মুর্শিদাবাদ জেলার তো বটেই রাজ্যের মধ্যে একদা যে স্কুলের সুনাম ছিল সেই কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল ও বহরমপুর জে.এন.একাডেমীর নাম, বেশ কিছু বছর ধরে পর্ষদ কিংবা কাউন্সিলের মেধা তালিকা থেকে বাদ পড়ছিল। দুই স্কুলের দুই পড়ুয়ার  সাফল্যের পর দুই স্কুলের  শিক্ষকেরা  নিজেদের কথা নিউজ ফ্রন্টের পাতায় নিজেরাই লিখে জানালেন  ।  

“আমাদের বিদ্যালয় তার অতীত গরিমা আজও সমানভাবে বহন করে চলেছে”- সুব্রত মুখার্জী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল

কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল আবার খবরের শিরোনামে।এবারের(২০১৮)  উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ছাত্র দেবশুভ্র চক্রবর্তী ৪৮৩(৫00এর মধ্যে) নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান লাভ করেছে এবং বিদ্যালয়ের গৌরব বৃদ্ধি করেছে।এই খবরটি আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত আনন্দের।ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্রদের কাছে আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমার বিশ্বাস। আর একটি বিষয় না বললেই নয়।সেটা হল এবারে যে ছাত্রটি এত ভালো ফল করেছে তার পরীক্ষার কয়েক মাস আগে একটি বিরাট পারিবারিক বিপর্যয় হয়।তার পিতৃবিয়োগ হয়।এবং কয়েক দিন পরে তার কাকাও মারা যায়।এত প্রতিকূলতা, তবুও তার মনের জেদ তাকে এই জায়গায় এনেছে। এখনও তার পরিবার চরম আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে। একই সাথে আমি এটাও মনে করি যে আমাদের বিদ্যালয় তার অতীত গরিমা আজ ও সমান ভাবে বহন করে চলেছে।আমরা যারা বর্তমানে বিদ্যালয়ের সজ্ঞে যুক্ত আছি তাদের সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় এটা সম্ভব হচ্ছে।যদিও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমাদের এগোতে হচ্ছে।এর মধ্যে দুএকটি হল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ -ফেল না থাকাটা।এছাড়া পঞ্চম শ্রেণিতে কোনও ভর্তি-পরীক্ষা নেওয়া হয়না। আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।।তবে প্রাক্তন অনেক সহকর্মী ও অনেক প্রাক্তন ছাত্রদের আমরা সহযোগিতা পেয়ে থাকি।সুতরাং এটা ভাবার কোনও কারণ  নেই  যে  বিদ্যালয় তার সুনাম ধরে রাখতে পারছে না। তবে এটা ঠিকই যে গত কয়েক বছর আমরা মেধা তালিকায় থাকছিলাম না।কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রতি বছরই ভালো হয়ে থাকে।গত বছরও মাধ্যমিক পরীক্ষায় 100% পাশ করেছে।এবারও 100% পাশ করেছে। ।সব শেষে আমি বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অতীত ও বর্তমানের প্রত্যেকের  কাছে আবেদন আপনারা এগিয়ে আসুন ও পরামর্শ দিন যাতে আমরা এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

“এই বিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্র্যাকটিকাল ও প্রজেক্টে নম্বর নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া হয় না।“- কল্যাণ ঘোষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক জে.এন.একাডেমী

