প্রীতম সরকার
তাঁর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের সামনে নতজানু হয়েছিল প্রতিবন্ধকতা। দূর্ঘটনা থামিয়ে দিতে পারেনি তাঁর জীবনকে। তিনি মাসুদূর রহমান বৈদ্য। বাংলার তথা দেশের দূরপাল্লার এক নম্বর সাঁতারু। মহাসাগরের বুকে সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল, জিব্রাল্টার প্রণালী, পক প্রণালী পার করেছেন।
দক্ষিন ২৪ পরগনার বল্লভপুর গ্রামে ১৯৬৮ সালে মাসুদুরেরর জন্ম। বাবা ছিলেন মসজিদের ইমাম। নয় ভাইবোনের সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। মাসুদুর যখন স্কুলে ক্লাস নাইন থেকে টেন এ উঠবেন, তখনই ভয়ঙ্কর দূর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর দু-পায়ের উপর দিয়ে মালগাড়ি ট্রেন চলে যায়। দীর্ঘ দেড় বছর হাসপাতালে কাটিয়ে অপারেশন সামলে যখন বাড়ি ফিরলেন, তখন দুই হাঁটুর নীচ থেকে দু’পা বাদ দিতে হয়েছে। এতে দমে যাননি তিনি। মনকে শক্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জলে।
মাসুদুর বুঝেছিলেন, এশিয়াড, অলিম্পিকে তিনি নামতে পারবেন না। তাই বেছে নিলেন দূর পাল্লার সাঁতারকে। অনেক করুনা, তাচ্ছিল্ল্য, দয়া ভিক্ষা নিয়ে জীবন কাটাতে পারবেন না তিনি। সাঁতারকে সন্মানের হাতিয়ার করলেও সমস্যা দেখা গেল অন্য জায়গাতে। পা না থাকায় জলের মধ্যে শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছিলেন না তিনি। উল্টে যাচ্ছিলেন বারবার। লড়াইকে তাঁকে জিততেই হবে ভেবে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা জলের মধ্যে থাকার ফলে রোগে পড়ে গেলেন। কিছুদিন বিশ্রামের পরে আবার প্র্যাকটিস শুরু করলেন।
১৯৮৯ সালে পুণের ‘আর্টিফিসিয়াল লিম্ব সেন্টারে’ নিজের যোগ্যতার প্রমান করলেন তিনি। মোট ১৭ টি ইভেন্টের মধ্যে ১৬ টিতেই প্রথম স্থান অধিকার করলেন তিনি। দেশের গঙ্গাবক্ষে কয়েকটি সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও ভাল ফল করলেন। মনের জোর বরাবরই ছিল মাসুদুরের। ১৯৯৭ সালে প্রতিবন্ধী সাঁতারু হিসাবে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেল, ২০০১ সালে ইউরোপ আর আফ্রিকার মধ্যে ২২ কিলোমিটার জিব্রাল্টার প্রনালী এবং ২০১০ সালে ভারত আর শ্রীলঙ্কার মধ্যে পক প্রনালী সাঁতরে পার হন। ২০১৫ সালে মাসুদুরের মৃত্যু এমন জীবনযোদ্ধার পথ থামিয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মনের জোরে মাসুদুর প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার যে শিক্ষা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন, তা চিরকাল মনে রাখবে বাঙালী।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584