সম্প্রতি গিয়েছিলেন, তেমন তথ্যও মেলেনি।

কিন্তু ভর্তির পর দিন আচমকাই বৃদ্ধার জ্বর আসে। রবিবার রাতে কাশি শুরু হলে করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে তাঁর আচমকা মৃত্যু হয়। আর করোনা রিপোর্ট আসার আগেই ওই দিন বৃদ্ধার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে আসার পর তিনি করোনা সংক্রামিত হলেন না কি আগে থেকেই সংক্রামিত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, পরিবারের এত কিছু জানার কথা নয়। তারা ভেবেছিলেন সমস্ত রিপোর্ট করা হয়ে গিয়েছে। সেই মতো ওই দিন রাতেই নিমতলা শ্মশানে মায়ের দেহের সৎকার করেন দুই ছেলে। মৃতার পরিবারের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কয়েক জনও শ্মশানে গিয়েছিলেন।

বুধবার রাতে বৃদ্ধার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ জানার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলে। তারা নিজেরাই হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে মৃতার দুই ছেলে, বৌমা এবং এক নাতনিকে পরীক্ষা করানোর জন্য নিউ টাউনের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

করোনা পজ়িটিভ কারও দেহ সৎকার কী ভাবে হবে, তা নিয়ে আইসিএমআর-এর সুস্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে যা কঠোর ভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। এক্ষেত্রে কেন সেই নিয়ম মানা হল না? মৃতার ছেলের দাবি, ‘‘আমরা দেহ নিতে কোনও জোরাজুরি করিনি কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তারবাবু নিয়ম রক্ষার জন্য করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানালেন। আসলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েই মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তারাই আমাদের দেহ দিয়ে দেন।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা দাবি, আত্মীয়রাই জোর করে বৃদ্ধার দেহ নিয়ে গিয়েছে। আত্মীয়রা দেহ নেওয়ার জন্য চাপ দিলে তা স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়নি কেন? তা নিয়ে অবশ্য কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কারোর গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শেষ পাওয়া খবরে জানা যায়, এই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here