নিজস্ব সংবাদদাতা,উত্তর ২৪ পরগনাঃ
নিভৃতবাস কেন্দ্রে পানীয় জল, খাবার, শোওয়ার অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ তো ছিলই। কিন্তু আরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল যে, বাইরে থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পর বিভিন্ন মহিলাকে পুরুষ পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গেই রাখা হচ্ছিল একই নিভৃতবাস কেন্দ্রে। একই শৌচালয়ও ব্যবহার করতে হচ্ছিল মহিলা-পুরুষদের। এ সব নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা হচ্ছিল না। সেই সমস্যা মেটাতেই তৎপর হন উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরের কিছু যুবক-যুবতী। তৈরি হয় মহিলাদের পৃথক নিভৃতবাস কেন্দ্র। সেখানে ঘর পরিস্কার থেকে শুরু করে মহিলাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করছেন ওই ছেলেমেয়েরাই।
কেউ দক্ষিণ ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফিরেছেন, কেউ ভিন রাজ্যে লকডাউনে আটকে পড়ে এলাকায় ফিরেছেন কোনওমতে। প্রায় ১০ জন এমন মহিলাকে ৭০ জনেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল, উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরের ‘শিমুলপুর আনন্দপাড়া নরহরি বিদ্যাপীঠের’ নিভৃতবাস কেন্দ্রে। তা নিয়েই আপত্তি চরমে ওঠে। দেখা যায়, আলাদা ঘরে থাকার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে মাত্র দু’টি শৌচালয়।
ভেলোর থেকে হার্টের অস্ত্রোপচার করিয়ে ফিরে ওই কেন্দ্রে ছিলেন মিতা গোলদার আর তাঁর মা রীতা চক্রবর্তী। মিতার কথায়, ‘‘অচেনা পুরুষদের সঙ্গে থাকতে কি যে অসুবিধা হচ্ছিল তা বোঝানো যাবে না। শৌচালয়ে পুরুষদের পিছনে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত।’’
আরও পড়ুনঃ শহিদ বীরসা মুণ্ডার মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন আশিস, ভুলো, সুনীল, শিবেশ, ত্রিয়ন্তির মতো স্থানীয় যুবক-যুবতীরা। গাইঘাটা ব্লকের বিডিওর কাছে সমস্যাটি সমাধানের জন্য আবেদনও করেন তারা। প্রথমে কিছু মহিলাদের বাড়ি ফিরে নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। বাইরে থেকে ফেরা কিছু মহিলাকে আবার এলাকায় ঢুকতে বাধা দেয় স্থানীয় মানুষ। এরপর ফের বিডিও-র সঙ্গে বৈঠক করে স্থানীয় একটি মেয়েদের স্কুলে মহিলাদের জন্য নিভৃতবাস কেন্দ্রের প্রস্তাব দেন ওই ছেলেমেয়েরা। কিন্তু প্রশাসন জানিয়ে দেয়, ওই স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্রের অনুমতি দিলেও স্কুল পরিস্কার থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিতে হবে ওই ছেলেমেয়েদেরই। তাতেই রাজি হয়ে যান আশিস, ত্রিয়ন্তিরা।
লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় বেশ নোংরা হয়েই পড়ে ছিল ‘ঠাকুরনগর উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’ চত্বর। রবিবার সকাল থেকে ওই ছেলেমেয়েরা ঝাড়ু দিয়ে নোংরা পরিস্কার করেন। ডেটল-জল দিয়ে গোটা স্কুল জীবাণুমুক্ত করা হয়। ভাড়া করে আনা হয় জেনারেটরও। এরপর সেখানে অ্যাম্বুলেন্সে করে মহিলাদের নিয়ে আসেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পাটনা থেকে ফিরে ওই স্কুলে মা ও বছর তিনেকের মেয়েকে নিয়ে রয়েছেন পূজা বিশ্বাসের মত গৃহবধূরা। শুধু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাই নয়, বাচ্চার দুধ, সময় কাটানোর জন্য লুডোও কিনে দেওয়া হয়েছে তাদের।
নিভৃতবাস কেন্দ্রে অব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ, বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। কিন্তু ঠাকুরনগরের ওই ছেলেমেয়েদের ব্যবহারে খুশি প্রশাসন ও আশ্রয়কারীরাও। এ দিন পূজা বলেন, ‘‘ওরা না থাকলে ছোট্ট মেয়েটা আর মাকে নিয়ে কোথায় যেতাম কে জানে!’’ আর ওই যুবক-যুবতীদের হয়ে আশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতেও তো মা-বোনেরা রয়েছে। তাই ওদের সমস্যার কথা জানতে পেরে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে কাজটা করেছি।’’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584