সুদীপ পাল ,বর্ধমানঃ
বাঁধা প্রথম থেকেই ছিল তবে শুধুমাত্র জেদ আর পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসার জন্যই উচ্চশিক্ষার আঙিনায় মানকর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ছাত্র গদাই ঘোষ। স্থানীয়দের কথায়, দারিদ্রতা প্রথম থেকেই ছিল, তার উপর অকালে মারা যান পূর্ব বর্ধমানের বাঘাই গ্রামের বাসিন্দা গদাইয়ের বাবা। তারপর থেকে জমিতে ধান কেটে এবং কয়েকটা বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে নিজের ও তার বোনের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
শুধু তাই নয় মা মৃদুলা ঘোষকেও করতে হয় প্রচুর পরিশ্রম। তাঁর কথায়, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় আমাদের সংসারে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৃদুলাদেবী অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের হেল্পার বা সহায়িকা কর্মী। গদাই বলেন, এমন দিন গেছে যখন একবেলা ভাত খেয়ে বাকি সময় পানীয় জলের উপর নির্ভর করে জীবনধারণ করতে হয়েছে। বর্তমানে মাত্র সতেরো কাঠা জমি গদাই নিজেই চাষ করেন। তার লভ্যাংশ থেকেই চলছে উচ্চশিক্ষার খরচ। স্থানীয়রা বলেন, ভোর চারটেয় দিন শুরু হয় গদাইয়ের। ভোরে উঠেই জমিতে ফসল পরিচর্যা করার পর বাড়িতে ফিরে এসে প্রাইভেট টিউশানি করেন গদাই। তারপর মানকর বি.এড কলেজে রওনা হওয়া। কলেজ থেকে ফিরে আবার টিউশানি । এই টিউশানিতে এমন অনেক ছাত্র রয়েছে যারা নিয়মিত মাসোহারাটুকু দিতে অক্ষম। গদাই বলেন, আমি নিজেই কষ্ট করে পড়ছি। তাই দারিদ্র্যতার জন্য কেউ মাইনে দিতে না পারলে আমি কিছু বলিনা। মহাবিদ্যালয়ে সহপাঠী বন্ধু তরুণ আঁড়ি বলেন, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে গদাই যেভাবে সাফল্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। স্থানীয় পূর্বতন গ্রন্থাগারিক প্রিয় মুখার্জী ও শিক্ষক সুশান্ত বড়াট পড়াশুনোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সাহায্য করেছিলেন গদাইকে । গদাই বলেন, সেই স্কুলজীবন থেকেই শ্রমিক হিসাবে জমিতে কাজ করছেন তিনি । লেখাপড়ার পাশাপাশি মাটির সাথেই সখ্যতা আর তাই দিয়ে উপার্জন। ধান চাষ করে এবারে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হয়েছে । কারন গত বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ধানের। চাষে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলত দুই ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ। অবশিষ্ট টাকা থাকলে মাকে তুলে দেওয়া। সম্প্রতি বোনের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু গদাই-এর লক্ষ্য কি? তা নিয়ে বলেন, সরকারী চাকরী করে গ্রামের মানুষের সেবা করা। অর্থের অভাবে যাদের পড়াশুনো সম্পূর্ণ হয় না তাদের পাশে থাকা ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584