মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
বঙ্গপোসাগরের বুকে ভেসে থাকা অনেকগুলি দ্বীপের মধ্যে এক অতি স্বল্প-পরিচিত আদিম ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য্যে ভরা দ্বীপ হলো মৌসুনী। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেনে লক্ষ্মীকান্তপুর হয়ে নামখানা যাওয়া যায়। নামখানা স্টেশনে থেকে মোটর ভ্যানে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদী।
তারপর সেখান থেকে নৌকো করে নদী টোটো চড়ে দুর্গাপুর ঘাট। দুর্গাপুর ঘাট থেকে নৌকো করে বাগডাঙা ঘাট। এই বাগডাঙা ঘাটই মৌসুনী দ্বীপের প্রবেশদ্বার। ঘাটের কাছেই পাওয়া যায় টোটো আর মোটর ভ্যান। তাতে চড়ে মিনিট ২৫ গেলেই সমুদ্রতট। সকাল ছ’টা নাগাদ কলকাতা থেকে রওনা দিলে বেলা ১২টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রতটে। আচমকা চোখের সামনে যেন লাফিয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ বঙ্গোপসাগর। দ্বীপের অনেক জায়গাতেই এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ নেই বলে যে বসতি নেই তা ভাবা ভুল।
মৌসুনী দ্বীপের পাড়ে ছোট ছোট গ্রাম। আর সেখানেই রয়েছে অনেকের সংসার। তবে এখন মৌসুনীর চিত্রটা একেবারে আলাদা। সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় আমপান সব ধ্বংস করে দিয়েছে। এদিক সেদিক বড় বড় গাছ মাটি শুদ্ধ উপড়ে গিয়েছে। শুধু কি তাই? যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল, আমপানের তাণ্ডবে খুঁটি পড়ে গিয়ে সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
২০মে, ২০২০। একটা অভিশপ্ত দিন। মাত্র চার ঘন্টায় সবকিছু ওলটপালট করে দিয়ে গেল আমপান। এইরকম ঝড় আগে কেউ কোনোদিন দেখেনি। ১৬০কিমি বেগে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ে আমপান। এদিন ঘূর্ণিঝড় আমপানের দোসর হয়েছিল বৃষ্টি। প্রবল ঝড়-বৃষ্টির জেরে মাথার উপর ছাদটাও হারিয়েছেন মৌসুনী দ্বীপের বাসিন্দারা। আজ ন’দিন হল কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা দিয়ে তীব্র গতিতে বয়ে গিয়েছে আমপান।
আরও পড়ুনঃ করোনায় আক্রান্ত রাজ্যের দমকল মন্ত্রী
সেদিন গাছগুলো যেভাবে উপড়ে ঘরের চালার উপর পড়ে ছিল। আজও তেমনই আছে। মৌসুনী দ্বীপের গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সেদিনও ছিল না। আজও নেই। পুকুরের পানীয় জল আজ নুনে ভরে গিয়েছে। লবণাক্ত জল ঢুকে পড়েছে পুকুরেও। নোনতা জলই এখন মৌসুনীবাসীদের একমাত্র ভরসা। জমিতে যা ফসল ছিল সব নষ্ট করে দিয়েছে আমপান।
এখন ভাত, ডাল, আলুসেদ্ধ খেয়েই দিন গুজরাচ্ছেন সেখানকার গ্রামবাসীরা। ঘরে যা চাল মজুত ছিল তাও প্রায় শেষের মুখে। জলের তলায় সেখানকার বেশকিছু বাড়ি। জলপ্লাবনে ভেসে গিয়েছে গবাদি পশু। গোটা গ্রামের একটা টিউবওয়েল। সেটা থেকে জলের একটা ফোঁটাও পড়ছে না। আমপানের দাপটে কার্যত অসহায় মৌসুনী। ত্রাণ এখনও পৌঁছায়নি সেখানে।
আরও পড়ুনঃ মোজাফফরপুরে মহিলা পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ‘ছোট’ ঘটনা: বিজেপি রাজ্য সভাপতি
মৌসুনীর করুণ দৃশ্য পরিদর্শনে যায়নি কেউই। কবে সব আবার আগের মতো হবে? কবে সব কিছু ঠিক হবে? তা কারোর জানা নেই। নদী বয়ে যায় ছলাৎ ছল। আর প্রতিদিন এভাবেই কান্না ভেজা চোখে সব ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় বাঁচে সর্বহারা মৌসুনী।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584