পল্লব দাস,বহরমপুরঃ
সত্তরের দশকে বাংলা গানে এক ভিন্ন ধারা আসে ক্রমশ সেই রূপান্তর বাংলা রক সংগীত ব্যান্ডে পরিণত হয়।নাম মহীনের ঘোড়াগুলি।লোক ঐতিহ্য ও নিরীক্ষা মূলক কাজ করতো এই
গানের দল।এদের গান গুলি শ্রেণীভুক্ত করা একটু কঠিন হবে,তবে এই দলগত ভাবে নিজেদের সমাজ চেতনাকে গানের মাধ্যমে শহুরে লোক আন্দোলনে সামাজিক ছাপ লক্ষ্য করা গেল।এই গানগুলি যে বাংলা ব্যান্ডের তৈরি হবার পথ দেখিয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে মহীনের ঘোড়াগুলিকে বাংলা গানের পথিকৃৎ বিবেচনা করা হয়।
কলকাতাতে বাংলা ব্যান্ড তৈরি হয় নব্বইয়ের দশকে।চন্দ্রবিন্দু ,ভূমি ,ক্যাকটাস,ফসিলস সহ আরো বেশ কয়েকটি ব্যান্ড , পাশাপাশি সংস্কৃতির এই হাওয়া পৌঁছল ২০০ কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদ জেলাতে। বহরমপুর শহর সংস্কৃতির শহর।নাটক ,কবিতা ,যাত্রা লিটিল ম্যাগাজিনে এই শহরটি সমাদৃত।বাংলা ব্যান্ড কালচারের দিক থেকেও এই জেলা পিছিয়ে নেই,বেশ কিছু জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড আছে মুর্শিদাবাদে।নগর ফিলোমেল নামে একটি ব্যান্ড ছিল যেটি ইন্দ্রনীল সেন,হর্ষ দাশগুপ্ত প্রভৃতি শিল্পীদের নিয়ে তৈরি হয় সেই সময় কলকাতা থেকে বহরমপুরে সংঘবদ্ধ গানের হাওয়া আসে।তারপর কিছু ব্যান্ড তৈরি হয় স্পন্দন যা পরে রুদলস নাম নেয়।তবে এই ব্যান্ড পশ্চিমী দেশের সংস্কৃতি অর্থাৎ ইংরেজি ভাষায় গানগুলি নিয়ে অধিক চর্চা করতো।পরে আদ্যোপান্ত বাংলা ব্যান্ড তৈরি হয় ১৯৯৯ সালে যার নাম নস্টালজিয়া (১৯৯৯-২০০১)।প্রাথমিক অবস্থায় নচিকেতা সুমন অঞ্জন দত্ত’র গানের আদলেই শুরু হয় নিজেদের গান লেখা,পরে বিভিন্ন কারণে ব্যান্ডটা ভেঙে যায় তবে জন্ম হয় দুটো ব্যান্ডের প্রথম নস্টালজিয়া নামেই মৃদুল ঘোষ ব্যান্ডটাকে চালাতে থাকেন,অন্যদিকে বাকি সদস্যদের নিয়ে নতুন ব্যান্ড তৈরি করেন সমীরণ সরকার,যার নাম এস্কেপ ভেলোসিটি পরবর্তীতে খুব জনপ্রিয় হয় এই ব্যান্ড।সফল একটা ব্যান্ড হিসেবে দাঁড়াতে কতখানি লড়াই লাগে তা বললেন সমীরণ সরকার।’রক ‘ মূলত প্রতিবাদের জন্যই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি,প্রেমিকার জন্য নয় রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার জন্য তৈরি হতে না পারলে শিল্পী হয়ে কি লাভ !মৃদুল ঘোষ জানান আশির দশকে ফিল্মি গানগুলি অর্কেস্ট্রা গান এত জনপ্রিয় হয় যে নতুন বাংলা গান সেই অর্থে জায়গা পাইনি পিট সিগার,এরিক জনসন বা বিটলসের গান খুব কম শুনতো।এই সবের মধ্যে এলো আর একটা ব্যান্ড নাম এক পশলা বৃষ্টি।বেশ কয়েকটি ভালো গান করে এই ব্যান্ড।শুধু কলকাতা নয় গোটা পশ্চিমবঙ্গ এই ব্যান্ডের গান শুনেছে। ফোক মেলোডি এক সংমিশ্রণ বেশ সুন্দর উপস্থাপনা এই ব্যান্ডটিকে খ্যাতি এনে দেয়।এছাড়াও আরো কিছু ব্যান্ড যেমন এন ১০,নিও অগ্নোস্টিক,এসক্রা , ক্যানভাসের জনপ্রিয়তা ছিল।
এসক্রা ব্যান্ডটি প্রোগ্রেসিভ,অল্টারনেটিভ রক
করতো,কিছুটা নাম করেছিল।তাছাড়া ও সায়ানাইট ,ফ্যাক্টর অফ সেফটি,আকুয়াস্টিক এডিক্টেড,ডেথলাইন এর মত ব্যান্ড গুলি অনেক ভালো কাজ করেছে এবং করে চলেছে।সম্ভাবনা প্রবল থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় এই ব্যান্ডগুলি এগিয়ে যেতে পারে না ভাঙাগড়া নিয়ে শক্ত হতেই পেরিয়ে যায় অনেকটা সময় তার ওপর ব্যান্ডগান শোনার জন্য শ্রোতা।বাজার প্রচার অনেক কিছু দরকার হয়।হতাশার ব্যাপার হলো অনেক ক্ষেত্রে আমাদের রুচি মনোভাব সমাজ এর জন্য দায়ী।ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে এখনো সাধারণ মানুষের ধারণা স্পষ্ট নয় এটা নিশ্চয় একটা কারণ।অনেকেই দায়ী করেন ব্যান্ড বাজার ভালো নেই ২০১২-১৩ সালে এক চেটিয়া বাজার ছিল ব্যান্ড গানের তবে ২০১৬’র তা অনেক কমে গেছে অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতা সবেই ক্রমশ ঘাটতি পড়েছে।বর্তমানে বেশ কিছু ভালো ব্যান্ড আর পারফর্ম করছেনা।কেউ আলাদা কোনো দিকে নিজের কর্মের পথ বেছে নিয়েছে।কিন্তু অন্যদিকে নতুন ব্যান্ড গুলি তৈরি করছে নিজেদের ,উপাসক, অদৃশ্য, ধূমল-এর মতো ব্যান্ডগুলো কাজ করে চলেছে।ব্যান্ডের উত্তরসূরিরা নিজের গর্বের জায়গা ধরে রাখবে বলেই আশা বহরমপুর বাসির।আরো তরুণ শিল্পী উঠে আসবে।কে বা বলতে পারে হয়তো আবার সামনে এসে যাবে ব্যান্ডের মহারথীরা ,রিফর্ম হবে কোনো পুরোনো ব্যান্ড।
আবার হয়তো সুদিন ফিরে আসবে আশা ব্যান্ডশিল্পী সহ অনুরাগীদের ।
আরো পড়ুনঃ ভারতের বিরুদ্ধে ২৪৬ রানে অলআউট ইংল্যান্ড
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584