শুভময় সেন, বহরমপুরঃ
অমৃতসরের কথাটা বাদই দিলাম, কারণ ওটা ফুটব্রীজ সংক্রান্ত নয়। মনে আছে মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন রেলওয়ে স্টেশনের (নাম বদলে এখন করা হয়েছে প্রভাদেবী রেলওয়ে স্টেশন) ফুটব্রীজে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা? ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফুটব্রীজে পদপিষ্ট হয়ে ২৩জনের মৃত্যু হয়।কিছুদিন আগেই আমাদের রাজ্যে বারুইপুর রেলওয়ে স্টেশনের ফুট ওভার ব্রিজের চাঙড় ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় অসীমা প্রামানিক নামক এক মহিলার। তারপর গতকালের সাঁতরাগাছি স্টেশনের দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে আপাতত মৃত দুই, আহত বেশ কয়েকজন।
সেরকমই আশঙ্কা করা হচ্ছে সাঁতরাগাছির মত দুর্ঘটনা যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বহরমপুর কোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে।সাঁতরাগাছির স্টেশনের মত একাধিক প্ল্যাটফর্ম থাকলেও বহরমপুর কোর্ট স্টেশনেও ফুটব্রীজ একটিই, তাও আবার বহু পুরোনো, দুর্বল ও সংকীর্ণ।মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহরের রেলওয়ে স্টেশনের এহেন অবস্থায় হেলদোল নেই রেল কর্তৃপক্ষের।
যেখানে শিয়ালদহ-লালগোলা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ ( যেমন- নৈহাটি, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর ইত্যাদি) স্টেশনগুলোতে একাধিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, সেখানে বহরমপুরের মত গুরুত্বপূর্ণ ও যেখানে দিনে হাজার হাজার মানুষ ওঠানামা করে সেখানে ফুটব্রীজ মাত্র একটি। তাছাড়াও যেখানে শিয়ালদা-লালগোলা শাখার প্রতিটি হল্ট স্টেশনের ফুটব্রীজ গুলোও অনেক চওড়া ও শক্তপোক্ত সেখানে বহরমপুর কোর্ট স্টেশন ফুটব্রীজের এহেন দূর্দশায় চিন্তিত বহরমপুরবাসী।
স্টেশনের মূল গেট(তবুও সংকীর্ণ) এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে হওয়ায় এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে(লালগোলাগামী) ট্রেন এসে দাঁড়ালে খুব একটা অসুবিধা হয়তো হয়না। কিন্তু বিপত্তি তখনই ঘটে যখন দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে কলকাতাগামী কোন ট্রেন এসে দাঁড়ায়।যদি আপনি সঠিক সময়ের ঠিক আগের মুহূর্তে টিকিট কেটে সেই ট্রেন ধরার টার্গেট থাকে, তাহলে হলফ করে বলা যায় আপনি সেই ট্রেন পাবেন না। এইরকম ঘটনা প্রত্যেকদিন প্রতিটি কোলকাতাগামী ট্রেন ঢুকলেই গাদা গাদা যাত্রীদের সঙ্গে ঘটে।কারণ সেই একমাত্র সংকীর্ণ ফুটব্রীজ।দুই নম্বরে গাড়ি ঢুকলেই যাত্রীদের বহরমপুরের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য সেই একমাত্র সংকীর্ণ দুর্বল ফুটব্রীজই ভরসা- এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম হয়েই বেরোতে হয়। শুরু হয়়ে যায় হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি। আর আপনি যদি এমতাবস্থায় বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ টিকিট কেটে এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে দুই নম্বরে গিয়ে সেই ট্রেন ধরার কথা ভাবেন তাহলে সেটা হবে অলীক কল্পনা। আপনার চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন চলে যাবে তবুও আপনাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে, আপনি সেই ট্রেন পাবেন না। আর একসঙ্গে দুই প্ল্যাটফর্মে গাড়ি ঢুকলে তো সমস্যা আরো।
আর আপনি নিরাপত্তার খাতিরে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের লাইনে নেমেও দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মের ট্রেন ধরতে পারবেন না।আর যদি জরুরী অবস্থায় ভুলক্রমে নেমেও পড়েন কলকাতাগামী দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ট্রেন ধরার জন্য, সঙ্গে সঙ্গে একমাত্র সেক্ষেই রেল পুলিশ নিয়ম দেখায় বলে অভিযোগ।যাত্রীদের ওঠানামা বা ভিড়ে উঠতে গিয়ে মোবাইল বা অন্য জিনিস চুরি বা প্রকৃত যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। কয়েকদিন আগে বেঙ্গল এডুকেশন ফোরাম নামের একটি সংগঠন এই নিয়ে ডেপুটেশনও দেয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।অভিযোগ রেল পুলিশ সেই নিয়ম না মানার অজুহাতে চালায় যাত্রী হেনস্থা। অভিযোগ, জিআরপি একমাত্র এক্ষেত্রেই যাত্রী নিরাপত্তার অজুহাতে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিশেষ করে গ্ৰাম থেকে আসা যাত্রীদের কাছে অবৈধভাবে টাকা আদায় করে।
তাই অবিলম্বে যদি বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে অন্তত দুটো ফুটব্রীজের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এলফিনস্টোন, বারুইপুর বা সাঁতরাগাছির মত দুর্ঘটনা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।এবিষয়ে, বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের স্টেশন মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে ওভারব্রীজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে , তাড়াতাড়িই সমস্যার সমাধান হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584