শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২১ মে:
২০২০ সালের ২০ মে দিনটি সহজে ভুলবে না পশ্চিমবঙ্গবাসী। করোনাবিধস্ত বঙ্গে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে একদিকে যেমন বহু জেলা গুড়িয়ে গিয়েছে, ঠিক তেমনই কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। এমন ভাবেই আমফান তাণ্ডবকে নবান্নে বর্ণনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে মৃতদের পরিবার পিছু আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমফানের জেরে গোটা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুড়িয়ে গিয়েছে দুই ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং কলকাতা ৷ এরপরেই মৃত্যুর পরিসংখ্যানের হিসেব তুলে ধরেন তিনি। কলকাতায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ তার মধ্যে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় সাইক্লোনের সময় গাছ উপড়ে মা -ছেলের মৃত্যু হয়েছে, অসাবধানতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন বেশ কয়েক জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃত ৭, উত্তর ২৪ পরগনায় আমফানে ১৭ জনের মৃত্যু, হাওড়ায় মৃত্যু ৩ জনের, হুগলিতে মৃত্যু ৪ জনের, পূর্ব মেদিনীপুরে আমফানের বলি ৬ ৷ পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও ২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে ৷ পূর্ব বর্ধমানে আমফানের বলি ১, নদিয়ায় আমফানের জেরে ৪ জনের মৃত্যু, সুন্দরবনে ৪ জনের মৃত্যু, ডায়মন্ড হারবার থেকে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর ৬, রানাঘাট থেকে ৬ ও বারুইপুর থেকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে ৷
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা রাজ্যে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আধিকারিকদের তার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। মন্ত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার কাজ ভাগ করে দেন। নিজেও শুক্রবার থেকে কিছু এলাকায় যাবেন বলে ঘোষণা করেন। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঝড় যে এত ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে তা বোঝা যায়নি ৷ তবুও একদিনের নোটিশে বিভিন্ন জেলা থেকে ৫ লক্ষ মানুষকে না সরালে আরও মানুষের প্রাণহানি ঘটত। দিঘাতে কম ক্ষতি করলেও দুই ২৪ পরগনার সর্বনাশ করে শেষ করে দিয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে আমফান ৷ তাতে গোটা ধ্বংসের চিত্রটা বুঝতেই ৩-৪ দিন লেগে যাবে, এক দিনে কিচ্ছু হবে না৷ পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তী, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড় থেকে যা খবর পাচ্ছি, তা ভয়ঙ্কর ৷ অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, জল নেই ৷ রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া সব জায়গাই বিপর্যস্ত। প্রচুর বাড়ি, নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছে।’একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি, ঝড় থেমে গেলেও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ ত্রাণ শিবির ছেড়ে যাবেন না ৷ সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে রাজ্যের ১০-১২ দিনেরও বেশি সময় লাগবে৷
এদিন আমফানের তাণ্ডবের কিছুটা বর্ণনাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরে আমফানের ল্যান্ডফল যখন হয় তখন এই গতিবেগ ছিল ১৮৫ কিমি। উপকূলবর্তী এলাকাতেই বেশি ক্ষতি হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১০টার মধ্যেই ২২২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিগত কয়েক দশকে এত কম সময়ে এত বৃষ্টি হয়নি। কলকাতায় ১১৫ কিমি/ঘন্টা গতিবেগ থাকলেও কলকাতার একেবারে উত্তরপ্রান্তের দমদমে হাওয়ার গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ১৩৩ কিমি/ ঘণ্টায় । ঠিক সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ২০ মিনিটে সর্বোচ্চ গতিবেগে বয়ে গিয়েছিল আমফান।
আরও পড়ুন:চিকিৎসক-নার্সদের সংক্রমণ আটকাতে সল্টলেক আমরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে রোবট
এরপরেই রাজ্যে আমফানে মৃতদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারকে সহানুভূতি জানানোর ভাষা নেই আমার৷ তবু যদি এই টাকাগুলো পেয়ে মানুষের যদি কিছুটা উপকার হয়৷ ’ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেও বিপর্যয়ে রাজ্যকে সাহায্যের জন্য দ্রুত বিপর্যয় মোকাবিলা ফান্ড পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584