মোহনা বিশ্বাস, বিনোদন ডেস্কঃ
আরও কিছুক্ষণ নয় বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন যিনি, যার ভুবনমোহিনী হাসিতে বাঙালি নস্ট্যালজিক হয়ে পরে, যিনি বাঙালির কাছে নিজেকে ভোলাতে পারেননা, আপামর বাঙালি যাকে ভালোবেসেছে। তিনি হলেন বাঙালির স্বপ্নে দেখা রাজ্যকন্যা বাংলার মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। আজ তাঁর জন্মদিনে বিশেষ নিবেদন নিউজফ্রন্ট বাংলার।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রমা দাসগুপ্ত। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ ছবিতে অভিনয় করে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন তিনি। যদিও সে ছবি মুক্তি পায়নি। মহানয়িকার অভিনীত ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ প্রথম মুক্তি পায় এরপর ১৯৫৩ সালে।
এরপর ওই একই বছরে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। এই ছবিতে মহানায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেন মহানায়ক উত্তমকুমার। প্রথমবার এই নতুন জুটিকে পেয়ে দর্শকও বেশ খুশি হয়েছিল। এই ছবি মুক্তি পাওয়ার সময় থেকেই রমা নাম বদলে কিংবদন্তীর নাম হয়ে যায় সুচিত্রা।
আরও পড়ুনঃ বলিউডের দৈনিক মজুরির শ্রমিকদের রেশন প্রদানের ঘোষণা অমিতাভের
তাঁর অভিনীত এই ছবি প্রথম সাফল্যের মুখ দেখেছিল। এরপর একে একে ‘ওরা থাকে ওপারে’, ‘ঢুলি’, ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘শাপমোচন’, সবার উপরে’, ‘সাগরিকা’, ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরি’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘ইন্দ্রাণী’, ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’, ‘চাওয়া পাওয়া’র মতো ছবিতে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সুচিত্রা সেন।
১৯৫৫ সালে বিমল রায় পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘দেবদাস’এ পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করেন মহানায়িকা। এই ছবিতে অভিনয় করেই প্রথম বলিউডে পা রাখেন তিনি। এরপর হিন্দি ছবি ‘মুসাফির’, ‘চম্পাকলি’, ‘বোম্বাই কা বাবু’, ‘সারহাদ’এ অভিনয় করেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ফিরছে ‘গানের ওপারে’ থেকে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’
১৯৭৫এ মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবি ‘আঁধি’তে সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী সুচিত্রা।সালটা ১৯৬১। মুক্তি পেল অজয় কর পরিচালিত ছবি ‘সপ্তপদী’। তখন জনপ্রিয়তার শিখরে সুপারস্টার সুচিত্রা সেন। উত্তম-সুচিত্রা জুটি যে ছবিতে একেবারে হিট। উত্তম কুমারের লিপে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটি বাঙালির নস্ট্যালজিয়া হয়ে রইল।
এরপর এই জুটি উনিশ শতকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে ‘বিপাশা’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘গৃহদাহ’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘দত্তা’র মতো একের পর এক মনমুগ্ধ সিনেমা উপহার দিয়ে গেছেন দর্শককে। ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান মহানায়িকা। ২০১২ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন সুচিত্রা সেন।
১৯৬৩ সালে থার্ড মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও বহুবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন মিসেস সেন।
১৯৮০ সালে উত্তম কুমারের শেষ শয্যার পাশ থেকে উঠে সুচিত্রা সেন চলে গিয়েছিলেন কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ৫২/৪/১ ঠিকানার বাড়িতে। যার নাম এখন ‘বেদান্ত’। সেই যে অন্তড়ালে গেলেন, তারপর তিনি স্বেচ্ছায় ফিরলেন মাত্র একবারই।
১৯৮০ সালের পর ১৯৮২ সালে রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ১৯৭৮ সালে মঙ্গল চক্রবর্তীর ‘প্রণয় পাশা’ চলচ্চিত্রে তিনি শেষ অভিনয় করেছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন আড়ালে থাকার পর ২০১৪-র ১৭ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর শূণ্যতা কোনদিন পূরণ হবে না। তবে ইন্দ্রাণী, দত্তা, কাজরী, রিনা ব্রাউন হয়ে বাঙালির মনের মণিকোঠায় আজীবন চিরস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584