মোহনা বিশ্বাস,ওয়েবডেস্কঃ
করোনা ভাইরাসের কারণে নাজেহাল গোটা বিশ্ব। এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপে ত্রস্ত ভারতও। কোভিড-১৯ ভারতে প্রবেশ করেই বিস্তার লাভ করেছে সর্বত্র। পশ্চিমবঙ্গেও ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। রাজ্যসরকারও করোনা মোকাবিলায় লকডাউনকেই বেছে নিয়েছে। রাজ্যসরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে বাহবা দিয়েছেন অনেকেই।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি, পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি প্রফেসর অমিতাভ দত্ত এবং সম্পাদক ড: রাধাকান্ত কোনার এক ইমেল বার্তায় বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।
আরও পড়ুনঃ এবার করোনার কবলে পুলিশ আধিকারিক, সন্দেহজনক এক স্বাস্থ্যকর্তাও
কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি যদি সত্যিই রুখতে হয়, তবে এই মূহুর্তে রাজ্যসরকারকে লকডাউনের পাশাপাশি আরও কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে। আর ঠিক এই কারণেই কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজ্যেবাসীর সংকট মোকাবিলা করতে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি, পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব রাখেন ড: কোনার।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, যে শুধু লকডাউনই যথেষ্ট নয়, ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করে কোভিড রোগী এবং সংক্রামিত কিন্তু রোগলক্ষণ-বিহীন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আলাদা রাখার ব্যবস্থা না করতে পারলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায় না। এর জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
যেমন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের অস্তিত্ব পরীক্ষা করার হার বর্তমানের অন্তত দশগুণ করতে হবে। যেখানেই কোভিড-রোগী ধরা পড়বে সেই এলাকার এবং আশেপাশের বাজার-এলাকার সমস্ত মানুষের লালারস পরীক্ষা করতে হবে।
বর্তমান যেসব পরীক্ষাকেন্দ্রে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হয়, সেগুলির ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবহার হচ্ছে না, সেগুলিকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। এই মুহূর্তে আরও পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, পরীক্ষা কিটের সংখ্যা বাড়ানো এবং উপযুক্ত সংখ্যক বিজ্ঞান-শিক্ষিত যুবক-যুবতীকে নিয়োগ করে যুদ্ধকালীন গুরুত্ব দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।
ড: কোনারের পাশাপাশি সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর দত্ত-ও কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন গবেষণাগার (যেমন IISER, IICB, Bose Institute) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগে RT-PCR যন্ত্র আছে, যেটি কোভিড-১৯ জীবাণু শনাক্তকরণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এইসব কেন্দ্রগুলিতে যারা এ কাজে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে পরীক্ষা করার দ্রুত সরকারি অনুমতি দেওয়া দরকার।
প্রফেসর দত্ত-এর মতে, বর্তমানে রাজ্যের জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল ও প্রাইমারি হেলথ সেন্টার গুলিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা সহ সংক্রামক রোগী রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে। হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। এছাঢ়াও সমস্ত ইনডোর স্টেডিয়াম ও অনুরুপ আচ্ছাদিত স্থানকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা দরকার, হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনে প্রাইভেট ডাক্তার, নার্স ও আয়াদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
সকল স্বাস্থ্যকর্মীর সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। প্রচুর সংখ্যায় ডাক্তারি-মাস্ক, পোষাক,স্যানিটাইজার, নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলির জন্য খাট-বিছানার জোগান দিতে, বাজারে এগুলির উপস্থিতির ওপর নির্ভর না করে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা ও তাদের কর্মহীন কর্মীদের ব্যবহার করে সরকারি উদ্যোগেই এগুলির উৎপাদন করতে হবে।
প্রফেসর দত্ত আরও বলেন যে, হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার ফলে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া এই রাজ্যের নাগরিকদের (যেমন পরিযায়ী শ্রমিক, ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা পরিজনবর্গ) ফেরৎ নিয়ে আসার জন্য রাজ্যসরকারকেই বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে অবিলম্বে কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যসরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
ভিন রাজ্যে আটকে পড়া রাজ্যবাসীদের ফিরিয়ে আনাতে হবে, প্রয়োজনে বিশেষ ট্রেন চালিয়ে তাদের ফিরিয়ে এনে আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্কুলবাড়িগুলিতে দুই সপ্তাহ কোয়ারান্টাইন রেখে তাদের নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে, ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি, পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক ড: রাধাকান্ত কোনার বলেন, দীর্ঘ লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছে বেশ কিছু শ্রমিক, পরিচারিকা সহ গরীব-নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ। ফলে ভয়ংকর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে অভুক্ত অবস্থায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে তাঁরা। এই সকল অভুক্তদের খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা রাজ্যসরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584