নবনীতা দত্তগুপ্ত
বাংলা টেলিভিশনে তার অভিষেক ঘটে ‘ত্রিনয়নী’ ধারাবাহিকের হাত ধরে৷ গায়ের রঙ শ্যামলা, টানা চোখ, টিকালো নাক, পিঠ ছেয়ে উপচে পড়ে চুল। সে শ্রুতি দাস৷ কাটোয়ার মেয়ে। কলকাতায় আসে অডিশন দিতে। সেদিন শহরের বুকে ব্রিগেডের ভিড়। ভিড় ট্রেনে চেপে এসেছিল কলকাতায়।
সূর্যের প্রচণ্ড তাপে মুখ খানা কালো হয়ে গিয়েছিল আরও৷ কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল চুল৷ বাতিল হয় শুরুতেই। এরপর শুকনো মুখে বাড়ি ফেরা।…রাত গড়াতেই বেজে ওঠে ফোন– “একটা স্ক্রিপ্ট পড়ে নিয়ে ভাল করে ভিডিও তুলে পাঠাও।” পাঠায় শ্রুতি। আর ব্যস, পছন্দ হয়ে যায় কাহিনিকার সাহান দত্ত’র। সাইড রোল নয়। রীতিমতো লিড রোলে চান্স পায় মেয়েটা। দর্শকমনে সাড়া ফেলে ধারাবাহিক ‘ত্রিনয়নী’। জন্ম নেয় ত্রিনয়নীর ফ্যান পেজ। বাড়ে ভক্তের সংখ্যা।
এহেন শ্রুতি আজ ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকে মুখ্য নারী চরিত্র নোয়ার ভূমিকায়। তাকে ঘিরে থুড়ি তাঁর গায়ের কালো রঙ নিয়ে ফেসবুক-এ চলছে নানান আপত্তিকর উক্তিক্ষেপণ। গায়ের শ্যামলা রঙ নিয়ে তাকে নানা কথায় আক্রমণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সবই চোখে পড়ছে শ্রুতির। কিন্তু সে মুখে কুলুপ এটেছে এক প্রকার। শুধু নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছে- “সব হিসেব তোলা থাক… জয় গুরু”। এটুকুই বলে দেয় অনেক বলতে চাওয়া না বলা কথা।
মোটা মেয়ে, কালো মেয়ে, রোগা মেয়ে নিয়ে কথাকথি শুধু বিনোদন দুনিয়া কেন, বাস্তবের দুনিয়াতেও চলে আসছে বরাবর৷ বিয়ের বেলাতেও ওঠে কত কথা। এই ট্রেন্ড ভাঙবে কার সাধ্যি?…শ্রুতির কথায়, এই বিষয়টা নিয়ে আমার সত্যিই কিছু বলার নেই৷ অন্য অনেকের মতো আমিও বলব, ইন্ডাস্ট্রি দর্শককে যা দেয় বা দিয়ে আসছে এতদিন ধরে তার একটু অন্যথা হলেই এরকম কথার ঝড় ওঠে। লিড রোলে ফর্সা মেয়ে দেখতেই অভ্যস্ত দর্শক, তাই শ্যামলা দেখলেই তারা গর্জে ওঠে।
যা আমাকে নিয়ে ‘ত্রিনয়নী’র সময়েও হয়েছে আবার এখন ‘দেশের মাটি’র সময়েও হল। আমি ভেবেছিলাম, ত্রিনয়নীতে ওই সব কথার পাশাপাশি যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছিলাম তাতে এবার আর আমার গায়ের রঙ নিয়ে কোনও কথা উঠবে না। দর্শকের চিন্তাধারা বদলাবে। কিন্তু না। কিচ্ছুটি বদলায়নি আজও। সমস্যাটা কোথায় জানো তো? ইন্ডাস্ট্রি ক’জন শ্যামলা মেয়েকে লিড হিসেবে বেছে নেয়? ফর্সা মেয়ের সংখ্যাই তো বেশি।
আরও পড়ুনঃ মুক্তি পেল ‘খোলস’ ছবির ট্রেলার
খুব কম সংখ্যক শ্যামলা মেয়েই চান্স পায় লিড রোল করার। যদি ইন্ডাস্ট্রি শ্যামলা মেয়েদেরকেও পরের পর লিড রোলে বেছে নেয় তাদের অভিনয় সৌকর্য দেখে, তাহলে হয়ত একদিন এমন কথাও হবে– এই সিরিয়ালের নায়িকার বোধহয় অ্যানিমিয়া আছে। তাই এত ফ্যাটফ্যাটে ফর্সা। তখন তারা অভ্যস্ত থাকবে শ্যামলা গড়নের মেয়েকে লিড হিসেবে দেখতে। কিন্তু তা কি আদৌ হবে কোনওদিন? সময় বলবে সেই কথা। আমার জানা নেই।..
শ্রুতি নিউজ ফ্রন্টকে আরও জানায়-
” আমার বাবা-মা একটা কথা খুব বলেন, কোনওকিছু নিয়ে আশা করবি না। কাজটা করে যা মন দিয়ে। আর আমি সেটাই করি এবং করব।” শ্রুতির মুখেই শোনা, ‘ত্রিনয়নী’ শেষ হওয়ার পর তিনি লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে টেক্সট করেন- “আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে পারলে খুশি হব।” অবাক কাণ্ড সেই টেক্সটটি দেখার আগেই নাকি লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দেশের মাটি’র জন্য ডাক আসে শ্রুতির। আর তাতে আপ্লুত এই শ্যামাসুন্দরী। মন থেকে কিছু চাইলে তা ঠিক পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস তার। একইভাবে মানুষের চিন্তাধারা, মানসিকতারও একদিন সুপরিবর্তন হবে বলে আশাবাদী শ্রুতি দাস।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584