দেবাশিসের চাপ

0
127

প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার

ঢপ দেওয়া এবং অতি তুচ্ছ কারণে চাপ নেওয়া — এই দু’টি বিষয়েই আমরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ মানতাম দেবাশিসকে। ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন পর দেবাশিস আমাদের গ্রীনপার্কের মেসে এসে উঠেছিল। দু’চার দিন পরেই কাজের মাসিকে ওর ভাগের মাইনেটা কীভাবে দেবে, সেটা নিয়ে প্রচন্ড চাপ নিয়ে বসলো।

Priyaranjan Karar | newsfront.co
প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার

মেসের ম্যানেজার অরিজিৎদার কাছে গিয়ে ভয়ে ও দ্বিধায় ঘামতে ঘামতে প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা অরিজিৎদা, কাজের মাসিকে তোমরা একসাথে দাও, নাকি এক এক করে দাও?” সবাই যখন হাসতে হাসতে বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে গেছে, তখনও দেবু নিজের ভুল বুঝতে পারেনি।

সিনিয়ররা পরামর্শ দিল,”প্রেম করলে ছেলেরা স্মার্ট হয়। তোদের ব্যাচের কোনও মেয়ের সাথে দেবুর সেটিং করে দে।” একদিন ক্যানটিনে তিথি আর দেবাশিসকে পাশাপাশি বসিয়ে সবাই মিলে দু’জনের মগজ ধোলাই করলাম। ঠিক দু’সপ্তাহ বাদে তিথি কাঁদতে কাঁদতে এসে আমাদের জানালো, “দেবু আমার সাথে ব্রেক-আপ করে দিয়েছে।” সেদিন সন্ধ্যায় মেসে সবাই মিলে দেবুকে চেপে ধরলাম। দেবু নির্বিকার গলায় জবাব দিলো, “তিথিকে দেখলে আমার ঘেন্না লাগে।”
— “ওমা, কেন?”
–“ওর বাম হাতের সবকটা আঙুলেই ইয়া বড় বড় নখ।”
— “তাতে কী?”
–“তোরা একবার ভাব, সকালবেলায় বাথরুমে ইয়ে করে কীভাবে?”

Story | newsfront.co
সংগৃহীত চিত্র

আমাদের লেগ-পুলিংয়ের কারণেই সম্ভবত সেকেন্ড ইয়ারে দেবু মেস ছেড়ে দিয়ে ট্রেনে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে শুরু করলো। উইক এন্ডে আমরা দল বেঁধে যখন বাড়ি ফিরতাম, দেবু আগে স্টেশনে পৌঁছে আমাদের সবার জন্যে ট্রেনে সিট রাখতো। অথচ নিজে কোনও দিন জানলার ধারে বসেনি। ইউনিভার্সিটির কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যেও আমরা দেবুকে কখনও জড়াতে দেখিনি।

আরও পড়ুনঃ পঞ্চস্বরে পঞ্চম

একদিন ট্রেনে দরজার সামনে দাঁড়ানো একটা মেয়ের সঙ্গে চার-পাঁচজন ষণ্ডামার্কা চেহারার ছোকরা অসভ্যতা করছিল। ওদের চেহারা দেখে আমরা কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ দেবু নিজের সীটে রুমাল রেখে চশমাটা খুলে প্যান্টের পকেটে গুঁজে এগিয়ে গেল। ট্রেনটা সবে গতি কমিয়ে একটা প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে শুরু করেছে, তখন দেবুর একটা অসাধারণ লাথিতে একজন মস্তান চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়লো প্ল্যাটফর্মে। বাকিরা ট্রেন থামতেই সুড়সুড় করে নেমে গেল।

আরও পড়ুনঃ বাঙালীর গর্বের সেতু

দেবু আবার নির্বিকার মুখে নিজের সীটে এসে গল্প জুড়ে দিলো, “তোরা তো চিরকাল আমাকে আন্ডারএস্টিমেট করিস। জানিস, আমার দিদি কোয়েল মল্লিকের ক্লাসমেট ছিল। একবার দিদির সঙ্গে মল্লিক বাড়িতে গিয়েছিলাম। কোয়েলদি আমাকে গাল টিপে আদর করে বলেছিল, এমন হ্যান্ডসাম ছেলে আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কখনও দেখিনি। বড় হয়ে ঠিক হিরো হবে।”

সেই প্রথম আমরা দেবুর ঢপে হেসে গড়িয়ে পড়লান না। বুঝলাম, এক একটা জিনিস এক একজন মানুষের অঙ্গের ভূষণ হয়ে ওঠে। ব্যাট ছাড়া সৌরভ, সেতার ছাড়া রবি শংকর আর ঢপ ছাড়া দেবু, জাস্ট ভাবা যায় না।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here