মোহনা বিশ্বাস, বিনোদন ডেস্কঃ
আজ ১মে। এই দিনটা সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাই মে মাসের ১তারিখটা ক্যালেন্ডারে লাল কালি দিয়ে লেখা থাকে। কারণ, এই দিনটাকেই গোটা দেশবাসী শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করে। মে মাসের ১ তারিখটার গুরুত্ব কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এই দিনই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এভারগ্রিন সঙ্গীত শিল্পী মান্না দে। আজকে সেই বিশিষ্ট শিল্পীর জন্মদিনে নিউজফ্রন্ট বাংলার বিশেষ নিবেদন ‘তুমি রবে নীরবে’।
সারা ভারত জুড়ে ৪ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন শিল্পী মান্না দে। উনিশ শতকের জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমাগুলিতে চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর গাওয়া সেই গানগুলো এখনও হিট। তাঁর রোম্যান্টিক গানগুলি নতুন প্রজন্মের কাছেও অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছে।
১৯৪২ সালে প্রথম মুম্বইতে কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সাথে অ্যাসিস্টেন্ট মিউজিক ডিরেক্টর হিসাবে কাজ শুরু করেন মান্না দে। ১৯৪২-এই ‘তামান্না’ সিনেমাটিতে প্রথম প্লেব্যাক সিংগার হিসাবে কাজ করেন তিনি। সেই বছরই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায় তাঁর গাওয়া সেই গান।
জোছনাকে সামলে রাখার কথা চাঁদকে বলার মতো সাহস একমাত্র এই নক্ষত্রেরই ছিল। ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’ তাই ‘খুব জানতে ইচ্ছা করে’ তুমি ভালো আছো তো বাঙালির গর্ব? শুধুমাত্র হিন্দি নয় বাংলা গানেও মান্না দে-র জুড়ি মেলা ভার। ১৯৭৪ সালে তাঁর ‘রাত জাগা দুটি চোখ’ শুধু বলত ‘সু্ন্দরী গো দোহাই তোমার মান করো না’। ১৯৭০-এ মুক্তি পাওয়া ‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমার ‘এ ভাই জারা দেখ কে চলো’ গানটি রাতারাতি সুপারহিট হয়েছিল।
এছাড়াও মান্না দে-র কণ্ঠে জনপ্রিয় হিন্দি গানগুলির মধ্যে রয়েছে ‘লাগা চুনড়ি মে দাগ’, ‘জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি’, ‘না চাহু সোনা চাঁদি’, ‘বাবু সামঝো ইশারে’-এর মতো আরও অনেক গান। ১৯৫৫ সালে ‘শ্রী ৪২০’ সিনেমায় মান্না দে ও আশা ভোঁসলের কণ্ঠে ‘মুড মুড কে না দেখ’ আজও নস্ট্যালজিক করে তোলে প্রত্যেক ভারতবাসীকে। ওই একই ছবিরই আরও একটি গান এখনও রোম্যান্টিক হতে বাধ্য করে। হ্যাঁ, একদম ঠিকই ভাবছেন। ‘প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া হ্যায়, প্যায়ার সে ফির কিঁউ ডারতা হে দিল’। রাজ কাপুর আর নার্গিস-এর সেই বৃষ্টি ভেজা মুহূর্ত আর মান্না দে-র কণ্ঠে রোমান্টিকতায় মোড়া এই গান আজও প্রত্যেক বাঙালির মনকে জাগিয়ে তোলে বারবার।
১৯৬৫ সালে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সিনেমার জন্য প্রথম বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড পান মান্না দে। সেরা প্লেব্যাক সিংগার হিসাবে এই পুরস্কার পান তিনি। এরপর আরও ৬ বার বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড পান এই কিংবদন্তী শিল্পী। তাঁর গাওয়া অনবদ্য গানগুলির জন্য তিন বার জাতীয় পুরস্কার পান তিনি।
১৯৭১-এ পদ্মশ্রী, ২০০৫-এ পদ্মভূষণ এবং ২০১১-তে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন প্রবাদপ্রতিম শিল্পী মান্না দে। ২০০৪ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ২০০৮-এ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। অভূতপূর্ব গানের জন্য ২০০৭ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান এই শিল্পী। সুরেলা কণ্ঠে ভুবনমোহিনী গান গাওয়ার জন্য এরকম আরও বহু পুরস্কার পেয়েছেন মান্না দে।
অবশেষে ২০১৩ সালে ৯৪ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে এক নক্ষত্র পতন ঘটে সেদিন। কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর না থাকলেও মান্না দে-র কণ্ঠ চিরকাল মানুষের মনের মণিকোঠায় বিরাজমান থাকবে। কাগজে বা পাথরে নয় হৃদয়ে এই কিংবদন্তীর নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে আজীবন। কত দূরে আর নিয়ে যাবে? আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয়ত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584