মনিরুল হক,কোচবিহারঃ
সপ্তদশ লোকসভা ভোট শেষ।ফলও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ভোটপর্বে কোচবিহার তথা বাংলায় যে রাজনৈতিক পারদ চড়েছিল,তা যেন কিছুতেই নামছে না।উত্তেজনা আর বদলা নেওয়ার উন্মাদনা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
কোচবিহারে তথা বঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ‘অপ্রত্যাশিত’ ফলের পরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অশান্তি।দেখা যাচ্ছে হচ্ছে পেশিশক্তির আস্ফালন।কোথাও তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুরনো রাগ মেটাতে রে-রে করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী।আবার কোথাও শাসকদল তৃণমূলের রোষানলে গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা।ছোঁয়াচে রোগের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে হিংসা।রাজনৈতিক উন্মত্ততায় সিঁদূরে মেঘ দেখছেন অনেক সাধারণ মানুষেই।কারা দায়ী,কারা আগে আক্রমণ করেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে দোষারোপের পালা।
এমন পরিস্থিতি কোনও মতেই কাম্য নয়।হিংসা কখনও কারও পক্ষে সুখকর বার্তা বয়ে আনে না,ইতিহাস তার সাক্ষী।আজ যারা অর্থের জোরে,পেশিশক্তির জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন, তাদের মনে রাখা ভালো, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। আজ যার বলীয়ান হয়ে এমন হিংস্র আস্ফালন করছে, আগামিকাল হয়তো বা সেই বলটুকু তাদের থাকবে না। জনাদেশ পক্ষে যাওয়া মানে যা কিছু করার অধিকার নয়, দাদাগিরি করার অধিকার তো কদাচিৎই নয়।
মনে রাখতে হবে,রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও কোচবিহার তথা রাজ্যবাসী হিসেবে প্রত্যেকেরই একটা দায়িত্ব রয়েছে।সেই দায়িত্ব হল,কোচবিহার তথা বাংলার সুনাম বজায় রাখা। কোচবিহার তথা বাংলা অশান্ত হলে গোটা দেশের কাছেই আমাদের মুখ পুড়বে। কটূ কথা শুনতে হবে, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার স্বীকার হতে হবে। কোচবিহার তথা রাজ্যবাসী হিসেবে তা আমাদের পক্ষে মোটেও সম্মানের হবে না। এমনিতেই ভোটপর্বে গোটা রাজ্যের ভাবমূর্তি অনেকটাই কালিমালিপ্ত হয়েছে।
বাংলায় শাসন নেই, সরকার নেই-এমন একটা ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য মার্জারের মতো ওৎ পেতে রয়েছে সর্বভারতীয় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম।ফলে বাঙালি হিসেবে আমাদের কিছুটা সাবধান থাকা আজকের রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে বড় প্রয়োজন।না হলে সাধারণ মানুষ থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এমনকি সাংবাদিকদের পর্যন্ত মার খেতে হচ্ছে।কোচবিহারের দেওয়ানহাটে সাংবাদিক তুষারকান্তি দে কে যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, তাতে এখনও তিনি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে নি।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে রাজ্যবাসীর কাছে শান্তির আবেদন জানান রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠী।শনিবার তিনি বলেন, “রাজ্যের ঐতিহ্য বজায় রেখে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তবেই রাজ্যে উন্নয়ন সম্ভব।” এদিন লোকসভা নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্ত হিংসা। কোচবিহার,দিনহাটা, সিতাই, দেওয়ানহাট, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙ্গা, শীতলখুঁচি, নাজিরহাট শালমারা সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পার্টি অফিস দখল করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছেন তৃণমূলকর্মীরা।
তবে বিজেপির তরফে এই ধরণের হিংসায় দলের সমর্থন নেই বলে স্পষ্ট করে বার্তা দেওয়া হয়েছে।শান্তির আহ্বান করা হয়েছে দলের তরফে।
যারা শান্ত কোচবিহার তথা রাজ্যকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে, তারা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে পারেন না। তারা শুধুই সমাজবিরোধী। যারা সুযোগ আর সময় বুঝে শুধু রাজনৈতিক আশ্রয়ের ঠিকানা পাল্টায়, রাজনৈতিক জার্সি বদলায়। ফলে শক্ত হাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোট আসবে, ভোট যাবে। একপক্ষ ক্ষমতা হারাবে, একপক্ষ ক্ষমতা দখল করবে-এটা কালের নিয়ম। গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু সেই ভোটকে ‘হাতিয়ার’ করে কেউ প্রতিপক্ষকে বিঁধতে হাতে অস্ত্র তুলবেন, অশান্তির আগুন জ্বালবেন, কোনওমতেই কাম্য নয়।
আরও পড়ুনঃ সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা,প্রতিবাদে মিছিল স্মারক লিপি প্রেসক্লাবের
কাজের মাধ্যমে বদলা হোক। হানাহানি বন্ধ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, মানুষের স্বার্থে কাজ করবে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, সেটাই কাম্য। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, হিংসায় উম্মত্তদের শুভবুদ্ধি দাও। যাতে অশুভ, অসুস্থ চিন্তাভাবনা দূর হয়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584