নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুরঃ
লুকিয়ে-চুরিয়ে অবৈধ মদের ব্যবসা নতুন কিছু নয়। তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই ধরপাকড় চলে, কিছুদিন বন্ধ থাকে আবার পুনরায় শুরু হয়ে যায়। এর সাথে ইদানিংকালে মাদকপাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়ায় মারণঘাতি ড্রাগের নেশায় মেতে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট শহরের একটা বড় অংশের কিশোর ও যুবসমাজ।
এই নেশার বিরুদ্ধে এবার পথে নামল এলাকার মানুষ, মূলত যুব সমাজকে ধ্বংসের পথ থেকে মূল রাস্তায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই বিক্ষোভ প্রদর্শন, পাশাপাশি প্রশাসনকে আরো সজাগ থাকার বার্তা এলাকাবাসীর। এদিন মূলত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলির মহিলারা মিছিল বের করেন ও বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখান। পোস্টার ব্যানার শ্লোগানে অবিলম্বে এই পাতা ড্রাগের নেশা বন্ধে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোরদার দাবি তোলা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কেশপুরের তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে
মিছিল-বিক্ষোভে অংশগ্রহনকারীদের পক্ষে জানানো হয়, মূলত বড়িষা, বাড়বড়িশা, কোলা, পাইকপাড়ি সহ কয়েকটি গ্রামের সীমানা অতিক্রম করে এই সর্বনাশা নেশার প্রবণতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বৃহত্তম এলাকায়।
দিনে এবং রাতের অন্ধকারে একটু আড়াল-আবডালে সাইকেল,বাইকে হাজির হয় এই মাদকপাতা বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দল। একশ্রেণীর কিশোর-যুবক ঘরের ঘটিবাটি থেকে মায়ের গহনা এমনকি সংসারের নানা সামগ্রী বিক্রি করে সেই পয়সায় এই নেশায় বুঁদ হচ্ছে।
ইতিমধ্যে এই নেশার কবলে মারা যাওয়া থেকে অসুস্থ হয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে, এই দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি আছে বলে অভিযোগ করা হয়।নতুনবাজার পূর্বদাসপাড়ার গৃহবধূ রেবা দাস, শঙ্করী রায়, পূর্ণিমা সিং, জয়ন্তী রানা সহ প্রায় চল্লিশজন একসাথে দাবী করেন “আমরা দফায় দফায় পুলিশ, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিও স্যারকে দলবদ্ধভাবে মৌখিক ও লিখিত আকারে বারবার অভিযোগ জানিয়েছি। তবুও এই মাদকপাতা বিক্রি বন্ধের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এমনকি আমরা পাতাসহ বিক্রেতাদের হাতেনাতে ধরে প্রায় শতাধিক মানুষ মিলে অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। হতাশার বিষয়, তারপর দিনই তাকে বুক ফুলিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখেছি। আমাদের কাতর প্রার্থণা আমাদের ঘরের ছেলেপুলেদের এই মারণঘাতি ড্রাগের নেশা থেকে রক্ষা করুন। আমরা কাকে বলব, কার কাছে যাব, যারা আমাদের কথা শুনবে।”
আরও পড়ুনঃ লালগোলায় মধুচক্রের আসর থেকে গ্রেফতার ৭
বাড়বড়িশা গ্রামের গীতা দাস বলেন,”এই নেশায় আমার ছেলে নিজেও শেষ হচ্ছে, আমাদেরকেও শেষ করছে।” বড়িশা গ্রামের মালা মাইতি বলেন, “আমার দুটি শিশু সন্তান। আমার স্বামী সংসারে পয়সা দেয়না, উপরন্তু ঘরের সব বিক্রি করে আমার সংসারটা একেবারে শেষ করে দিল। আমাদের বাঁচান, বন্ধ করুন এই সর্বনাশা পাতার ধোঁয়ার নেশা।”
এই মারণঘাতি নেশায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া এই এলাকার প্রায় সাতজনকে তাদের অভিভাকরা অ্যাসাইলাম সেন্টারে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।এইসব ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন দফতরে যে বারবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তার নথিপত্র সব সযত্নে রেখেছেন। এই বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর প্রশাসন কতটা সহায়ক হবে? অন্যদিকে যুব সমাজ ধ্বংসের পথ থেকে কতটা বের হবে তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েই যাচ্ছে!
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584