নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনাঃ
ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে দেগঙ্গায় বিডিও অফিসে বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ১৫ জন আন্দোলনকারীর জামিন হল এদিন। রবিবার বারাসাত আদালতে তাদের শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয় বারাসাত আদালত। প্রশাসন সূত্রে খবর, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর সহ একাধিক ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এ দিন গ্রেফতার হওয়া ১৫ জনের প্রত্যেককেই অবশেষে জামিন দিল বারাসাত আদালত। দুহাজার ও দেড়হাজার টাকার শর্ত সাপেক্ষে জামিন হয় তাদের।
প্রশাসন সূত্রে আরও খবর যে, আগামী ৭জুলাই অবধি জামিনে মুক্ত হয়েছেন তারা। এ দিন বিক্ষোভকারীদের জামিন মিলতেই আদালত চত্বরে জয়োল্লাস শুরু হয়। তারা মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসতেই তাদের কে গ্রামবাসী কার্যত বিজয়ী হিসেবে বরণ করে নেন। পাশাপাশি জামিনে ছাড়া পাওয়া জুবি সাহা ও উদ্যম দাসকে বিজয়মালা পড়িয়ে আবীরে রাঙিয়ে দেন ওই আন্দোলনের বাকি কর্মীরা। রবিবার বিকেলের পর বারাসাত আদালত চত্বরে যেন রঙের উৎসব লাগে।
আমপান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষোভ – বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল বিভিন্ন প্রান্তে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে নিরন্তর। এরই মধ্যে দেগঙ্গার বিক্ষোভ সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা নেয় আমপানের ক্ষতিপূরণ সহ বিভিন্ন দাবিতে। ক্ষতিগ্রস্তদের হয়ে আন্দোলনে নামতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রী ও “বুদ্ধিজীবী”দের। দেগঙ্গার ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসে বিক্ষোভ হিংসাশ্রয়ী করে তোলার অভিযোগ ওঠে ছাত্র ছাত্রীদের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুনঃ করোনা সচেতনতায় মানিকচকে পুলিশদের নিয়ে আলোচনা সভা
বহিরাগত তকমাও জোটে তাদের। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর সহ একাধিক ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রুজু করা হয় ও ১৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের গ্রেফতার করে বারাসাত আদালতে আনা হয়। রবিবারের আগে শুক্রবার উদ্যম দাস ও জুবি সাহাকে দুদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বাকি ১৩জনকেই পাঠানো হয়েছিল জেল হেফাজতে।রবিবার অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল জবাব করতে এবং শুনানিতে অংশ নিতে বারাসাত আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচাৰ্য। রবিবার দ্বিতীয়ার্ধে বারাসাত আদালতে ১৫জনের জামিনের নির্দেশ মিলতেই আদালত চত্বর সংলগ্ন এলাকা আন্দোলনকারীদের জয়োল্লাস ও আবীরের উৎসবে একাকার হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ জলঙ্গিতে তৃণমূলের মৌন মিছিল
দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সম্পর্কে এরপরই সরব হন জামিনে মুক্ত আন্দোলনকারীরা। মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক,সাংসদ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বললেও সাধারণ মানুষের সক্রিয়তা ছাড়া তা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ জুবি সাহা। একইসঙ্গে এভাবে বলপূর্বক মানুষের অভাব অভিযোগের জন্য আন্দোলন প্রশমিত করার চেষ্টা হলে আন্দোলন হবে তীব্র, দাবি জুবি সাহার। তার আরও দাবি, তারা বহিরাগত নন, বহিরাগত ছিলেন সেখানে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করতে জমায়েত হওয়া দুষ্কৃতীরা।
দুষ্কৃতীদের সেফগার্ড করতে আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের বহিরাগত তকমা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে, অভিযোগ জুবি সাহার। আন্দোলনের অপর উল্লেখযোগ্য মুখ উদ্যম দাস অবশ্য জানিয়েছেন তাদের তরফে খুব সামান্য হলেও হিংসাশ্রয়ী আন্দোলন হয়েছে। “আমাদের দিক থেকে কয়েকজন ইঁট মেরেছে “উক্তি উদ্যমের। আমপানে ক্ষতিগ্রস্তরা এদিন আদালতের নির্দেশকে তাদের জয় মনে করে সন্তুষ্ট। তারা জানিয়েছেন তাদের জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তাদের মুক্তিতে তারা খুশি। আগামীদিনেও আন্দোলনকারীরা তাদের সঙ্গে থাকুন তেমনটাই তারা চান।
আরও পড়ুনঃ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই এখন হোম কোয়ারেন্টাইন
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচাৰ্য এদিন অভিযুক্তদের হয়ে লড়ে আদালতের বাইরে এসে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিচারক মনে করছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে।
রবিবার বিকেলে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী মিহির দে জানান, বিচারক মনে করেছেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত ধারা,এফ আই আর ও ঘটনার রিপোর্ট একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। তাছাড়া আগের শুনানিতে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির মত কিছু ঘটে থাকতে পারে তেমন সম্ভাবনা আছে মনে করা হলেও ক্ষতির প্রমাণ মেলেনি।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জামিন দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসের ৭ তারিখ আবার অভিযুক্তদের বারাসাত আদালতে হাজিরা দিতে হবে বলে তিনি জানান।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584