নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে গৌরবময় ইতিহাস তৈরী হলো পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুরে।মেদিনীপুর ররীন্দ্র স্মৃতি সমিতির ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ উৎসবের সূচনা হলো সোমবার সকালে। সোমবার সকালে রবীন্দ্র নিলয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মাল্যদানের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়।মাল্যদান করেন সংস্থার সভাপতি প্রাক্তন অধ্যাপক জগবন্ধু অধিকারীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা।এরপর প্রায় চার শতাধিক রবীন্দ্রানুরাগী মানুষের একটি বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরী শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে।রবীন্দ্র নিলয় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে গান্ধী মূর্তি, বিদ্যাসাগর মূর্তি, ক্ষুদিরাম মূর্তি হয়ে হেড পোষ্ট অফিস রোড ধরে কলেজ মোড়ে রবীন্দ্র মুর্তির পাদদেশে যায় এবং সেখানে থেকে পুনরায় রবীন্দ্র নিলয়ে এসে পদযাত্রা শেষ হয়। বৃষ্টিস্নাত সকালে জয়ঢাক,ধামসা , মাদল, কলসী মাথায় নাচ এবং কচিকাঁচা সহ বড়দের উপস্থিতি পদযাত্রাটিকে বর্ণময় করে তোলে। মেদিনীপুর শহরের ৩৫ টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা সংঘবদ্ধ ভাবে পদযাত্রায় যোগ দেন।বৃষ্টির কারণে পদযাত্রার রুট কিছুটা কমিয়ে দিতে বাধ্য হন আয়োজকরা।
গোটা পদযাত্রাটি তদারকি করেন রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতি সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র ওঝা, সাংস্কৃতিক সভাপতি জয়ন্ত সাহা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হায়দার আলী। পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার অমিয় পাল,কবি অঞ্জন শিকদার।রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অলক রায় চৌধুরী,বিশিষ্ট চিকিৎসক বিবেক বিকাশ মন্ডল, চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়া,চিকিৎসক শশাঙ্ক শেখর মন্ডল,উদ্যোগপতি উদয় রঞ্জন পাল, নৃত্যশিল্পী শ্যামলী সাহা,সাহিত্যিক বিদ্যুৎ পাল সহ সংস্কৃতি তথা অন্যান্য জগতের বহু বিশিষ্ট জন।নিজেদের সুললিত কন্ঠে ঘোষণা ও আবৃত্তিতে পদযাত্রাকে আকর্ষণীয় করে তোলেন মালবিকা পাল,বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়,শুভদীপ বসুরা।সকালবেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন লোকশিল্পীরা।তাঁরা তাঁদের ঝুমুর গানে উপস্থিত সকলের মন জয় করে নেন।সন্ধ্যায় সমবেত গুণীজনদের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে ৭৫ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সঙ্গীত শিল্পী অলক রায় চৌধুরী। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বরলিপির শিল্পীবৃন্দ।এরপর সমিতির পক্ষ থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের গুণীজনদের সম্বর্ধনা জানানো হয়। একক সংগীতে আসর মাতালেন সর্বানী হালদার। সমবেত সংগীতে অংশ নেয় ওঁকার মিউজিক সার্কেল,ইমন ও সংকলন সংস্থা।
সমবেত নৃত্যে যোগ দেয় তালম্, সৃজনভূমি, নৃত্য বিতান, নটরাজ মিউজিক কলেজ, নটরাজ ড্যান্স একাডেমী, লাস্য ড্যান্স একাডেমী প্রভৃতি সংস্থা।সমবেত আবৃত্তি পরিবেশন করে কথামালা, স্বর-আবৃত্তি,স্বর ও ধ্বনি, আবৃত্তি কলা কেন্দ্র,কাব্য ও কলা প্রভৃতি সংস্থা।বিভিন্ন সংস্থার অনুষ্ঠানগুলি স্ব স্ব প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষিকাদের তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়।শেষ লগ্নে নিজের একক হৃদয়গ্রাহী সঙ্গীতে আসর জমিয়ে দেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অলক রায় চৌধুরী।গোটা অনুষ্ঠানটি সূচারুভাবে সঞ্চালনা করেন লক্ষণ চন্দ্র ওঝা ও হায়দার আলি। সন্ধ্যাকালীন অনুষ্ঠানে দর্শকদের ভীড় ছিল উপচে পড়া। উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেদিনীপুর আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৪৪ সালে মেদিনীপুরে গড়ে ওঠে রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতি।আর ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমিতির নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ রবীন্দ্র নিলয়। যার নাম করণ করেন অধ্যাপক ক্ষিতিমোহন সেন।অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান সাংস্কৃতিক সভাপতি তথা বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী জয়ন্ত সাহা।
আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রাম জেলায় মৃদু কম্পন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584