উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা চব্বিশ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটে মিশ্র প্রভাব পড়ল রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। কোথাও জোর করে দোকান বনধের চেষ্টা, তো কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ৷ বেশকিছু জায়গায় বনধ সফল করতে গা জোয়ারি করতে দেখা গেল সমর্থকদের৷ বনধ সফল করার নামে চলল ভাঙচুরও৷ কলকাতার রাস্তায় বেসরকারি বাসের প্রায় দেখা নেই বললেই চলে৷ চলছে হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস। তাতেও শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বিক্ষোভ বনধ সমর্থনকারীদের ৷
অন্যদিকে শিয়ালদা ও হাওড়া শাখায় একাধিক স্টেশনে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখাল বাম ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা৷ কোথাও আবার চলল পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি। সিপিআই(এম) এর রাজ্য সম্পাদক সূর্য কান্ত মিশ্র বলেন, “সামগ্রিক কালে যতগুলি এই সরকারের আমলে বনধ করা হয়েছে, আজকের বনধে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কান্দিতে অফিসে ঢুকতে বাধা মহকুমা শাসককে
এখনও পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি, তাতে আমাদের চারশো কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এই বনধকে সর্বত্র সমর্থন করেছেন সাধারণ মানুষ জন। তবে এই বনধে অশান্তি হলে সব দায় মুখ্যমন্ত্রীর।” সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ধর্মঘটের দাবি সমর্থন করে বলেছেন, ধর্মঘট তার পছন্দ নয়। বিরোধীতার কথা বলেননি। তবে পিকে বলেছে বলে কিছু জায়গায় হামলা হয়েছে।
ধর্মঘটে আমরা মানুষের দাবির কথাই বলেছি।” উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে এদিন ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বনধের ৷ প্রায় কোনও দোকানপাট খোলেনি বললেই চলে৷ সর্বোপরি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা চব্বিশ ঘণ্টার ধর্মঘটে নাজেহাল রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রায় সব জেলার মানুষ৷
আরও পড়ুনঃ বনধের সমর্থনে চন্দ্রকোনায় পণ্যবাহী গাড়ি আটকে বিক্ষোভ সিপিএমের
এদিন বারাসতের কলোনি মোড় ও হেলাবটতলা মোড়ে জোর করে বনধ সফলের চেষ্টা ঘিরে ধুন্ধুমার বাঁধে৷ এদিন এই দুই জায়গায় জোর করে দোকান বন্ধের চেষ্টা করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। এরপর চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়৷ সেখানে গাড়ি থামিয়ে বনধ সফল করার মরিয়া প্রয়াস চলে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, লাঠিচার্জ বাদ গেল না কিছুই। রীতিমতো বনধ সমর্থককারীদের তাড়া করে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর। একপ্রকার লাঠিপেটা করে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বনধ সমর্থককারীরা। ধর্মঘটের সমর্থনে বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের মিছিল ও অবরোধ চলে। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই অবরোধ করা হয়। তবে শুধুই বারাসত নয়, মধ্যমগ্রামে পুলিশের সামনেই গায়ের জোরে দোকান বনধের অভিযোগ উঠল বনধ সমর্থককারীদের বিরুদ্ধে৷ ঘটনার জেরে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
আরও পড়ুনঃ শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে কোচবিহারে মিশ্র প্রভাব
মধ্যমগ্রাম চৌমাথার ঠিক পাশে একটি রেস্তোরাঁয় শাটার জোর করে নামিয়ে দেন বনধ সমর্থনকারীরা। সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। পাশাপাশি বনধ সফল করতে যশোর রোডে শুরু হয় অবরোধ। যার জেরে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায়। লেনিন সরনিতে বামেদের মিছিল থেকে বেশ কিছু দোকান জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বনধে সমর্থনে কলকাতাতেও ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে ছড়াল উত্তেজনা ৷
শহরের একাধিক রাস্তায় বাম কর্মী সমর্থকদের বিক্ষোভে ব্যহত হল জনজীবন৷ এন্টালি বাজার, মৌলালি এবং মল্লিক বাজার,যাদবপুর চত্বরে পথ অবরোধের জেরে যান চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷ তবে, মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন বাম সংগঠনের পতাকা হাতে ধর্মঘট সফল করতে রাস্তায় নেমে পড়ে বনধ সমর্থকরা ৷
আরও পড়ুনঃ ১০দফা দাবির ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে শামিল ব্যাঙ্ক সংগঠনগুলি
মৌলালিতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয় ৷ এমনকী কয়েকটি দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বনধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আরএসপি নেতা অশোক ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘আজকের এই ধর্মঘট সরকারকে বাধ্য করাবে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে।’’ নিউটাউনের রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা।
