সিমা পুরকাইত, দক্ষিণ ২৪ পরগণাঃ
শনিবার গভীর রাতে ঘটে যাওয়া বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের দাপট আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ সুন্দরবনের মানুষদের কাছে। বিস্তীর্ণ এলাকা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত চাষের জমি, মাছের ভেড়ি বসতবাড়ি। আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী পরিবার। বর্তমানে দুটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে দক্ষিণ সুন্দরবনের কাকদ্বীপ এবং রায়দিঘি দুই এলাকায়।
ফ্রেজারগঞ্জ থানার চিনাই নদীর মাঝে ডুবে যায় দুটি ট্রলার একটি এফবি মা কমলা অন্যটি এফবি চন্দ্রানী। এফবি চন্দ্রানীতে থাকা ১২জন মৎস্যজীবীর মধ্যে প্রথম দিন একজন মৃত এবং দুজন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়। কিন্তু প্রশাসনের উদ্ধারকাজের উদাসীনতায় বাকিদের খোঁজাখুঁজি নিয়ে সমস্যার বাতাবরণ তৈরি হয় মৎস্যজীবী মহলে। রবিবার দিন ভোর খোঁজাখুঁজির পর সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে একটি মৃতদেহ নদীর তটে। ভর সন্ধ্যায় আরো একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সোমবার এনডিআরএফ প্রতিনিধিদল, কোস্টগার্ড প্রতিনিধি দল ডুবুরি নামায়। হবার ক্যাপ্ট, স্পিড বোর্ডের মধ্য দিয়ে তল্লাশি শুরু হয় চিনাই নদী এবং বঙ্গোপসাগরে।
মঙ্গলবার উদ্ধারকাজ বিঘ্ন ঘটে। একদিকে চিনাই নদীর জোয়ার অন্যদিকে নদীর গভীরতায় বিঘ্ন ঘটে উদ্ধারকাজে । ফলে বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধার কাজ । ভাটার সময় উদ্ধারকাজ বন্ধ হলেও কাকদ্বীপ এসডিপিও, এসপি, এডিশনাল এসপি, ফ্রেজারগঞ্জ থানা, নামখানা থানা, কাকদ্বীপ ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে আবারও উদ্ধারকাজে নামে বুধবার থেকে। উদ্ধার হয় আরও একটি মৃতদেহ।
বৃহস্পতিবার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভোর থেকে শুরু হয় কাজ। রাত পর্যন্ত চিনাই নদী থেকে উদ্ধার করা হয় ঘাতক এফবি চন্দ্রানী ট্রলার। গভীর রাতে নিয়ে আসা হয় চিনাই নদীর তটে। শুক্রবার দিনের আলো ফুটতেই ঘাতক ট্রলারের কেবিনে উদ্ধার হয় আরও চারটি মৃতদেহ । যাদের মধ্যে ছিলেন শেখ আলমগীর ,বাসিরাম দাস, শিবু গোলদার ,আরশেদ বলদাই। চারজন মৃতদেহকে নিয়ে আসা হয় কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল চত্বরে তখন কান্নার শোরগোল। হতাশাগ্রস্ত পরিবারের এখনো দুজন মৎস্যজীবী নিখোঁজ । যদিও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এনেছে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে মাঝি এবং মালিক দুলাল দাসের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি রেখেছেন কাকদ্বীপ ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার হয় একটি দেহ। রায়দিঘি ট্রলার ডুবি কান্ডে শুক্রবার প্রশাসনের অসহযোগিতায় শেষমেষ উদ্ধারকাজে হাত লাগান সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার কাজে বের হন বঙ্গোপসাগরের দিকে বিদ্যা নদীতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলার উদ্ধার হলেও উদ্ধার হয়নি ১০জনের মধ্যে চারজন মৎস্যজীবী । গতকাল রায়দিঘি ট্রলার এফবি সাগরকন্যা যাদব প্রধান নামে এক মৎস্যজীবীর মৃতদেহ উদ্ধার করে এনডিআরএফ প্রতিনিধিরা । দুই প্রান্তে ঘটে যাওয়া দুটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা সুন্দরবন এলাকায়। ক্ষোভ বিক্ষোভ সবটাই উজাড় করেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ে এই মর্মান্তিক ঘটনার দুঃস্বপ্ন চিরকালের মতন রইল গোটা সুন্দরবনবাসীর মধ্যে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584