সোমবার বারাণসী সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর নাটকীয় ভঙ্গীতে উচ্চস্বরে পুনঃপুনঃ উচ্চারণ করেছেন যে,ভবিষ্যতে রাজনীতির অপর নামই হবে উন্নয়ন।মোদীর মুখ নিঃসৃত এই বানীতে তাঁর দলের ভোট বাক্স আমোদিত হলেও এই দিনই এক নিদারুণ বাস্তবতার চিত্র প্রস্ফুটিত হল।
গত কয়েকদিন যাবৎ লালগড়ের জঙ্গলখাস গ্রামে তেষট্টি বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে আঠাশ বছরের যুবকের মৃত্যু মিছিল চলছে।মৃতদেহ সৎকারের জন্য তাঁরা স্থানীয় ব্লক উন্নয়নের আধিকারিকের সাহায্য চাইতে গিয়েই বিষয়টি নজরে আসে।
বেশীর ভাগ জনের মৃত্যুর কারন টিবি এবং লিভারের সমস্যা।এই রোগ কেন হয় তার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ হওয়ার খুব প্রয়োজন আছে কি?কিন্তু,জেলা শাসক যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে উপলব্ধি করেন যে,শবরদের জীবন যাপনের পদ্ধতিই তাদের মৃত্যুর কারন।অপুষ্টি নয়।সরকারি আধিকারিকের এই নিষ্ঠুর উপহাস নেতা নেত্রীর মেঠো বক্তব্যের সুরে সুর মিলে যায়।
একদিকে যখন ‘জঙ্গল হাসছে’ সরকারি বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন হয়,আর একদিকে যখন উন্নয়নকে ভবিষ্যতের দিকচিহ্ন হিসাবে চিহ্নিত করন করা হয়,তখন স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন ওঠে কার উন্নয়ন?খবরের ভিতরের খবরে জানা গেছে এক রকম বিনা চিকিৎসায় প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবারই এদের রোগের কারন,যা ডেকে আনছে মৃত্যু।দু’টাকা কেজি দরের চালে ব্যালাট বাক্স ভর্তি হলেও কর্মশূন্য শবরদের উদরপূর্তি ঘটাতে পারে না।মাথার উপর ছাদের সরকারি বরাদ্দ টাকার কিছুটা চলে যায় সরকারি দলের তহবিলে,চিকিৎসার নেই পরিকাঠামো।অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের অভাবেই যে দেশে মানুষ এখনও মারা যায়।যে দেশে এখনও মৃতদেহ সৎকার করতে সরকারি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় সেদেশে উন্নয়নের বুলি নিষ্ঠুর উপহাস ব্যতিরেকে আর কিই বা হতে পারে?
কিন্তু উন্নয়ন কি সত্যিই কারও হচ্ছে না?আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার থাকে,ঠিক তেমনি অন্ধকারের বিপরীতে থাকে আলো।শালপাতার অন্ধকার জঙ্গলের বিপরীতে আছে ঝাঁ চকচকে উন্নয়নের আলো।যেখানে নেতা নেত্রীদের মঞ্চ বাঁধা হয়।মাইক বাজে উচ্চস্বরে,আর আমরা ভীড় করি স্বপ্নিল বানী শ্রবনের নিমিত্ত।ঠিক তখনই ঘর ভরে যায় অনাহারক্লিষ্ট দীর্ঘশ্বাসের বিষাক্ত যন্ত্রনায়।
সেই কোন মধ্যযুগে ভারতচন্দ্র রচিত মঙ্গল কাব্যে,দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ঈশ্বরী পাটনি বর চেয়ে ছিলেন আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।আজ জঙ্গলখাসের মৃত বছর আঠাশের তরুন মঙ্গল শবরের বিধ্বস্ত পিতার সেই চাওয়াটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।ভয় এখানেই।মৃত্যু ভবিতব্য কিন্তু সে মৃত্যু যদি ধ্বংসের সূচনা করে তবে তা প্রলয় ঘটায়।নিরন্ন পেট বকুনিতে ভরে না,সেই প্রলয়ের দেওয়াল লিখন রাজনৈতিক হর্তাকর্তারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই মঙ্গল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584