জোর করে বনধ সফল করাতে গিয়ে নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগর অটো স্ট্যান্ডে অটোচালকদের সঙ্গে বাম কর্মী সমর্থকদের বচসা, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। অন্যদিকে লেকটাউনের যশোর রোডে বামেদের পক্ষ থেকে রাস্তা অবরোধ করা হয়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসা হয় আন্দোলনকারীদের। জলপাইগুড়ি জেলা জজকে আদালতে ঢুকতে বাধা দেন বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরা। পুলিশ ধর্মঘটীদের বাধা দিতে গেলে, তাদের সাথে বনধ সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয়।
আরও পড়ুনঃ বামেদের ডাকা দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব পড়ল শিলিগুড়িতে
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা চব্বিশ ঘণ্টার ধর্মঘটে ব্যাপক প্রভাব পড়ল কোচবিহারে৷ এদিন সকাল থেকে কোচবিহারে কোনও দোকানপাট খোলেনি। খোলেনি হাট-বাজারও । বেসরকারি বাসও পথে নামেনি। তবে পুলিশি প্রহরায় কিছু কিছু এলাকায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস চলেছে। এদিন ধর্মঘটের সমর্থনে কোচবিহার শহরে মিছিল করে সিপিআই(এম)এর শ্রমিক সংগঠন সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। বিভিন্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বনধ সমর্থকরা।
ধর্মঘটের সমর্থনে এদিন আসানসোল বাজার অঞ্চলে মিছিল করে বামেরা। যদিও বলপূর্বক বনধের চেষ্টা চোখে পড়েনি। একদিকে যেমন বামেরা রাস্তায় নামে, তেমনি অন্যদিকে তৃণমূলের নেতারাও রাস্তায় নেমে মানুষকে বনধ ব্যর্থ করার আবেদন জানান । তবে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, যান চলাচলও করেছে । যদিও অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তাঘাটে কম লোকজন ছিল ৷অন্যদিকে এদিন শিয়ালদা ও হাওড়া শাখায় একাধিক স্টেশনে অবরোধ করে বাম সংগঠনগুলি ৷ যাদবপুর স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন বনধ সমর্থকরা । ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন তারা ।
আরও পড়ুনঃ ধর্মঘটের দিনেও চেনা চেহারায় দক্ষিণ দিনাজপুর
দলীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের । সিপিএমের বেলঘরিয়া এরিয়া কমিটি এবং পূর্ব বেলঘরিয়া এরিয়া কমিটির যৌথ উদ্যোগে বেলঘরিয়া স্টেশনে এক নম্বর লাইনে আটকানো হয় আপ কল্যাণী সীমান্তকে ৷ অন্যদিকে বনগাঁ-বাগদা সড়কে পাইকপাড়ায় অবরোধ করে বামেরা। রাস্তায় বেঞ্চ পেতে স্লোগান দেন বাম কর্মী-সমর্থকরা ৷ ট্রেড ইউনিয়ন ও গণ সংগঠনের ডাকা বনধে সারাদিন রাস্তায় থেকে ধর্মঘট সার্থক করা হবে বলে জানান কৃষক সভার নেতৃত্ব ৷ উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যমগ্রাম স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে পাথরবৃষ্টি করেন বনধ সমর্থকরা।
বনগাঁ-শিয়ালদা শাখার লোকাল ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ডোমজুড় স্টেশনে বামেদের রেল অবরোধ চলে। যাদবপুর সরকারি বাসের চাকার হাওয়া খুলে যাত্রী নামিয়ে দেন ধর্মঘটীরা বলে জানাযায়। চাঁদনিচক ও সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের গেটের সাটার নামিয়ে দেয় ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীরা। এদিন সাড়ে সাতটা নাগাদ সিপিএমের কর্মীরা লাইনে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন।
আরও পড়ুনঃ ব্যাট হাতে বহরমপুরে অন্য মুডে দিলীপ ঘোষ
আটকে পড়ে আমতা থেকে হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন। ঘটনাস্থলে যায় রেলপুলিশ। সকাল থেকে হুগলির বিভিন্ন জায়গায় অবরোধে শামিল হন ধর্মঘটের সর্মথকরা। হুগলি স্টেশনে রেললাইনে অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা। বেশ কিছুক্ষণ অবরোধ চলে, ফলে আটকে পড়ে বর্ধমান মেইন লাইনের লোকাল ট্রেন। পরে রেলপুলিশ অবরোধ তুলে দিলে পুনরায় ট্রেন পরিষেবা চালু হয়।
তবে, ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেল শিল্পশহর দুর্গাপুরে। ধর্মঘটের সেরকম প্রভাব চোখে পড়ল না। নিত্যদিনের মত শ্রমিকরা কারখানায় যোগ দিয়েছেন। এমনকী বনধ সমর্থনকারীদের দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের রাস্তায় দেখা যায়নি । উলটে রাস্তায় নেমে বনধের বিরোধিতা করতে দেখা গেল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিসি-কে । পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা আছে দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপ এর বিভিন্ন রাস্তায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584