বিপ্লব আসছে

0
82

লেখকঃ শরিয়াতুল্লাহ সোহন ( ধূমকেতু )

শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি, আষাঢ় মাস কবেই পেরিয়ে গেছে। তবুও মেঘের দেখা নেই উন্মুক্ত আকাশের বুক জুড়ে। শরতের ন্যায় রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ পরিহাস করছে ধুঁকে ধুঁকে মরতে থাকা ক্ষেতের ফসলের সাথে। অনাবৃষ্টির হিংস্র থাবায় মাঠের ফসল মৃত প্রায়। চাষীদের চিন্তার ভাঁজ জমেছে কপাল জুড়ে। বিশেষ করে মালদা-মুর্শিদাবাদ-নদীয়া এই তিন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃতপ্রায় ফসলের দিকে দৃষ্টিপাত করে ডুকরে কাঁদছে ভাগ চাষীরা ক্ষেতের কোণে। ঋণের দায় মাথার উপর, তবুও অগ্রিম দাদন নিয়ে শীতের পূর্ব মরসুমে সবজি চাষের পরিকল্পনা করেছে অনেকে। কিন্তু ব্যতিক্রম একজন! গয়ারাম চাষী।

শ্রাবণের গুমসুটে তপ্ত দুপুরে মাঠের আলপথ ধরে হাঁটছেন তিনি। সঙ্গে ব্যঙ্গাত্মক পরিহাসের সুরে চাষীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, “অনাবৃষ্টিতে তোরঘে কি লিইয়া গ্যাছে রে! লিইয়া গ্যাছে তো হামার, সব উজাড় কইরা লিইয়া গ্যাছে।” মরে যাওয়া শুকনো পাটগুলো  বাছতে বাছতে মাঠের এক ভাগ চাষী তারণী মাঝি বলে উঠল, “ব্যাটার শালা পাগলার খালি একখান ক্যাসেট বাজে। ”

লেখকঃ শরিয়াতুল্লাহ সোহন

পেশায় আমি একজন সাংবাদিক। অনাবৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার জন্যে গিয়েছিলাম হরিরামপুর নামক এক গ্রামে। পদ্মা নদীর তীরে বেড়ে উঠা গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পাশেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যময় সবুজ শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ সীমান্ত। সেই গ্রামের মাঠের আলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এই ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম আমি। আলপথ ধরে পাগলের মতো  ব্যঙ্গাত্মক সুরে প্রলাপ করা চাষীর পরিচয় পরিচয় পেলাম তারণী মাঝির কাছ থেকেই। নাম তাঁর গয়া চন্দ্ররাম দাশ। বয়স প্রায় পঞ্চান্ন ছুঁইছুঁই। বিগত দুই বছর ধরে মানসিক বিকারগ্রস্ত পাগলের ন্যায় ভবঘুরের মতো জীবন কাটায়। আর সর্বক্ষণ ‘গ্যালো গ্যালো হামার সব শ্যাষ হ্যইয়া গ্যালো ‘ বলে পাগলের মতো বিলাপ করে।

আমি তারণী মাঝি কে এর পিছনের আসল কাহিনী জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল, ‘সে ম্যালা কথা বাবু, কহিতে থাকলে ব্যালা পার হ্যয়া য্যাবে।’ আমি তবুও আমতা করে বললাম, ‘বলুন না প্লিজ। ‘ তারণী লুঙ্গির খুঁট থেকে বিড়ি প্যাকেট ও দেশলাই  বের করে একটি বিড়ি বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ধরালেন। তাঁরপর বিড়িতে এক সুখটান দিয়ে যাবতীয় নীরবতা কাটিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন। তারিণী, গয়ারাম প্রসঙ্গে শুরুর দিকে যা বললেন, তাঁর সারমর্ম হল এই রূপ, “গয়ারাম এই এলাকার একজন ভদ্র, সুশীল আদর্শবান শিক্ষিত নিম্নমধ্যবিত্ত অবস্থাপন্ন এক ক্ষুদ্র চাষী।” তাঁর ভাষায়, এক্কেবারে সোনার টুকরা ছ্যালা! কাহোকে কখনও ধোঁকা দিবার পারেনা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে বহু সংগ্রাম করে বড়ো হয়েছে সে । নিজ প্রচেষ্টায় স্কুল ফাইনাল পাশ করেছে। পড়াশোনায় অধিক মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রয়োজনের তাগিদে নানা কর্মকে গ্রহণ করেছে। গড়ে তুলেছিল একটি সুন্দর সংসার। তিনি উচ্চশিক্ষা না নিলেও প্রচন্ড শিক্ষানুরাগী মানুষ হওয়ায় পাড়ার ছোট থেকে বড়ো সবাই সম্মান করে।, তারণীর ভাষায়, “যেখ্যানে হামারঘে মাঝে বাপমরা ছ্যালারা ছোট্ট থাইক্যা শাসন না পাইয়া বাউলিয়া হয়, সেখানে গয়ারাম এক ভদ্রলোক হ্যইয়া বড়ো হ্যইয়াছে।”

