শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
কথায় বলে ‘অভ্যাস ভাঙতে সময় লাগে।’ দীর্ঘদিন ধরে শহরের বেশিরভাগ মানুষ ছট পুজো পালন করে আসছিলেন রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরে। রাজ্য প্রশাসন আটকানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। কিন্তু করোনা মহামারি ভেঙে দিল সেই দীর্ঘ দিনের অভ্যাস।

পরিবেশের জয় তো হলই, একই সঙ্গে বিভিন্ন ঘাটে ভিড় না করে অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতেই পালন করে এক অনন্য নজির স্থাপন করল শহর কলকাতা। শহরবাসী দেখিয়ে দিলেন, চেষ্টা করলে তারাও পারেন। বাজি ছাড়া, বাজনা ছাড়া, ভিড় ছাড়া এ যেন এক নতুন ছট।আর এভাবে এক অন্য ছটের সাক্ষী হয়ে পুলিশ প্রশাসন মনে করছে, বাস্তবিকই মানুষের মধ্যে নীতিবোধ জাগ্রত হয়েছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে হোক অথবা যে কোন কারণে, সামান্য কিছু মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই এ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করেননি। কৃত্রিম জলাশয় হোক বা বাড়ির ছাদ, ভক্তিভরে ছট পালন করেছেন। মহামারি যদিও বা ঠিক হয়ে যায়, মানুষের এই বিকল্প ঘাটে পুজো করার অভ্যাস পরবর্তী বছরগুলোতে কাজে আসবে এবং পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোয় জনসমাগম আটকানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
আরও পড়ুনঃ কৃত্রিম জলাশয়ে মাত্র ৭ মিনিটে সম্পূর্ণ ছট পুজো!
এমনিতেই শুক্রবার বিকেলে এবং শনিবারের সকাল ছিল মেঘলা। এমনকি শনিবার ভোররাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। মেঘে ঢাকা থাকার কারণে দেখা যায়নি সূর্যদেবকে। তবে তার জন্য ভক্তিতে ভাটা পড়েনি ছট পূণ্যার্থীদের।হাইকোর্টের রায়ের পরেও পরিবেশবিদ থেকে আমজনতার বড় অংশই সন্দিহান ছিল যে ছটপুজো আদালতের রায় ও কোভিড বিধি মেনে পালিত হবে কিনা তা নিয়ে। রায় না মানা বা কোভিড বিধি না মানার প্রবণতা যে একদম ছিল না তা নয়।
তবে প্রশাসন ও পুলিশের কড়াকড়ি সেই সঙ্গে সচেতনার জন্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে লাগাতার প্রচার এবারের ছট পুজোকে ব্যতিক্রমী ভাবেই উতড়ে দিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তো বটেই, শনিবার ভোরেও সেভাবে বিধি ভঙ্গনের ছবি কোথাও সেভাবে ধরা পড়েনি। রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে যেমন কোনও ছট পুজো হয়নি তেমনি বাজেনি তীব্রস্বরে ডিজে, ব্যান্ডপার্টি, তাসাপার্টি।
আরও পড়ুনঃ আদালতের নিষেধ সত্ত্বেও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার দাবিতে বিক্ষোভ
সেভাবে শোনা যায়নি বাজির শব্দও। রাস্তায় চোখে পড়েনি হাজার হাজার মানুষের স্রোত। গঙ্গার ঘাটগুলিতেও সেভাবে ভিড় চোখে পড়েনি।রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে শীতে বহু পরিযায়ী পাখির সমাবেশ হয়। তা ছাড়া স্থায়ী বাসিন্দা পক্ষিকুলও সেখানে রয়েছে ৷
পক্ষিবিদ সুদীপ ঘোষ জানিয়েছেন, “চার বছর পরে রবীন্দ্র সরোবরে ডজন খানেক পেইন্টেড স্টর্ক এসেছে। তারা হ্রদের মাছের দ্বীপে বাসা বেঁধেছে। এ বছরে এখনও পর্যন্ত ১২২ প্রজাতির পাখি এই সরোবরে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্ল্যাক হেডেড কাক্কুশ্রাইক, ওয়ান লেগডবাজার্ড, চেঞ্জেবল হক ঈগল, সুইনহো’জ মিনিভেট, পায়েড হ্যারিয়ার ও ব্রাউন হেডেড গাল। ২০১৮-২০১৯ সালে ছটপুজোয় আতসবাজির দাপটে বেশ কিছু প্রজাতির পাখি এখান থেকে মুছে গিয়েছিল। আশা করি ওরা আবার ফিরে আসবে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584