মুনিরুল তারেক, বাংলাদেশঃ
বাংলাদেশে মসজিদে ভয়াবহ এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণ ঘটেছে। ৪ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে এ দুর্ঘটনায় অন্তত ৪০ জন মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছেন। আজ ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার খবর অনুযায়ী দগ্ধদের মধ্যে ১২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।
৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদের এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে ভর্তিদের বেশিভাগেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রথমে ট্রান্সফরমারের আওয়াজ হয়, পরে মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের এসিগুলোর বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই মসজিদের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে মসজিদে থাকা প্রায় ৪০ জন মুসল্লির গায়ে আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়লে একে একে দগ্ধ হতে থাকেন তারা।
আরও পড়ুনঃ মদন মিত্রের অফিসে ঢুকে স্টিং অপারেশন, ধৃত প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া-সহ ৩
তখন দগ্ধ মুসল্লিরা একে একে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে করতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। তাদের চিৎকারে সেখানে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাদের বেশিরভাগেরই পরনের পোশাক পুড়ে গেছে।
মসজিদের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় মেঝেতে একজনের ওপর আরেকজন পড়ে আছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা মানুষগুলোর অনেকের শরীর থেকেই রক্ত ঝরছিলো। অনেক জ্বালা-পোড়া কমাতে মেঝেতেই গড়াগড়ি করছিলেন। ঘটনার পর বাইরে থেকে লোকজন পানি নিয়ে মসজিদের মেঝেতে পড়ে থাকা মুসল্লিদের গায়ে ছিটিয়ে দেন। তাতে রক্ত পানিতে মিশে লাল হয়ে যায় মেঝে। দগ্ধদের দ্রুত রিকশায় করে নেওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে।
স্থানীয় ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমসের আলী ঝন্টু জানান, ভেতর থেকে কেউ পোশাক পড়ে বের হতে পারেননি। আগুনে সবার পোশাক পুড়ে গেছে। রক্তাক্তভাবে বের হয়েছেন অনেকেই। বেশিরভাগেরই শরীরের চামড়া পুড়ে সাদা অংশ বেড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ শিলিগুড়িতে ডাকাতির আগেই ধৃত ৫ দুষ্কৃতী
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণে মসজিদের জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে গেছে। চেয়ার ও ফ্যান বাকা হয়ে গেছে। ভেতরে থাকা দেড় ও দুই টন করে ছয়টি এসির সবগুলো বিস্ফোরিত হওয়ায় সেগুলোর ভেতরের যন্ত্রাংশ বেরিয়ে গেছে। বিস্ফোরণে মসজিদের ভেতর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছেন, মসজিদে বিস্ফোরণ এসি নয় গ্যাস লাইন থেকে ঘটেছে। মসজিদের নিচ দিয়ে (মেঝেতে) একটি গ্যাস পাইপ রয়েছে। আর এ পাইপের লিকেজ দিয়ে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়। মসজিদে এসি চলার কারণে দরজা জানালা সব বন্ধ রাখা হয়। আলো বাতাস বের হতে পারে না। ফলে নির্গত গ্যাস বের হতে পারেনি। বিস্ফোরণের আগে বিদ্যুতের কোনো কিছু জালানোর সময় স্পার্কিং করে। আর সেই স্পার্কিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
আরও পড়ুনঃ হুহু করে বাড়ছে পজেটিভের সংখ্যা, পথ চলতিদের আটকে করোনা টেস্ট কোচবিহারে
ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা দ্রুত এখানে এসে আমাদের ধারণাকে নিশ্চিত করে। তারা জানান- গ্যাসের লাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, মসজিদের ভেতর দিয়ে গ্যাস লাইন এবং গ্যাস লাইনে লিকেজের সমস্যা বিষয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বলার পরও তারা কর্ণপাত করেনি। এমনকি লাইন সরানোর জন্য তিতাসের লোকজন মোটা অংকের টাকা দাবি করে। যার কারণে এলাকার লোকজন ও মসজিদ কমিটি হতাশা নিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে আর কিছু বলেনি। তিতাসের গাফলতির কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটলো। এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ তিতাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় মুসল্লি আলী আজগর জানান, আমরা শুনেছি, আগেই তিতাসকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। আমরা যখন নামাজ পড়তে যেতাম, তখনই গ্যাসের গন্ধ নাকে আসত। মসজিদ কমিটিও বিষয়টিও জানে। পরে তিতাস কর্তৃপক্ষ নাকি ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল এ গ্যাসের লিকেজ বন্ধ করতে ও মেরামত করতে। তারপর কি কারণে যেন এটি সংস্কার করা হয়নি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584