মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি ভারতীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

ভিন রাজ্যে থাকা  এ রাজ্যের শ্রমিকদের  খোঁজখবর ও  দেখভালের জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে  চিঠি পাঠালেন রাজ্য বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ l

ষোলো পাতার পাঠানো চিঠিতে তিনি বেশ কিছু শ্রমিকের একটি তালিকা দিয়েছেন যারা বাইরের রাজ্যে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে যোগাযোগ করে প্রশাসন যাতে ভিন রাজ্যে থাকায় এ রাজ্যের শ্রমিকদের সামগ্রিক একটি তালিকা তৈরি করতে পারে এবং দিল্লি, মুম্বাই, নাসিক, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা শ্রমিকদের জন্য টাস্কফোর্স করে তাদের পাশে রাজ্য সরকার যাতে দাঁড়ায় সেজন্য তিনি আবেদন জানিয়েছেন l

বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের জন্য দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। এই পরিস্থিতিতে দোকানপাট, যান চলাচল সবই বন্ধ। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বন্ধ হয়েছে সমস্ত কল কারখানা কাজকর্ম। ফলে প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এরাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকরা।

যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতেও পারছেন না তারা। যেটুকু খাদ্য সঞ্চিত ছিল তা শেষের মুখে। টাকা পয়সাও প্রায়  ফুরিয়ে এসেছে। এই অবস্থায় বাড়ি ফেরার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে  আবেদন জানাচ্ছেন তারাও। এইসব শ্রমিকদের কেউ রাজস্থান, হায়দরাবাদ, দিল্লি আবার কেউ হরিয়ানাতে  কাজ করেন। কিন্তু দেশজুড়ে লকডাউন জারি হওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না তারা।

পশ্চিম এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক এভাবে অন্য রাজ্যে আটকে পড়েছেন। রাজ্য সরকারের তৎপরতায় তাদের একটি অংশকে বাড়ি ফেরানো গেলেও এখনও আটকে কয়েক হাজার শ্রমিক। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বেপাত্তা শ্রমিকদের মালিকরাও।

আরও পড়ুনঃ মানুষের জন্য খেটে চলেছেন বামপন্থী যুবকরা

ফলে হাতে টাকা-পয়সা বলতে তেমন কিছু নেই। এরকম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে বাড়ি ফেরার আবেদন জানাচ্ছেন আটকে পড়া শ্রমিকরা। রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে কয়েকশো শ্রমিককে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। রাজ্যে সেভাবে কর্মসংস্থান না থাকায় রুটি-রুজির টানে তাদের ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রি দর্জি দিনমজুর ইত্যাদির কাজ করতে যেতে হয়েছে।

তবে এমন ভাবে যে আটকে পড়তে হবে তারা ভাবতেই পারেনি। দুই মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি ব্লক মিলে প্রায় দুই হাজারের বেশি শ্রমিক আটকে পড়েছেন। অনেকে ঠিকমত খেতে পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না ঠিকমত  থাকার আশ্রয়ও।

দাঁতন কেশপুর সুতাহাটা ও মহিষাদল থেকে দিল্লি এবং হায়দরাবাদে শ্রমিকের কাজে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানান, ” সরকারের কাছে হাতজোড় করে বলেছি আমাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব‍্যবস্থা করুন। আমাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই। খাবারও সব শেষ।

আরও পড়ুনঃ জরুরি পরিষেবার জন্য চলবে বেসরকারি বাস, ছুটবে ট্রেন অর্জুনও

কিকরবো কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না।” এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন আটকে পড়া মানুষদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।  ভিন রাজ্যের আটকে পড়া শ্রমিকদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলাশাসক পার্থ ঘোষ জানিয়েছেন, “আমরা প্রশাসনিকভাবে ভিন রাজ্যে থাকা শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করেছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বাস পাঠিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের প্রতিদিন খাবার দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।” পূর্ব মেদিনীপুরের মতো পশ্চিম মেদিনীপুর সহ  রাজ্যের অন্যান্য  জেলা গুলির ক্ষেত্রেও যাতে এরকম উদ্যোগ নেওয়া হয় সেজন্য রাজ্য সরকারের কাছে সোমবার চিঠি পাঠিয়েছেন প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ।