সুদীপ পাল,বর্ধমানঃ
সময়টা তখন স্বদেশী আন্দোলনে উত্তাল বাংলা।মাথায় স্বদেশী কাপড়ের ভারী বোঝা নিয়ে এক যুবক হাজির হলেন আসানসোলে আত্মীয়ের বাড়িতে, আশ্রয় নেবেন বলে। আত্মীয় ভয়ে তাঁকে আশ্রয় দিলেন না,যদি তার কোলিয়ারি চাকরি খোয়া যায়।যুবকটি পড়লেন বিড়ম্বনায়। অবশ্য উপস্থিত বুদ্ধির জোরে ছদ্মবেশে সরাইখানায় রাত কাটিয়ে সেই দ্রব্যগুলি পৌঁছে দিলেন নির্দিষ্ট আস্তানায়।অল্প কয়েকদিন পরে পিকেটিং করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন যুবক,শাস্তি হাজতবাস।যুবকের নাম গিরিজা প্রসাদ ভট্টাচার্য।
মানকরের রাইপুরে ভট্টাচার্য পরিবার অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত এই মানুষটিকে। গিরিজা প্রসাদের পুত্র সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, মানকর ছিল বিপ্লবীদের আখড়া।মানকরের রংমহলে এসে তাঁরা মিলিত হতেন।বিপ্লবী যাদবেন্দ্র পাঁজা, রাঙাখুলার নিরোদ মিত্র, জিতেন চৌধুরী, রাজকৃষ্ণ দীক্ষিত, অভিরামপুর,মানকর সহ স্থানীয় জমিদাররা আসতেন,আলোচনা চলত স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে।স্বদেশী আন্দোলনে গোপন কাজে ডাক পড়ত যুবক গিরিজা প্রসাদের। সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, বাবার মুখে শুনেছি বাক্সবন্দী বিভিন্ন জিনিস রাতের অন্ধকারে মাঠের আল বেয়ে নিয়ে যেতে হত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হতো,কোন ভাবেই যেন পুলিশ বা গুপ্তচর কারুর চোখেই না পড়ে।পুলিশের নজর তাঁর উপর ছিল অবশেষে পিকেটিং করতে গিয়ে ধরা পড়ে জেলে যান।স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে গিরিজা প্রসাদ ভট্টাচার্যকে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মান জানান ইন্দিরা গান্ধী।
ব্যবস্থা করেন পেনশনের।সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন,বাবা বেঁচে থাকতে স্বাধীনতা দিবসের দিন পতাকা উত্তোলন করতেন।বাবা মারা যাবার পরেও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখে প্রত্যেক বছর স্বাধীনতা দিবসে ভোরবেলা বাড়ির সবাই একসাথে হাজির হয়ে পতাকা উত্তোলন করি।
মানকরের বাসিন্দা রোহিত পাল বলেন, ইতিহাস বিস্মৃত জাতি বলে বাঙালীর একটা বদনাম আছেই। মানকরের প্রখ্যাত বিপ্লবী গিরিজা প্রসাদ ভট্টাচার্য সহ অন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার জন্য সবার সচেষ্টতা ও সচেতনতার প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব পাল বলেন,স্বাধীনতা সংগ্রামীর বাড়ি ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিক প্রশাসন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584