নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
এ মাসের বিদ্যুৎ বিলটা হাতে পেয়ে নিশ্চয়ই আপনার চোখ কপালে উঠেছিল? না, না, শুধু আপনি নন, এ মাসের বিদ্যুৎ বিল দেখে হতবাক হয়েছেন ক্ষোদ বিদ্যুৎমন্ত্রীও। আমপানের পর কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলি অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে এক সময়ে নবান্নে বসে সিইএসসি-র সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বিষয়ে মানুষের অসন্তোষ আঁচ করতে তাঁর দেরি হয়নি। আমপান পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপদার্থতার পর এবার গ্রাহকদের বাড়িতে মর্জি মতো বিদ্যুতের বিল পাঠানোর অভিযোগ উঠল সিইএসসি-র বিরুদ্ধে।
কলকাতা শহর ও শহরতলির বহু মানুষের অভিযোগ, এই মাসে অস্বাভাবিক বিল পাঠিয়েছে সিইএসসি। এমনকী রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরাও পার পাননি। সিইএসসি-র বিদ্যুতের বিলের কোপে পড়েছেন খোদ রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বাড়িতেই ১১,০০০ টাকার বিল পাঠাল সিইএসসি!
বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুৎ প্রদানকারী সংস্থা হয়তো গত দু’মাস রিডিং নেয়নি। কিন্তু ১১,০০০ টাকা বিল আসার পর আমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাই। এটা অস্বাভাবিক এবং মাত্রাতিরিক্ত। বছরের এই সময় আমার সাধারণত ৭,০০০ টাকার মতো বিল হয়।”
আরও পড়ুনঃ রবিবার থেকে লকডাউন কড়া হচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুরে
অর্থাৎ বিদ্যুৎমন্ত্রীর বাড়িতে স্বাভাবিকের থেকে ৫৭ শতাংশের বেশি বিল পাঠিয়েছে সিইএসসি। অনেকের ক্ষেত্রে তো আবার স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণের বেশি বিল এসেছে বলে অভিযোগ। সিইএসসি-র গ্রাহকদের দাবি, “জীবদ্দশায় এমন বিল আসেনি কোনওদিন। একে লকডাউনে নেই কাজ, তার ওপর হাজার হাজার টাকা বিল মেটাবো কোথা থেকে?”
বৃহস্পতিবার শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সম্প্রতি কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন বাড়িতে যে বিল পাঠাচ্ছে তাতে মানুষের মনের মধ্যে ভীষণ ভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিল বেশি হওয়ার জন্য আমার বাড়িতে সকালের দিকে লাইন দিয়ে লোক আসছেন। অসংখ্য মেল আসছে আমার কাছে। অনেকে ফোন করে জানতে চাইছেন যে তাঁরা কী করবেন এই অবস্থায়। অস্বাভাবিক বিল আসার খবর পাওয়ার পরে আমি সিইএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করি।”
আরও পড়ুনঃ ১০ অগস্ট থেকে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু অনলাইনে, ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর
এদিন তিনি আরও বলেন যে, বহুজনকে তিনি সিইএসসি অফিসেও পাঠিয়েছেন। কেন এত বিল এসেছে সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা করে দিতে বলেছেন সিইএসসিকে। সিইএসসি বিল বেশি হওয়ার যে কারণ ব্যাখ্যা করেছে তাতে যাঁরা সন্তুষ্ট হয়েছেন তাঁরা মেনে নিয়েছেন। আর যাঁরা সন্তুষ্ট হননি তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বাড়িতে অসংখ্য মানুষ অভিযোগ নিয়ে আসায় ফের তিনি সিইএসসিতে ফোন করেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।শোভনদেববাবু বলেন, “আমি সিইএসসিকে বলেছি যেন অতি অবশ্যই আগামী কালের মধ্যে সংবাদপত্রে তারা বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করে একটি বিজ্ঞাপন দেয় যাতে মানুষের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।”
আরও পড়ুনঃ ভার্চুয়াল সভা হলে আকাশ ভেঙে পড়ত না, রাজ্যপালের পক্ষে সওয়াল অধীরের
এরপরই শুক্রবার সিইএসসি-র তরফে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, লকডাউনের জেরে মার্চ থেকে বিদ্যুতের মিটার রিডিং নেওয়া বন্ধ ছিল। যার ফলে এপ্রিল ও মে মাসে অনুমানের ভিত্তিতে বাৎসরিক গড় বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিরিখে বিল পাঠিয়েছে সিইএসসি। জুন থেকে ফের শুরু হয়েছে বিদ্যুতের মিটারের রিডিং সংগ্রহের প্রক্রিয়া। ফলে বাড়তি ইউনিটগুলি বিলে যুক্ত হয়েছে।
সিইএসসি-র এক আধিকারিক জানান, ‘নির্দিষ্ট নির্দেশিকার ভিত্তিতে আমরা প্রাথমিকভাবে কম বিল পাঠিয়েছিলাম। গত ছ’মাসের বিলের উপর নির্ভর করে তা তৈরি করা হয়েছিল। গরম কালে মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি থাকে। ফলে এপ্রিল ও মে মাসের যে আনুমানিক বিল পাঠানো হয়েছিল বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে তার থেকে বেশি। জুনে সেই হিসাব মেলাতে গিয়ে অনেককে ইউনিট পিছু দাম বেশি দিতে হচ্ছে। যার ফলে বিল অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584