গয়ারামের সংসারে ছিল দুই ছেলে আর এক মেয়ে। গয়ারামের স্ত্রী বিনোদবালা দেবী ছিলেন এক আদর্শ গৃহিণী। ক্ষুদ্র উর্পাজনে সংসারটা কে খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তারণীর ভাষ্য অনুযায়ী, “বাবু কথাই আছে না! সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে। গয়ারামের স্ত্রীও ছিল তাই।” গয়ারাম নিজের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অপূর্ণ আকাঙ্খা কে পরিপূর্ণ করার জন্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছিলেন। আর তাঁর জীবনে দুর্দিন আসার এটাই অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন গ্রামবাসীগণ। তারণীর ভাষ্যমতে, “হামরা হাঁভাতে মানুষ, ছ্যালা মাইয়া লিইয়া গায়ে গতরে খাঁটবো খাবো। চাকরি, বাকরি প্যাইসা আলারঘে ব্যাপার । ওরা ওরঘে  ছ্যালা মাইয়ারাকে পড়াইবে, রাজনীতি করবে, টাকা-প্যাইসা দিয়ে চাকরি লিবে।”

গয়ারামের বড়ো ছেলে শিবচন্দ্র রাম দাশ বাবার মতই মেধাবী ছেলে। স্কুলে বরাবরই ফার্স্ট হত। পাড়ার পাঠশালার পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হরিরামপুর স্মৃতিচারণ উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পাশ করেছিলেন। করেছিলেন দূর্দান্ত রেজাল্ট। সরকারি সাবসিডিতে গণিতে অনার্স করার সুযোগ পেয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই গণিতে এমএসসি সম্পূর্ণ করেছিল। এ প্রসঙ্গে তারণী বলতে গিয়ে বললেন, “বাবু ল্যাখাপড়া সভার মাথায় ঢুকে না, মা-বাপের রক্তে থাকতে হয়। হারঘে ছ্যালা পিল্যা য্যামন ফাইভ ক্লাসেই তিনবার ফেইল ম্যারা পড়াল্যাখা শ্যাষ করা দিয়্যাছে।”

অন্যদিকে গয়ারামের মেজো ছেলে বিপ্লব চন্দ্ররাম দাশ বড়ো ভাইয়ের মতো মেধাবী না হলেও সার্বিক দিক থেকে যথেষ্ট জ্ঞানী। বাবার স্বপ্নপূরণে উচ্চশিক্ষাও গ্রহণ করেছেন। তবে এই ছেলে বড়ো ছেলের ঠিক বিপরীত। বড়ো ছেলে যেখানে আত্মকেন্দ্রিক, অন্যদিকে এই ছেলে ছোটবেলা থেকে ভবঘুরের মতো থাকতে ভালোবাসে। মানুষের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসে। যে কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠে। দেশজুড়ে চলমান বিভিন্ন অরাজকতা নিয়ে লেখালেখি করেন। ঐ জন্য সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতাদের চক্ষুশূল। ছেলেকে এইসব ছেড়ে শুধু পড়াশোনা করানোরর জন্যে গয়ারাম ধমকের সুরে পরামর্শ দিয়ে গেছে এলাকার মাথা বিক্রি করে রাখা মোল্লা মাতব্বরা। গয়ারাম ছেলেকে অনেক বুঝিয়েছেন কিন্তু তাঁর এই ছেলে নিজের সিদ্ধান্তে অটল। তারণীর মতে, “এই ছ্যালার বুকের পাটা আছিল বটে! নামখান য্যামন বিপ্লব, কামও বিপ্লবের মতো।”

