নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ দিনাজপুর
আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সম্প্রীতির মিলনোৎসব দক্ষিণ দিনাজপুরের বোল্লা মেলা। গাজল-হিলি জাতীয় সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বোল্লা এলাকায় অনুষ্ঠিত এই মেলা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা হিসেবেই পরিচিত। প্রতি বছর রাসপূর্ণিমার পরের শুক্রবার রাতে কালীপূজা কে কেন্দ্র করে এই মেলার আয়োজন হয়ে থাকলেও সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষই তাতে সমান ভাবে অংশ নেন। কালী মণ্ডপের ঠিক উল্টো দিকে মেলা প্রাঙ্গণেই রয়েছে মুসলিমদের মসজিদ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে রয়েছে দু-দুটি কবরস্থানও।
শুক্রবার থেকে শুরু এই মেলা সমাপ্ত হবে সোমবার রাতে। বোল্লাকালীর পূজা উপলক্ষে মেলা ও অন্যান্য দিনগুলিতে মসজিদ ও কবরস্থানের পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ যাতে থাকে তার জন্য সতর্ক থাকেন হিন্দুরা।পাশাপাশি মুসলিমরাও মন্দিরের পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখতে সদা তৎপর।সমস্ত সম্প্রদায়ের ভাতৃত্ব বোধ তথা সচেতনতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বোল্লাকালীরর এই মেলা।
বোল্লা রক্ষাকালীর পুজোকে কেন্দ্র করে চারদিন ব্যাপী চলে বিরাট মেলা। মেলায় সকল ধর্মের মানুষরাই অংশ গ্রহণ করেন।
ইতিহাসবিদদের মতে এক সময় এই এলাকার জমিদার ছিলেন বল্লভ মুখোপাধ্যায়। জমিদারের নাম থেকেই জায়গাটির নাম হয়েছে বোল্লা। কয়েকশ বছর আগে এলাকারই এক মহিলা স্বপ্নাদেশে কালো একটি পাথরখন্ড কুড়িয়ে পেয়ে সেটিকে মাতৃরূপে প্রথম পূজা শুরু করেছিলেন। বিভিন্ন নথি পত্রে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলেও বোল্লাকালীর পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। যা থেকে এই মেলার বয়স তিনশরও বেশি বছর বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এবছরও মেলায় মনিহারির দোকান থেকে শুরু করে নাগরদোলা সার্কাস আলকাপযাত্রা সহ বিনোদন মূলক অনেক কিছুই রয়েছে। পুজোর রাতে পুজোর মানত হিসাবে কয়েক হাজার পাঠা বলীর প্রচলন আজও রয়েছে। মেলার নিরাপত্তা জোরদার করতে করা পুলিশি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও মহিলা পুলিশও।
পুরাতত্ব বিষয়ের গবেষক সমিত ঘোষ জানিয়েছেন ঠিক কবে থেকে এই মেলা শুরু হয়েছিল তা স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। তবে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বিভিন্ন নথিতে বোল্লাকালী মণ্ডপের উল্লেখ থাকায় খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে এই মেলার বয়স তিনশো বছরেরও বেশি। এই মেলা যে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মেলা সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরানো। পুজো সম্পর্কে নানান জনশ্রুতি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এলাকার মুরারীমোহন চৌধুরী নামের এক জমিদার ছিলেন। যিনি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে মামলায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন। বোল্লা কালীর কাছে মানত করে ওই মামলায় তিনি জয়লাভ করলে সেই বছর থেকে রাসপূর্নিমার পরের শুক্রবার থেকে তিনি বড়সড় আয়োজনে এই পূজা শুরু করেন।
জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মেলায় নজরদারি চালাতে আকাশ থেকে ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দিতে মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও সেই সঙ্গে মেটাল ডিটেক্টর মেশিনও বসানো হয়েছে। ইভটিজিং ও পকেটমারি প্রতিহত করতে সাধারণ পুলিশের পাশাপাশি কয়েকশ সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি:সংগৃহীত
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584