বিশেষ প্রতিবেদন,অশোক মজুমদার:-
বাংলার সাংবাদিককুলের জন্য এই প্রথম কোন সরকার সত্যিকারের কিছু ভাল কাজ করলেন। হরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, দাদাঠাকুর, শিশির কুমার ঘোষ, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়দের ঐতিহ্যধন্য বাংলা সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলা হলেও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ভালোমন্দ নিয়ে কোন দল বা সরকার কিছু ভাবেনি। বিক্ষিপ্তভাবে কেউ হয়তো কিছু দানখয়রাতি করেছেন, কিন্তু সংগঠিতভাবে সরকারি কোন ব্যবস্থা তাদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়নি। কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট, বামফ্রন্ট সব আমল সম্পর্কেই একথা খাটে। সাংবাদিকদের জন্য পেনশনের ব্যাবস্থা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিনের এই ভুল শুধরে নিলেন। স্যালুট, দিদি।
এর আগের রাজ্যসরকারগুলি নানা সময়ে এ কাজটি করার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ছিল লোকদেখানো ফাঁকা আওয়াজ। তাদের পেটোয়া ঘোষকরা এসব কথা বলে বিত্তহীন, সহায়তাহীন অথচ নিরন্তর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে চলা সাংবাদিকদের নাকের কাছে পেনশন নামক এই গাজরটি ঝুলিয়ে রাখতেন। বস্তুত কাজের কাজ তারা কিছুই করেননি। আমি জানি একথা বলা মাত্রই বহু সাংবাদিক সংগঠন, সাংবাদিকদের নানা ক্লাব, অ্যাসোসিয়েশন, ফেডারেশন ইত্যাদির লোকজনেরা আমাকে তেড়ে মারতে আসবেন কিন্তু ঘটনাটি সত্যি। দিদি এই পেনশনের ব্যবস্থাটা করেছেন সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে, সাংবাদিকদের প্রতি তার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতার তাগিদে। সেই কারণেই এটা অমুকদা করে দিল, তমুকদা পাইয়ে দিল এভাবে বলার মত কোন ব্যাপার নয়।
প্রশ্ন হল, দিদি এটা কেন করলেন? উত্তরটা খুব সোজা। তিনি জানেন তাদের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন, মালিক ও তাদের নিজেদের সংগঠনগুলিও তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কতটা উদাসীন। তিনি দেখেছেন সেখানকার নেতারা নিজেদের সামান্য প্রাপ্তিযোগ ও নিরাপত্তা ছাড়া সাংবাদিকদের কোন বিষয়েই মাথা ঘামান না। তার অভিজ্ঞতাই তাকে বিষয়টির ওপর মনোযোগী হতে শিখিয়েছে। তিনি জানেন, নির্ভীকতা, নিরপেক্ষতার বড়াই করে যারা কাগজের ব্যবসা ফেঁদেছেন তারা আদতে নির্ভীকও নয়, নিরপেক্ষও নয়। এদের সঙ্গে তার মতপার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু পেশাগত নিরাপত্তা প্রদানের কাজটি তাতে ব্যহত হবে কেন? পেনশন প্রদানের ব্যাপারে তাই কোন রাজনৈতিক রঙ তিনি দেখেননি। যতটা সম্ভব ততটা বেশি মানুষকে এর আওতায় আনার চেষ্টা করেছেন। আমার মনে হয় এটা সবে শুরু, পরবর্তীকালে এই সুবিধা ও পরিষেবাগুলি আরও বেশি প্রসারিত হবে। শুধু সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশেষত ওয়েব পোর্টালগুলিকেও দিদি এর আওতায় এনেছেন। তার কারণ আগামী দিনে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
দেখছি, সাংবাদিকরা প্রায় সবাই এব্যাপারে দিদির কাছে নিজেদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আমি কোন দলের নয়, তাই রাজনৈতিক ব্যাপারে সরাসরি কোন অবস্থান নেবনা এমন একটা সুবিধাবাদী অবস্থানে আটকে না থেকে কর্মক্ষম প্রতিটি সাংবাদিকেরই উচিৎ নিজের রাজ্যের ভালোমন্দের ব্যাপারে সরব হওয়া। রাজনীতি করা হয়ে যাবে এমন প্রশ্ন যারা তুলছেন তাদের আমি বলি, রাজনীতি না করাটাও একটা রাজনীতি। এখানে কোন দল বা কে বলছেন তা দেখার কোন দায় নেই। আমরা সবাই কিন্তু যে কোন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের লেখা, ছবি, রিপোর্টিং এর মধ্যে দিয়ে একাজটা নিজের সুবিধা অনুযায়ী করে যেতে পারি।
আর কিছু না হোক সোশ্যাল মিডিয়া তো রয়েইছে। আমার মনে হয় আমরা পশ্চিমবঙ্গের পেশাদার সাংবাদিকরা এখনও এই মিডিয়াটাকে পেশাদারভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। ফাঁকতালে তা হয়ে উঠেছে কিছু সেলফিবাজ এবং দেখনদার লোকজনের চড়ে খাওয়ার জায়গা। অথচ আমাদের রিসোর্স, ক্ষমতা, যোগাযোগ, দৃষ্টিভঙ্গি, দ্রুততা কোনটারই অভাব নেই। আমি জানি কেউ প্রশ্ন তুলবেন, আমি তো কোন সংগঠনে নেই? নেই তো কী হয়েছে, এটা তো একটা মুক্তমঞ্চ। আপনি তো আপনার নিজের মত করেই আপনার এলাকায় কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন। তুলে ধরতে পারেন এলাকার দীর্ঘদিনের কোন সমস্যার কথা। তুলে ধরতে পারেন এলাকার একটি পিছিয়ে থাকা পরিবারের আরও পিছিয়ে থাকা একটি ছেলে বা মেয়ে শিক্ষা কিংবা খেলাধুলোয় কীভাবে সাফল্য অর্জন করছে। বিশ্বাস করুন, এর জন্য বিরাট কোন পরিশ্রম করতে হয়না, বিরাট কোন সময় দেওয়া বা খরচারও কোন ব্যাপার নেই শুধু দরকার ইচ্ছের, আর চাই একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। অবিশ্বাস আর আতঙ্কের পৃথিবীতে একাজটুকুও অনেক।
আমি বলতে পারি এটা করতে করতেই আপনি অনুভব করবেন ভেতর থেকে একটা আনন্দ। অন্য লোকে যাই বলুক না কেন, মালিকরা যতই আপনাকে ফেলে দিক না বাতিলের দলে, আপনি কিন্তু অন্যদের বুঝিয়ে দিতে পারবেন আপনি এখনও ফুরিয়ে যাননি। সোশ্যাল মিডিয়ার জগৎ একটা উন্মুক্ত প্রান্তর, কে জানে হয়তো এসব কাজের সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অন্য কোন মঞ্চে ডাক পেতে পারেন আপনি। আর কিছু না হোক এসব কিছুর মধ্যে দিয়েই আপনাদের প্রতি দিদির ভালোবাসা ও বিশ্বাসটুকুও ফিরিয়ে দিতে পারবেন আপনি।
সাংবাদিকদের পেনশনের খবর পেয়ে আমার মনে পড়লো একটা পুরনো গান- তুমি এলে, অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো……।
(ফিচার ছবি সৌজন্য:-www.alamy.com-F3D0PD)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584