কবিতায় একুশে মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস কি ও কেন?

0
441

 শ্যামল রায়:  কবিতায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিশ্ব কবিতা দিবস।
কিন্তু কবিতা ঘিরে বিশ্ব তোলপাড় এবং সম্মানের সহিত স্বীকৃতি লাভ করলেও কবিতা নিয়ে পাঠকের কাছে কতটা মাথাব্যথা প্রশ্ন উঠতেই পারে আজকের দিনে।
অনেকেই জানেননা বিশ্ব কবিতা দিবস এর তাৎপর্য কী ও কেন?
অথচ কবিতায় বিশ্ব কবিতা দিবস এর স্বীকৃতি লাভ করেছে বহু বছর আগে থেকেই। ফের আবার এসে গেল বছরের একটি মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস।
বলতে দ্বিধা নেই আজকের এই সময়ে কবিতা নিয়ে একটা সস্তায় সম্মান অর্জনের লেখক-লেখিকা হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত। অথচ যারা কবিতা লিখছেন তাদের কাছে কবিতা সম্পর্কে কতটা গুণগতমানের সেই সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে কিনা জানা নেই আমার। কবি জীবনানন্দ দাশ তাই লিখেছিলেন সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি।
কথা টা সত্যিই। জীবনানন্দ দাশ লিখবেন কেন এটাতো ধ্রুব সত্য কথাই সকলেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন চেষ্টা করেন সফলতা পাবার কেউ কেউ সফলতা অর্জন করেন আর কেউ কেউ পারেন না। সফলতা পেয়ে থাকেন হাতেগোনা কয়েকজন। অথচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন কখনও শয়ে শয়ে কখনও হাজারে হাজারে।


তা বর্তমান সময়ে কবিদের সংখ্যা হাজারে হাজারে। কিন্তু কবিতা কত জন পাঠক কে মনে দাগ কেটে যায় এটা কিন্তু ভাবার সময় এসে গেছে। কিন্তু আমরা কি আদৌ কবিতার বিষয় নিয়ে ভাবছি?
যাই হোক কবিতা নিয়ে ভাবা দরকার আছে যেহেতু কবিতা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি লাভ করেছে বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষে। তাই সচেতন শীল ভাবেই কবিতার গুণগত দিক যেমন দেখা উচিত তেমনি কবিতা আবৃত্তি জুড়ে যারা লেখক-লেখিকা রয়েছেন তাদেরও সামাজিক বার্তা কিভাবে হতে পারে তার ভাবনাটাও ভাবা উচিত।
আসা যাক একুশে মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস কেন ?
বিশ্ব কবিতা দিবস এর প্রাক্কালে হাজারো প্রশ্ন আছে কবিতা নিয়ে।
পাঠকের মধ্যে কেউ কেউ বলে থাকেন কবিরা কবিতা লিখছেন বটে কিন্তু এতটাই দুর্বোধ্য যে তার মানে উদ্ধার করা যায় না তাই কবিতার ভাবার্থ বোঝা খুব মুশকিল হয়ে পড়ে।
তবুও যারা কবিতা লেখেন কবিতা নিয়ে ভাবেন কবিতা নিয়ে চিন্তা করেন তাদের কাছে কবিতা ভালোবাসার ভাষা।
কবিতা কখনো রোমান্টিকতায় ভরপুর হয়ে ওঠে আবার কখনো কবিতা প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে। কবিতায় গান হয়ে ওঠে কবিতা কখনো ় সিনেমা হয়ে ওঠে ।কবিতা় অন্ধকারাচ্ছন্ন ময় পথকে আলোয় আলোকিত করে তোলে। তাই কবিতা বলতে কি আবেগের বিজ্ঞান কে বোঝানো হয়ে থাকে? তাহলে বলতে হয় কবিতা কি?
আবেগ ও বিজ্ঞান এই দুটির সংমিশ্রন ঘটলেই পংক্তিমালা গুলো কবিতা রূপ ধারণ করে। কবিতা শিল্পের একটি শাখা। যেখানে ভাষার নান্দনিক ও গুণাবলীর ব্যবহারের পাশাপাশি ধারণাগত এবং শব্দার্থিক বিষয়বস্তু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যারা কবিতা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন সেই সমালোচকদের মত কবিতা প্রতিমুহূর্তে আচরণে আবরণে আহবানে নিজের অস্তিত্ব তথা বোধ জাত ও উপলব্ধি ঠিক রেখে নিজেকে ভাঙে আবার গড়ে। এই নির্মাণশৈলীতে ভরা কারুকার্য দেখে যার যতটা মন টানবে যার কাছে যতটা আনন্দ দেবে যার কাছে যতটা অন্তরের ভেতর মিলেমিশে একাকার হবে তার কাছে সেই কবিতার মূল্যায়ন যথার্থ রূপ ধারণ করবে বলেই মনে হয়।
একুশে শে মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস।
1999 সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এই দিনটিতে বিশ্ব কবিতা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব ব্যাপী কবিতাপাঠ রচনা প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা।
আরও জানা গিয়েছে যে পূর্বে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসাবে পালন করা হতো। প্রথমে 5 অক্টোবর এবং বিশ শতকের শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট’ অগাস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে 15 october বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হতো।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে বিশ্ব কবিতা দিবস কবিতা পাঠ আলোচনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হতো। কবিতা পাঠ হোক কবিতা প্রকাশিত হোক আজকের কবিতা দিবসে স্মরণ করা যেতেই পারে।

