নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
বেশ কয়েকদিন ধরে বাড়ির শিশুটি জ্বরে আক্রান্ত ছিল, দীর্ঘ রোগভোগে ক্রমশ শীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল সে। বহুবার ডাক্তার বদ্যি দেখিয়েও শিশুর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। নিশ্চিত ভাবেই শিশুর প্রতি ডাইনির নজর লেগেছে, এমনই অনুমান পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। তারপর সরাসরি সন্দেহের আঙুল উঠলো বাড়ির বড় ছেলে এবং তার স্ত্রীর প্রতি।ডাইনি অপবাদ দিয়ে শুরু হলো লাঞ্ছনা গঞ্জনাও। শেষে গুণিনের নিদানে ডাইনি তকমা জোটে ওই আদিবাসী দম্পতির।
ডাইনি অপবাদে লাঞ্ছনা গঞ্জনা এবং প্রতিবেশীদের উপহাস টিপ্পনীতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন ওই আদিবাসী দম্পতি। তারা এখন নিজের বাড়ি ছেড়ে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়র বাড়িতে রয়েছেন।
সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে এবং বাড়িতে ফেরার আর্জি জানিয়ে গুড়গুড়িপাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই পরিবার।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরিসডাঙ্গা গ্রামের ঘটনা। গ্রামের গুরুদাস মান্ডি এবং তার স্ত্রী বুধন মান্ডি ডাইনি অপবাদে ঘরছাড়া রয়েছেন।
বাধ্য হয়েই মেদিনীপুর সদর ব্লকের পিন্দ্রাশোল গ্রামের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
গুরুদাস জানান, তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। নিজেদের বসত বাড়ি ছাড়াও রয়েছে ৪ বিঘা চাষযোগ্য জমি। তিন ভাই সেই জমি থেকে ফসল ভাগাভাগি করে নেন। এছাড়াও ক্ষেতমজুর এবং একশো দিনের কাজ করে তারা সংসার নির্বাহ করেন। বাড়ির ছোট ভাই রঘুনাথ মান্ডি আর তার স্ত্রী তাদের ডাইনি অপবাদ দিয়ে অত্যাচার করছেন বলে অভিযোগ গুরুদাসের। রঘুর বাচ্চা ছেলেটা কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছে, সেজন্যই আমাদের ডাইনি সন্দেহ করছে বলে জানালেন গুরুদাস।
গত মঙ্গলবার গুরুদাস মান্ডি এবং তার স্ত্রী বুধন মান্ডিকে জোর করে খড়িকাতে এক গুনিন এর কাছে নিয়ে যায় রঘুনাথ।সেখানেই গুনিন নিদান দেয় এরা ডাইনি । সেখানেই গুনিন এবং তার ভাই রঘুনাথ মিলে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ।
আগামী মঙ্গলবার শিরিসডাঙ্গাতে তাদের বাড়িতে সেই গুনিন এসে পূজার্চনা করে ডাইনির দৃষ্টি সরাবে বলে ঠিক হয়েছে। তার আগেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে গুড়গুড়িপাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন গুরুদাস।
তিনি স্পষ্ট জানালেন, ডাইনি অপবাদ একটা অজুহাত মাত্র ,আসলে আমাদেরকে ঘরছাড়া করে আমাদের সম্পত্তি গুলো হাতিয়ে নিতে চাইছে ছোট ভাই।
গুরুদাসের স্ত্রী বুধন অশ্রুসজল চোখে জানালেন, দিনের পর দিন এই অত্যাচার আর সহ্য হয় না,কতদিনই বা আত্মীয়র বাড়িতে পড়ে থাকবো, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। গুরুদাসদের এক মেয়ে, তার কুলটিকরিতে বিয়ে হয়েছে।
বাবা-মায়ের এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন তিনিও ,বারংবার ফোন করে বাবা-মায়ের খোঁজখবর নিচ্ছেন। বুধনের ভাই সিধু সরেন সব সময় দিদি ও জামাইবাবুর পাশে রয়েছেন এবং তিনি তাদের থানায় নিয়ে যান অভিযোগ করতে। জানালেন, সমাজে এত উন্নতি হয়েছে ,আধুনিক হয়েছে তবুও কিছু কিছু মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর হয়নি, এটা সত্যি যন্ত্রণার।
আরও পড়ুনঃ দুধ ব্যবসায়ী খুনে এক মহিলা-সহ ধৃত ২
গুড়গুড়িপাল থানা থেকে জানানো হয়েছে বিষয়টি আমরা জেনেছি ,দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই অঞ্চলের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বললেন বিষয়টি আমার আগে জানা ছিল না, এখন জেনেছি, এ জিনিস যাতে না হয় এবং ঘর ছাড়া ঐ পরিবার যাতে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন এবং শান্তিতে বসবাস করতে পারেন সেটা দেখছি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584