সুদীপ কুমার খাঁড়া, মেদিনীপুরঃ
উচ্চাঙ্গ সংগীতের সুরের অণুরণন, কবিতার ছন্দ, আর নৃত্যের তালে মুগ্ধ হলেন মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরের দর্শকরা। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তির সমন্বয়ে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করলেন মেদিনীপুরের দর্শকরা।শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরের অন্যতম সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘পরম্পরা বিষ্ণুপুর গীতমন্দির’ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো রবীন্দ্র- নজরুল সন্ধ্যা।
বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. শ্রুতিনাথ চক্রবর্তী। সভায় সভাপতিত্ব করেন গীতমন্দিরের পক্ষে সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ।
উভয় কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষয়িত্রী তথা ব্যবস্থাপক সুমিতা মুখোপাধ্যায়। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এক দুরন্ত কোলাজ উপহার দেন গীতমন্দিরের কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বড়োরা।
আরও পড়ুনঃ বাঙালির দুই প্রাণের কবির স্মরণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
উদ্বোধনী সঙ্গীত “ধ্বনিল আহ্বান,মধুর গম্ভীর প্রভাত অম্বর মাঝে”-এর মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠানের সুরটি বেঁধে দেন “গীতমন্দির”-এর কলাকুশলীরা। কবিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে অভ্রদীপ হাজরা ও তানিশা দে দ্বৈতকন্ঠে পরিবেশন করেন সঙ্গীত “অঞ্জলী লহ মোর সঙ্গীতে”।
এই গানের তালে তপস্বিনী ভট্টাচার্যের অসাধারণ নৃত্য গানটিকে শ্রুতিমধুর ও মনোজ্ঞ করে তোলে। সুললিত ও পরিশীলিত কন্ঠে মনীষিতা বোস এবং দুরন্ত নৃত্যে তপস্বিনী ভট্টাচার্য্য যুগলবন্দীতে উপস্থাপন করেন বিখ্যাত সঙ্গীত “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি”।এই গানটির একটি অংশে সঙ্গীতগুরু সুকান্ত মুখ্যপাধ্যায় সংযোজিত “মিঞাকী মলহার” রাগ এক অন্য মাত্রা যোগ করে। সমবেত ভাবে ” দূর দ্বীপবাসিনী ” গানটি হৃদয়গ্রাহী রূপে উপস্থাপন করে কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল নৃত্যালেখ্য “হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনাতে নজরুল”।অমিতেশ চৌধুরীর ভাবনায় উভয় কবির রচনায় প্রেম-বিরহ নিয়ে কথা, কবিতায়, সঙ্গীতে ,নৃত্যে এই নৃত্যালেক্ষ্যটি উপস্থাপন করেন গীতমন্দিরের শিল্পীরা।
এই নৃত্যালেখ্যে নজরুল সঙ্গীত “কোন মেঘের ছায়া,আজি চাঁদের চোখে” গানটিতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সুকান্ত মুখোপাধ্যায়ের দরবারী কানাড়া রাগের গভীর,সুললিত বিস্তার ও দুটি অসাধারণ বন্দীসের মেলবন্ধন গানটিতে এক অনন্য মাত্রা সংযোজন করে এবং উপস্থিত সকলকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে।
অতিথি শিল্পী হিসেবে আবৃত্তি পরিবেশন করেন মেদিনীপুরের খুদে প্রতিভা অনুভব পাল ।অতিথি শিল্পী হিসেবে তপস্বিনী ভট্টাচার্য, দেবলীনা রায়, পূজা রায়,নেহা দাস,সম্পূর্ণা গাঙ্গুলীদের নৃত্য অনুষ্ঠানটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
এদিন নিজ নিজ সঙ্গীতের মাধ্যমে দর্শকদের নজর কাড়েন বিপাশা দে মজুমদার,বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী অন্তরা চক্রবর্তী,সুমনা রায় সৌমেন মজুমদার ,সঞ্চিতা পাল, বাবাই বিশ্বাস ,সুদীপ্ত ভৌমিক, অরুপ মাহাত, সুচরিতা গিরি, সুদীপ্তা মন্ডল, অর্ণব মাইতি ,অনীশ চৌধুরী সৌমিক দাস ,অনন্যা পাল,নীলাঞ্জনা পান, ধ্রুবরাজ দত্ত, অমর্ত্য ভৌমিক,বদ্রীয়া চক্রবর্তী, দেবাঞ্জনা পান, সোমরূপ গুঁইন, ঈপ্সিতা মিশ্র, সোমদত্তা দে, শাওন দিন্দা সহ অন্যান্যরা।গোটা অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন অমিতেশ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে তোলে তবলায় জয়ন্ত কুমার মাইতি, হারমোনিয়ামে মহুয়া হাজরা,সিন্থেসাইজারে শঙ্খদীপ জানা,অক্টোপ্যাডে ভবতারণ সিংহদের সুযোগ্য সহযোগিতা। সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংস্থার কর্ণধার সুকান্ত মুখোপাধ্যায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী আচার্য কালিদাস গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত “গীতমন্দির” অতীত দিনের মতো আগামী দিনেও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ধারাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। সুকান্তবাবু আরও জানান তিনি নিজেও এখনো উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিয়ে চলেছেন বিখ্যাত সঙ্গীত গুরুদের কাছে এবং তিনি তাঁর বিভিন্ন সময়ের বিখ্যাত গুরুদেব পন্ডিত কমল বন্দ্যোপাধ্যায়,ওস্তাদ মাসকুর আলি খাঁ, পন্ডিত সমরেশ চৌধুরী, কৈবল্য কুমার গৌরব, পন্ডিত বিদ্যাধর ব্যাসদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা গীতমন্দিরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন।
উল্লেখ্য গীতমন্দিরের ছাত্র অভ্রদীপ হাজরা এবারের স্টার জলসার জুনিয়র ট্যালেন্ট হান্টের অন্যতম প্রতিযোগী হিসেবে পারফর্ম করছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584