মাঠের মাঝে এক বাবলাতলায় বসে তপ্ত দুপুরে তারণীর মুখে যতই এই কাহিনী শুনছিলাম, ততই যেন কৌতূহল বেড়েই যাচ্ছিল। আমার ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট বের করে তারণীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম নাও। তারণী সলজ্জমুখে আমতা করে বললেন, ‘না বাবু আপনি খান। ‘ আমি বললাম লজ্জা পেতে হবেনা, নাও আর খেতে বাকি কথাগুলো শেষ করো। তারণী আবার শুরু করলেন। পরিবারের মধ্যে মেয়েটাই সবথেকে ছোট, বড়ো আদরের মেয়ে। বহু মানত করে, নানা জায়গার মন্দিরে পুজো করে ঠাকুর কে তুষ্ট করে নাকি পেয়েছিল মেয়েটাকে। তারণীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘বাবু গয়ারামের সংসারে মোটামুটি সবই ছিল, কম ছিল একখান রাজকন্যার। ঠাকুরের দয়ায় শ্যাষে সুন্দর একখান ফুটফুটে মাইয়াও প্যায়াছিল সে।’ তাই বড়ো আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিল গয়ারাম নিজের স্ত্রীর নামের সাথে মিলিয়ে। বিনোদবালা দেবীর মেয়ে শশীবালা দেবী। পাড়ার সবাই শশী বলে ডাকত। পরিবারে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। বড়ো স্বপ্ন ছিল গয়ারামের স্ত্রীর চোখে, যথারীতি স্বপ্নপূরণের পথেই এগোচ্ছিল সবকিছু। পাড়ার সবাই ভেবেছিল গয়ারামের জীবনে এবার সুখ আসবে। কিন্তু সুখ তো স্বর্গের অপ্সরার মতো, চাইলেই পাওয়া যায়না। গয়ারামের জীবনেও তাই হয়েছে। তারণীর ভাষায়, “সাপের দংশন, আর তকদীরের লিখন কখনও বদলায় না। ”

তারণী কথার ফাঁকে আবার বিড়ি ধরালেন। এক মুখ ভর্তি ধোঁয়া উড়িয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, “সবকিছুই ভালাই চলছিল বাবু! কিন্তু হালার ভোট আইলো! রাজনীতির খ্যালার চক্করে দ্যাশে ক্ষমতার পালাবদল হ্যল! মুসিবত ন্যামা অ্যালো ব্যাচারি গয়ারামের সংসারে। ” আমি  বললাম তা কিভাবে ? তারণী বলল, “বড়ো ছ্যালার ইচ্ছা ছিল স্কুল মাস্টার হ্যবে। তাঁর ল্যাগা কি পরীক্ষা নাকি দিতে হয়? ফ্যাদা প্যাটা আসছে মুখে আসেনা! ” আমি বললাম, এসএসসি পরীক্ষার কথা বলছো। তারণী দ্রুত স্বরে বলে উঠলো, ‘হা বাবু। ‘আমি বললাম তারপর, এবার তারণী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ব্যাচারি পাশ কইরাছিল, কিন্তু কিসমত খারাপ থাকলে যা হয়। এখন নাকি স্কুল মাস্টার  হ্যতে গেলে নাকি বিএড লাগে? ” আমি বললাম, “হ্যাঁ তা এখন লাগে”। তারণী বলল, ছ্যালাটা ঐখানে মার খাইয়া লিলে, হওয়া চাকরিখ্যান আর হ্যলো না। গয়ারাম তড়িঘড়ি জমিজামা বন্দুক দিয়্যা ব্যাটাকে বিএড করাইলে। কিন্তু রাজনীতির ঘৃন্যার খেলায় আর পরীক্ষা হ্যলো না। আমি বললাম আর মেজো ছেলের কি হল? সে বলল, সে আর এক কাহিনী, ঐ ছ্যালা দ্যাশের এমন দুর্দিন দেইখা, আন্দোলনে নামল, ফাঁসিয়া দিলো সরকারপক্ষ। সরকারের বিরুদ্ধে কাম ক্যরবার ছুঁতা অজুহাত দিয়্যা ছ্যালা টাকে জেলে পাঠিয়া দিলে বছর তিনেক আগে। ছ্যাড়বার কোন হদিশ নাই। তবে কথা হ্যলো কিনা, গয়ারাম বিশ্বাস করে ওর এই ছ্যালা একদিন বিপ্লব ড্যাকা আনবে দ্যাশজুড়া, নতূন পথের দিশা দ্যাখাইবে সভাইকে।

