উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
দু’হাজার একুশ বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকা দফায় দফায় প্রকাশ হতেই রাজ্যের নানা প্রান্তে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। সেই বিক্ষোভ সামাল দেবার ক্ষমতা রাজ্য বিজেপির নেতাদের নেই, পাশাপাশি দিল্লি থেকে আসা সর্বভারতীয় বিজেপি নেতারা পিছু হটতে শুরু করেছে।
এই অবস্থায় বিজেপির সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব নামল সামাল দিতে। কলকাতায় রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নিউটাউনের একটি পাঁচতারা হোটেলে ভোররাত পর্যন্ত বৈঠক করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও।
এর আগে এখনও পর্যন্ত দফায়-দফায় মাত্র একশো কুড়ি জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। এর মধ্যে প্রার্থী বদলের দাবিতে জেরবার গেরুয়া শিবির। জেলায়-জেলায় স্পষ্ট অন্তর্কলহের ছবি। নির্বাচনের আগে বিক্ষোভ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে রাজ্য বিজেপি।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে কয়েকঘণ্টার মধ্যে পালটে যায় শাহ’র সফরসূচি। দ্বন্দ্ব সামাল দিতে দিল্লি ফেরা বাতিল করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আবার সময়ের আগে তড়িঘড়ি রাজ্যে আসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজতে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত নিউটাউনের হোটেলে চলে বৈঠকও।
ছিলেন শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্য, দিলীপ ঘোষ, অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ। শেষপর্যন্ত রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সেরে মঙ্গলবার সকাল ৯টার উড়ানে দিল্লি ফেরার কথা থাকলেও যাননি তিনি, রয়েছেন নাড্ডাও। গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠক চলেছে। সকাল থেকেও চলছে বৈঠক।
আরও পড়ুনঃ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন শমীক-জয়প্রকাশ
কথা ছিল বাঁকুড়া থেকে অসম হয়ে দিল্লি ফিরে যাবেন। আচমকাই পাল্টে যায় অমিত শাহর সফরসূচি। দিল্লি ফিরে যাওয়ার বদলে রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্তরের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করতে সোমবার রাতে কলকাতায় ফিরে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিত শাহের তলব পেয়ে নিউ টাউনের হোটেলে আয়োজিত বেশি রাতের সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতাদের পাশাপাশি বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও।
বৈঠকে অংশ নেন, অরবিন্দ মেনন, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বি এল সন্তোষ, ভূপেন্দ্র যাদবের মত কেন্দ্রীয় নেতারা।
হঠাৎ করে কেন এই জরুরি বৈঠকের শাহী তলব, তা নিয়ে প্রবল জল্পনা রাজ্য বিজেপিতে। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষস্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে, ঠিক প্রথাগত বৈঠক নয়। প্রার্থী নিয়ে যে বিক্ষোভ হচ্ছে সেই বিষয়টিও আলোচনায় উঠেছে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি আসনে প্রার্থী বদল হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ স্বপনের, প্রার্থী হলেন তারকেশ্বর কেন্দ্রের
এছাড়া, আগামী দফার প্রার্থী নিয়েও আলোচনা হয় বলে খবর। জঙ্গল মহলের জেলা পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি কি রয়েছে। ক’টা বিধানসভায় জয় নিশ্চিত সেটা জানতে চাওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনে এখনও পর্যন্ত যে সব অভিযোগ রাজ্য বিজেপির তরফে করা হয়েছে সেগুলি এখন কী অবস্থায় জানতে চান অমিত শাহ, এমনটাই খবর। বাকি দফার প্রার্থী নিয়েই বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের দাবি, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার বাকি বারোটি আসনে ও পরবর্তী ছয় পর্বের আসনগুলিতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর যাতে নতুন করে ক্ষোভ বিক্ষোভ তৈরি না হয়, সেসব নিয়েই কথা হয়েছে। বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ দফার বাকি এই বারোটি আসনের প্রার্থী তালিকার সম্ভাব্য নাম নিয়েও। আলোচনা হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় যে যে আসনে ভোট হচ্ছে, সেখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে কী অভিযোগ জানানো হবে, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অমিত শাহের আলোচনায় শোভন-বৈশাখী প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে সূত্রের খবর। এবিষয়ে বিজেপি নেতাদের আরও ধৈর্য্য ধরতে বলেন। পাশাপাশি বিজেপি অফিসে যোগদান মেলা চালিয়ে যেতে বলেন সর্বভারতীয় এই বিজেপি শীর্ষনেতা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584