শ্যামল রায়,নবদ্বীপঃ
নিজের এগারো মাসের সন্তানকে মেরে ফেলার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন মা। সেই সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মায়ের বাবা ও মাকে। নবদ্বীপ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত শিশুর নাম বিজিত সিংহ। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সন্ধ্যে নাগাদ। বাড়ি নবদ্বীপ থানার মায়াপুর বামুনপুকুরে। পুলিশ শিশুটির মা রিনা সিংহ, মা পুষ্প বিশ্বাস বাবা রঞ্জিত বিশ্বাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার ধৃতদের নবদ্বীপ আদালতে তোলা হয়। এছাড়াও শিশুটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নদীয়ার শক্তিনগর হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছে। নবদ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক সুবীর কুমার পাল জানিয়েছেন যে শিশুটির মৃত্যু কিভাবে হয়েছে প্রাথমিকভাবে বলা যাবে না তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এছাড়া শিশুটির মৃতদেহ কোনোরকম আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবুও প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
নাতির মৃত্যুতে শোক বিহ্বল হয়ে মৃত্যু হল দাদুর। মৃত দাদুর নাম গোপাল সিংহ বয়স ৬০। মঙ্গলবার দাদুর মৃতদেহ নবদ্বীপ শ্মশানে চিতায় জ্বলছে অন্যদিকে নাতির মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়েছে এলাকায়। নাতি মৃতদেহ নিয়ে প্রতিবেশীরা ময়নাতদন্তের জন্য শক্তিনগর ছুটেছে আর অন্যদিকে দাদুর মৃতদেহ সৎকার করে বাড়ি ফিরছেন এলাকার মানুষ।
এরকম একটি মর্মান্তিক র্ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠেছে শিশুটির মৃত্যু ঘিরে। তবে শিশুটির মায়ের জোরালো দাবি সে কোনোভাবেই তার নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেনি ছেলে অসুস্থতার কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তুললেন মা রিনা সিংহ। এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে যে মৃতের মা অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে ছেলেকে মেরে ওই প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষেছিল।
তবে এই সাংবাদিকের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন তার স্বামীর অনুপস্থিতির কারণে প্রতিবেশী এক যুবকের সাথে তার একটা অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও এই সন্তানের মৃত্যুতে তিনি কোনভাবেই দায়ী নন বলে জোরালো ভাষায় জানালেন মা। তবে জানা গিয়েছে যে স্বামী সোনা সিংহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে বেড়ায়। বিভিন্ন মেলাতে রেস্টুরেন্টের দোকানে কাজ করেন তিনি। মৃত্যুর দিন সোমবার তিনি ছিলেন শ্যামনগরে। ছেলের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী দাবি এমনটাই লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন নবদ্বীপ থানায়।
নবদ্বীপ থানায় বসে শিশুটির মা রিনা সিংহ জানিয়েছেন যে তার শিশুটি বেশ কিছুদিন ধরে ঠান্ডায় অসুস্থ ছিলেন। ভীষণভাবে কাশি এবং ঠান্ডাতে মাঝেমধ্যেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। মারিনা সিংহ আরও জানিয়েছেন যে ইতিমধ্যেই ছেলেকে নিয়ে কৃষ্ণনগরে ডাক্তারকেও দেখানো হয়েছে। সোমবারে শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল ছেলে। হঠাৎ করেই ঘরের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অর্তকিতে মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়দের দাবি সন্তানকে মা মেরে ফেলছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মৃদুল মুফতি মাসুদ ও টোটন বাবুরা জানিয়েছেন যে ওই শিশুটিকে প্রচন্ডভাবে মাঝেমধ্যেই মারধর করতো মা। তাদের দাবি মা সন্তানটিকে মেরেও ফেলতে পারে প্রকৃত তদন্ত হোক এবং দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন তারা।
আরো জানা গিয়েছে যে কুড়ি দিন আগে মৃত্যু হয়েছে শাশুড়ি বন্দনা সিংয়ের । এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন মৃত শিশুটির বাবা সোনা সিংহ।
তিনি মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে অভাবী সংসার তাই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়ে কাজ করে সংসার চালাতেন তবে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। একদিকে ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু অন্যদিকে বাবার অতর্কিত মৃত্যু দুই মৃত্যুর মাঝখানে পড়ে আমি নিজেই যেন হতবাক।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584