তারণী প্যাকেটের শেষ বিড়িটা ধরালেন। আমি ঘটনার শেষ পর্যন্ত শোনার জন্য মুখিয়ে উঠেছি। আমি তারণীকে  তাড়া দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তারপর কি হল? তারণী চোখে মুখে একরাশ বিষন্নতা এনে শুরু করলেন এক কঠিন মর্মান্তিক বেদানাদায়ক পরিণতির কথা। কি বলব বাবু! ছ্যালাটা চাকরি না প্যায়া বাউলিয়াপনা শুরু করল। ঘরে হরদম অশান্তি করে। গা ঘরের লোকজন মুখ ব্যাকিয়া নানা কটূ কথা কহে। এই দেইখ্যা গয়ারামের বউটা ম্যানা লিতে পারলনা। আকালে স্টক ক্যরা মরলো । তাও দ্যাখতে  দ্যাখতে আড়াই বছর হ্যইয়া গ্যালো। এই দেখ্যা বড়ো ব্যাটাটা সহ্য করতে না প্যারা ঘর ছাড়ল । এখন অবধি কোন হদিশ নাই। চাঁনদের মতন ফুটফুট্যা বছর সতেরোর  ছেমড়ীটা এইসব দেখ্যা ঠিক থাকলে পারলো না। অকালে জানখান দিয়্যা দিলো। তারণী চোখের কোণে জমা থাকা অশ্রু মুছতে মুছতে বলল, “কি বুলবো পুরান দিনের কথা গালান ভাবলে বুকখান ছ্যাৎ কইরা উঠে। এই মাঠে একসাথে ভুঁই নিড়াইতে নিড়াইতে কথা স্বপ্নের কথা কহিতো! বড় ছ্যালা স্কুল মাস্টার হবে, মেজ ছ্যালা ব্যবসা করবে, দশ-দ্যাশের সেবা করবে, বেটিকে ডাক্তার ব্যানাইবে। কিন্তু কিছুই হ্যলোনা  , সব ছারখার হ্যয়া গ্যালো। তারণী অভিশাপ দিতে দিতে বলল, ‘বাবু যে ন্যাতা-মন্ত্রীরা এই ছ্যালারঘে জীবন নিয়া খেলছে, এরঘে ভগবান ভালা করবে না। এরাও একদিন ঠ্যালা বুঝবে এই সব ছ্যালারঘে অভিশাপে।’

তারণীর মুখের কথা শুনতে শুনতে কখন বেলা পড়ে গেছে। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে। মেঘহীন বর্ষার পড়ন্ত বিকেলটা বেশ মায়াবী লাগছে। সেই মায়াবীঘন পরিবেশে মাঝে যেন এক বিষাদের সুর। যে সুরের তালে বেজে উঠেছে লাখো- হাজারও যুবক যুবতীর যন্ত্রণা, বেকারত্ব নামক যাঁতাকলে ভোগা শতশত ছেলে মেয়ের মা-বাবার আত্মবলিদানের ক্রন্দন। এক বুক বিষাদের কালো মেঘ সরিয়ে যখন বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছি, তখন দেখলাম গয়ারাম ছুটছে আলপথ ধরে ঢলে পড়া সূর্যের দিকে। পড়ন্ত সূর্যের রক্তিম আভায় , গয়ারামের ঐ রূপ দেখে মনে হল, ‘বিপ্লব আসছে! তা খুব সন্নিকটে। ‘

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here