নিজস্ব সংবাদদাতা, আলিগড়ঃ
জিন্নার ছবি ঘিরে দেশদ্রোহীর তকমা পাওয়া আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা সৃষ্টি করল মানবিকতার এক অনন্য নজির।ঘটনার প্রকাশ এই যে,বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রিসার্চ স্কলারের মৃত্যুর পর শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের আর্থি(মৃতদেহ বহনের খাট বা চৌকি) তৈরি থেকে শুরু করে, কাঁধে করে তাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা এবং শেষকৃত্য পালন – সমস্ত কিছুরই দায়িত্ব পালন করল তার সহপাঠীরা।ধর্ম পরিচয়ে ভিন্নতার সীমা অতিক্রম করে সহপাঠিনীর শেষকৃত্য সম্পাদনে বাধা হয়ে দাঁড়াইনি কোন বাধাই।এভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক মহৎ দৃষ্টান্ত রচিত হলো।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের পিএইচডি স্কলার শ্বোয়েতা মেহেরোত্রা প্রায় দু’বছর আগে থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছিল। প্রায়ই ডায়ালিসিস করতে যেতে হতো তাকে। মা হারা শ্বোয়েতা থাকত তার বৃদ্ধ বাবা ও তার একমাত্র মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইকে নিয়ে।পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে তার উপর ছিল পুরো সংসারের সমস্ত দায়িত্ব।দু’দিন আগেই ডায়ালিসিসের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু যাওয়া আর হলো না, হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তার।
সহপাঠীরা রিসার্চের কাজ ফেলে দ্রুত পৌঁছে যায় তার বাড়ি।বাড়ি পৌঁছে তারা দেখে বৃদ্ধ অসহায় বাবা মেয়ের মৃতদেহ জড়িয়ে কাঁদছে,ভাই দরজায় বসে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।দু’জন ছাড়া না আছে কোনো আত্মীয়, না এসেছে কোনো প্রতিবেশী।এই করুণ অবস্থা দেখে এগিয়ে আসে তার সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবীরাই।মহম্মদ রশিদ, সলমন, আব্বাস,এজাজ আহমেদ,মনসুর আলম, নাসির আহমেদ শাহ, রাশিদুল হক,জায়েদ আহমেদ,নিশা ফাতিমা,আতিফা’রাই শেষমেশ এক পূজারীকেও ডেকে আনে। তার কাছ থেকে শবদেহ সৎকারের সমস্ত খুটিনাটি বিষয় জেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনে। মৃতদেহ বহনের খাট তৈরিতে হাত লাগায়,তারাই কাঁধে করে নিয়ে যায় তাদের সহপাঠিনীকে,তারাই চিতা সাজায় এমনকি একজন চিতার চারপাশ ঘুরে শ্বেতার বাবাকে মুখাগ্নি করতেও সহায়তা করে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584