মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ভারতেও এর অন্যথা হচ্ছে না। একদিকে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অন্যদিকে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।
দেশের এহেন সংকটজনক পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে ২১দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই এখন গৃহবন্দি প্রত্যেকটি মানুষ। এই অবস্থায় সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, বিজ্ঞানীরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কীভাবে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ রোধ করা যায় এবং আক্রান্ত মানুষকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায়।
এখন অবধি হু সহ বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য সংস্থা, বিজ্ঞান সংগঠন, ও ডাক্তারদের সংগঠন করোনা মোকাবিলায় বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন। পরস্পরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলছেন। বলছেন যে সংক্রামিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, কোয়ারান্টাইন করা, ও অন্যদের সঙ্গে মিশতে না দেওয়ার মধ্যেই নিহিত আছে মহামারি রোধের চাবিকাঠি। আর, আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে সুচিকিৎসা দিলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী ভালো হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমনে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। আর এই লকডাউনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি কর্মসূচীর কথা ঘোষণা করেন। ৫ই এপ্রিল রবিবার রাত ৯টা ৯মিনিটে দেশবাসীকে প্রদীপ, মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলের আলো জ্বালানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুনঃ পরিসংখ্যানে করোনা
এর আগেও করোনা মোকাবিলায় যেদিন দেশজুড়ে কার্ফু জারি করা হয়েছিল সেদিনও বিকালে হাততালি দিয়ে, কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে, শাঁখ বাজিয়ে দেশের চিকিৎসকদের প্রতি সম্মান জানাতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের এইরকম কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এহেন নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি। এই সোসাইটির সহ সম্পাদক ডঃ নির্মল দুয়োরি বলেন, “সরকারের কাছে দেশবাসী প্রত্যাশা করেছিল, প্রচুর সংখ্যায় রোগ নির্ধারণ কেন্দ্রের সৃষ্টি, সরকারি হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটরসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা, ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা, কর্পোরেট হাসপাতালগুলিকে করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগানো, মাস্ক ও হাত-স্যানিটাইজারের ব্যাপক উৎপাদন ও বণ্টন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা, ও দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষদের প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা। কিন্তু এসব কিছুই তারা করেননি। উপরন্তু দেশের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এইসব কর্মসূচী সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে এইসব কর্মসূচী পালনের দ্বারা করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা সম্ভব নয়। এর দ্বারা আসলে সমাজ মননে যে ধর্মীয় বিশ্বাসের আধারে যে কুসংস্কার বাসা বেঁধে আছে তাকেই উৎসাহিত করা হবে এবং দেশের মধ্যে একটা কৃত্রিম আবেগের সৃষ্টি করা হবে যার সাথে করোনা মোকাবিলার কোনো সম্পর্ক নেই।
অথচ এর দ্বারা যে লকডাউনকে যতটা সম্ভব দেশের মানুষ মেনে চলার চেষ্টা করছে সেই উদ্দেশ্যটাই বাধাপ্রাপ্ত হবে যদি, ২২ তারিখ যেমন কাঁসর-ঘণ্টা নিয়ে রাস্তায় মিছিল বেরিয়েছিল, তেমন একত্রে প্রদীপ জ্বালানোর ধুম পড়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ অসহায় মানুষদের হাতে খাদ্য সামগ্রী প্রদান পুলিশ আধিকারিকের
আমরা এ ধরনের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করছি এবং আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন রাখবো সাধারণ মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যবিধি এবং গরীব মানুষের রেশনিং ব্যবস্থা যাতে সম্পূর্ণ সচল থাকে সেদিকে যেন নজর দেওয়া হয়।
আর সর্বশেষ মানুষের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা এ ধরনের কুপমুণ্ডক চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চিকিৎসকরা যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলছেন সেভাবেই চলুন।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584