মোহনা বিশ্বাস, হুগলিঃ
অদ্রিজা ঘোষ। বয়স মাত্র ৮। চন্দননগরের একটি বেসরকারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তাঁর বয়স যখন পাঁচ তখনই অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় ছোট্ট অদ্রিজা। কি এই অসুখ? যা এই ছোট্ট মেয়েটির শরীরে বাসা বাঁধল। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হল এমন একটি রোগ যার জেরে হঠাৎ রক্তের প্লেটলেট অত্যাধিক কমে যায়। অস্থিমজ্জায় বা বোন ম্যারোয় হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না।
শরীরের কোথাও রক্তপাত শুরু হলে তা থামতে চায় না। নিয়মিত রক্ত দিয়ে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে হয়। কিন্তু এইভাবে বেশিদিন রোগীকে বাঁচানো যায় না। এর থেকে বাঁচার একটাই মাত্র উপায় হল রক্ত কোষ পাল্টানো বা বোন ম্যারো পাল্টানো। আর এই কঠিন রোগেই আক্রান্ত ৮ বছরের অদ্রিজা। ২০১৭ সালে তাঁর শরীরে র্যাশ দেখে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে মেয়েকে নিয়ে যায় অঞ্জন ঘোষ ও সঙ্গীতা ঘোষ।
কিন্তু এ রোগের হদিশ পাননি চিকিৎসক। তাই চিকিৎসকের পরামর্শেই অদ্রিজাকে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে ভর্তি করা হয়। সেখানেও ধরা পড়েনি এই রোগ। এরপর ভেলোর সিএমসি-তে হেমাটোলজি বিভাগে দেখানো হয় তাঁকে। তখনই জানা যায় অদ্রিজা অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত। তাঁদের হাতে আর তিনমাস সময় আছে। এর মধ্যেই অদ্রিজাকে সুস্থ করে তুলতে বোন ম্যারো পাল্টে ফেলতে হবে।
কলকাতা, ভেলোর, বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল ঘুরে শেষপর্যন্ত সবচেয়ে কম যে খরচের ফর্দ পরিবার পেয়েছে, তা ৩০ লক্ষ টাকার। এদিকে মেয়েকে সুস্থ করতে গিয়ে লকডাউনের ঠিক আগেই কাজ হারিয়েছেন অদ্রিজার বাবা অঞ্জন ঘোষ। ফলে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন অঞ্জন বাবু। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়কের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছিলেন চুঁচুড়ার এই পরিবারটি। তাঁদের এই আবেদনে প্রথমেই সাড়া দিয়েছিলেন মন্ত্রী তথা বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত। এরপর এই ঘোষ পরিবারের ডাকে সাড়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর।
আরও পড়ুনঃ পুরনো ভাড়াতেই বৃহস্পতিবার ধাপে ধাপে পথে নামতে চলেছে বেসরকারি বাস
সংবাদমাধ্যমে এই খবর দেখে এবার অদ্রিজার বাড়ি এলেন অরূপ সাহা। ব্যান্ডেল ১নং গান্ধী কলোনির বাসিন্দা। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বুধবার চুঁচুড়া আখনবাজারে ঘোষ বাড়িতে গিয়ে অদ্রিজার চিকিৎসার জন্য অঞ্জন ঘোষের হাতে ২০ হাজার টাকার দেন অরূপ বাবু। শুধু তাই নয়, এদিন ছোট্ট অদ্রিজার জন্য একটা টেডিবিয়ার ও চকোলেটও নিয়ে যান তিনি।
অরূপ সাহা বলেন, “এখনই তো সময়। এই দুর্দিনে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আর মানুষ হলাম কেন? বাচ্চা মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে প্রত্যেকেরই এগিয়ে আসা উচিৎ। মানুষ হয়ে নিজের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এটাই কর্তব্য। সবাই ভালো থাকুক।” অরূপ বাবুর কাছ থেকে এহেন সাহায্য পেয়ে খুশি অদ্রিজার পরিবার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584