২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র শুভাশিস ঘোষ রাজ্যে পঞ্চম স্থান (৪৮৬) এবং তমোজিৎ মন্ডল (৪৮০) একাদশ স্থান দখল করেছে। এরা পঞ্চম শ্রেণী থেকেই আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র।যথেষ্ট মেধাবী ও সম্ভাবনাময়। মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও এদের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। পূরণ হল দুবছর পর উচ্চমাধ্যমিকে। বিদ্যালয় পরিকাঠামো ও সরকারী নিয়ম কানুনের মধ্যে থেকেও বিদ্যালয় ছাত্রদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভুতিশীল ও সাহা্য্যকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে। সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করার সদিচ্ছা ও ভালো ফলের জন্য পরামর্শদাতার ভূমিকায় শিক্ষকগণ যথেষ্ট দায়িত্ববান।মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৫ম ও ১০ম স্থান উচ্চমাধ্যমিকে ৫ম ও ১১তম স্থান দখলে বিদ্যালয়ের ভূমিকাকে ছোট করা যায় না। উচ্চমাধ্যমিক সিলেবাস পরিবর্তনের পর বিদ্যালয় গুলিতে বীক্ষনাগার-এর জন্য সরকারী অনুদান পাওয়া গেছে প্রয়োজনের তুলনায় অতি কম। তা স্বত্বেও বীক্ষনাগার গুলিকে যথাসম্ভব আধুনিক করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে সাফল্যের মুখ দেখার মধ্যে অপার আনন্দ। কিন্তু দুঃখ হয় কোনো কোনো মহল থেকে অপপ্রচার চালানো হয় এই বিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্র্যাকটিকাল ও প্রজেক্টে নম্বর নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া হয় না। কারা এবং কেন এই অপপ্রচার পরিকল্পিতভাবে চালান তা বোঝা যায়। কিন্তু বোঝা যায় না অভিভাবকগণ বিভ্রান্ত হন কেন? এই প্রচার যারা করেন তাঁরা এক অর্থে নিজেদের ছোট ও করেন। কারণ-তাঁরা নিজেদের স্বার্থে এটাও প্রচার করেন যে কোন কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে প্রথমত ক্লাস নিয়মিত করার প্রয়োজন হবে না, দ্বিতীয়ত প্র্যাকটীক্যাল ও প্রজেক্টে এর পূর্ণ নম্বর উপঢৌকন দেওয়া হবে। এঁরা শিক্ষকতা বৃত্তির মহান আদর্শকে কতভাবে অমর্যাদা করছেন! কারণ ক্লাসের প্রয়োজন নেই বলে সরকারী নিয়মকে অগ্রাহ্য করছেন। দ্বিতীয়ত ভর্ত্তীর সময়েই বা তার আগেই ‘পুরো নম্বর দেওয়া হবে’ এই ঘোষণা করে ছাত্রের দক্ষতাকে অবমাননা করছেন। যা নিয়ম নীতি বিরুদ্ধ ও বটে। তৃতীয়ত শিক্ষক হিসাবে এই ধরণের পূর্ব ঘোষণা ভালো ছাত্র পাওয়ার জন্য নীতিবিরুদ্ধ ও সহজে সাফল্যের জন্য সমঝোতা। নিজেদের অজান্তেই তাঁরা ছাত্রদের সামনে কোন দৃষ্টান্ত রাখছেন তা ভেবে দেখার প্রয়োজন। চতুর্থত অভিভাবক গণকে তাঁরা বিভ্রান্ত করছেন এবং বিশ্বাস করতে বাধ্য করছেন যে নম্বর এভাবেই পাওয়া যাবে। পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ছাত্রের দক্ষতার তুলনায় স্কুলের কেরামতি অনেক বেশী-এইসব কথায়  অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করছেন। স্বচ্ছতা, নৈতিকতা, ছাত্রের পরিশ্রম, অধ্যয়ন, সাধনা-কথাগুলোকে বর্জ্য শব্দে পরিণত করার পক্ষে এই ধরণের অপপ্রচার-ই যথেষ্ট।

সারা শহর জুড়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রদের কোন এক বিশেষ দিকে ঢল দেখে মনে হয় অন্য ক্ষেত্রগুলি যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।অভিজ্ঞতার নিরিখে তা মনে হয় না। সুচতুর কৌশলে পরিকল্পিতভাবে চলছে এই অপপ্রয়াস।কোন বিদ্যালয়ের ছাত্র মেধা তালিকায় স্থান পেল বলেই তারা জিতে গেল, আর অন্য স্কুল গুলি হেরে গেল বলে উস্কে দেবার কূটবুদ্ধি অন্তস্রোত হিসাবে বহমান। বিচক্ষণ মানুষের কি তাই মনে হবার কথা? অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রচারের জন্য অন্যকে ঘৃণার চোখে দেখার শিক্ষাও ছাত্রদের মধ্যে বপন করা হচ্ছে সুচারুভাবে, অতি নিপুণভাবে। ভেবে দেখছে কি-ছাত্রের জীবনে, অভিভাবকদের মানসিকতায়, সমাজ জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে নেতিবাচক সুর বেঁধে দেওয়া হচ্ছে নিজেদের অজান্তে। অথচ আমরাই নৈতীক আশঙ্কায় আশঙ্কিত।

করুণা হয়, তাঁদের কথাভেবে যাঁরা মনে করেন আত্মীকরণ নয়, অন্যের মাংস কেটে নিজের শরীরে জুড়ে দেওয়াই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ।

তা স্বত্বেও আমরা হতাশার বীজ বুনতে আগ্রহী নই। আশা করি সকলের- ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক গণের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। ক্ষণিক ভালো-র লোভে, চটজলদি লাভের তাড়নায়, কূটবুদ্ধিকে প্রশ্রয় দেবেন না।বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থে নৈতিক অধঃপাতের কবর রচনা করবেন না কেউই।আমরা আশাবাদী সকল চক্রান্ত্র সকল অপপ্রচার একদিন ধুয়ে যাবে সততা আর শুভ বুদ্ধির স্রোতে। প্রতিকূলতা জয় করে আমরা গেয়ে উঠবো –“ সকল কাঁটা ধন্য করে ফুল ফুটবেই ……”

 

 

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here