কবিতায়বিশ্ব কবিতা দিবস হিসাবে আমাদের কাছে উৎসাহের অন্ত নেই। কিন্তু কবিতার প্রতি সার্বজনীনভাবে দরদ এবং কবিতা নিয়ে ভাবনাচিন্তা কবিতা নিয়ে কর্মশালা কবিদের জন্য সরকারিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো এসবের কিন্তু বালাই নেই আজকের সময়েও। আমরা পিছনের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাব লেখকদের জীবনে দুঃখ কষ্টের অন্ত নেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি থাকলেও শেষ দিকে কিন্তু তিনি নিদারুণ দুঃখ কষ্টে ভুগেছিলেন। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র জমিদারি ছিল না অথচ তাঁর দুবেলা ভাত জোটাবার পয়সা পর্যন্ত ছিলনা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল শিবরাম চক্রবর্তী সহ একাধিক লেখক-লেখিকার জীবন দশায় অর্থের অভাব ছিল প্রচণ্ড। আজকের সময় হলে অবশ্য ঐ সমস্ত লেখকরা বই প্রকাশের রয়েলিটি অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করতে পারতেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
কিন্তু এখনো প্রথা সরল হয়নি। পরিচিতির একটা গন্ডিতে বাধা রয়েছে আজকের সাহিত্য। কবিতার বই প্রকাশের জন্য হন্য হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় প্রকাশকদের কাছে। আজকের বিশ্ব কবিতা দিবস এ বলতে দ্বিধা নেই যে কোনো প্রকাশক কবিদের বই প্রকাশের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন কিনা? মনে হয়না।। যতদূর জানা গিয়েছে লেখক-লেখিকাদের আর্থিক সাহায্য নিয়েই প্রকাশকরা বই প্রকাশ করে থাকেন।
আজকের বিশ্ব কবিতা দিবস এ বলতে দ্বিধা নেই যে এখনও বহু লেখক-লেখিকা আছেন যারা সাহিত্যজগতে সমাজ চেতনায় আলোকবর্তিকা নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। সাহিত্য সৃষ্টি ় একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। সৃষ্টিমূলক কাজ বলেই আমাদের বিশ্বাস। সাহিত্য যেন লেখক-লেখিকাদের কাছে একটা নেশায় পরিণত হয়। অভাব অনটনের কথা ভুলে গিয়ে চর্চায় মগ্ন থাকেন বহু লেখক-লেখিকা। এ যেন একটা ঝড়-বৃষ্টিতে ডিঙ্গি নৌকায় চেপে ভেসে ভেসে বেড়ানোর মতো একটা শখ সাহিত্যিকদের মধ্যে থাকে। তাই অনেক সময় লেখকদের বলা হয় পাগলা। আর পাগলা থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্য। সাহিত্যের প্রধান অঙ্গ কবিতা।
কিভাবে জন্মায় একটা কবিতা।
একজন দম্পতির কাছে সন্তান-সন্ততির জন্য যে রোমান্টিকতা যে ভালোবাসা যে দুঃখ যে কষ্ট যে যন্ত্রনা থাকে একটি কবিতার জন্মের ক্ষেত্রেও সমভাবেই সমরূপ বলে যারা সৃষ্টি করেন তারা জানেন। কিভাবে বেড়ে ওঠে সব কবিতা বা কবিতার কথা।
তবে কবিতার জন্ম নিয়ে জোরালো কোনো বক্তব্য নেই। কবিতার ক্ষেত্রে এখানে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মত কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক সংমিশ্রণ নেই। যা চোখে দেখা যায় যা ভাবনায় রেখা পথ ধরে হাটে অনুভব করা যায় উপলব্ধি করা যায় তারই একটা বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন কবিরা। সেই বাস্তব রূপ তা কখনো কবিতা হয়ে উঠতে পারে আবার কবিতা নাও হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু কবিতার সৃষ্টি হয় বলে দাবি লেখক-লেখিকাদের। তবে কবিতা আড়ালে-আবডালে চোরাপথ ধরে বেড়ে ওঠা প্রেম ও প্রকৃতির খেলা। নানাবিধ নতুন নতুন শব্দের সংমিশ্রণে তৈরি হতে পারে একটা নির্মাণ কাজ। সেই নির্মাণ কারুকার্যের কাজে অনেকের দৃষ্টিনন্দন হতে পারে আবার অনেকের না হতে পারে। যাদের এই কবিতার প্রতি দৃষ্টি নন্দন প্রকট হয় সেটি কবিতার রূপ সুন্দর হয়েছে বলতে পারি।
তবে বিশ্ব কবিতা দিবস এ বলতে পারি যারা কবিতা লেখেন তারা কলম ধরা কলম ধরা শ্রমিক। পারিশ্রমিক বিহীন কলম ধরে ধরে নেশায় মগ্ন থাকেন এরা। অনেকে পারিশ্রমিক পান আবার অনেকে পাননা। না পাওয়ার সংখ্যাটাই সবথেকে বেশি।।
বিশ্ব কবিতা দিবস এ কবিদের তরফ থেকে আওয়াজ উঠুক
কবিতার জন্য ভাবতে হবে আমাদের। কবিদের জন্য ভাবতে হবে আমাদের। কবিরা অসংগঠিত শ্রমিক। এদের ভিতর রয়েছে শিল্প সত্তা। তাই শিল্প সত্তার প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে এদেরকেউ সরকারিভাবে ভাতা প্রদান, সরকারিভাবে চিকিৎসা , নানান ধরনের পরিষেবা প্রদান করলে বিশ্ব কবিতা দিবস এর তাৎপর্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here