পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
নবান্ন থেকে ফাইল সঙ্গে নিয়েই গিয়েছিলেন। বীরভূম জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে সেই ফাইল খুলে জেলার পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের থেকে পথ দুর্ঘটনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কৈফিয়ৎ চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ নিয়ে জেলার পুলিশ কর্তাদের ধমকও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।সেই সঙ্গে বাতলে দিলেন,পথ দুর্ঘটনা রোখার সহজ উপায়। মোবাইল হাতে গাড়ি বা মোটর সাইকেল চালাতে দেখলেই, টেনে নামিয়ে কান ধরে ওঠ -বোস করাতে পুলিশকে দাওয়াই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষগৃহে জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিং-কে বলেন, “এই জেলায় এত অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে কী করে? ১৬-১৭ সালে কমেছিল। ১৭-১৮’তে আবার সেটা বেড়ে গিয়েছে। কেন হচ্ছে? আপনারা দেখছেন না ঠিক করে? আমি জানি তারাপীঠ থেকে ফেরার সময় বহু দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টায় কেয়ার নিন। অনেক সময় তো পুলিশকেও মেরে দেয়।”
এরপরই মমতা বলেন, “অনেক সময় খালাসিরা গাড়ি চালায়। অভিযান চালিয়ে ধরুন। চারটেকে জেলে ভরলেই দেখবেন কমে গিয়েছে।” মোবাইল হাতে গাড়ি বা মোটর সাইকেল চালিয়ে দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এ প্রসঙ্গে দিদি বলেন, “সবসময় কঠিন পদক্ষেপ কেন নেবেন? কিছু কিছু সহজ পদ্ধতিও তো আছে নাকি! মোবাইল হাতে ড্রাইভ করলেই টেনে নামান। এই ঠাণ্ডায় কান ধরে ওঠ-বোস করালেই দেখবেন সোজা হয়ে যাবে।” বীরভূমের প্রসঙ্গে বললেও, এই শাস্তি যে গোটা রাজ্যেই প্রযোজ্য হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জেলার সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধিকে দাঁড় করিয়ে দিদি প্রশ্ন করেন,“খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আপনাদের কী অভিজ্ঞতা বলুন তো?” জবাবে ওই সাংবাদিক বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকরা থাকেন মদ্যপ এবং গতি থাকে অত্যধিক।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “স্পিড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবস্থা নিন।” রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ পরামর্শের সুরে জেলার পুলিশ প্রশাসনকে বলেন, “ধাবাগুলিতে নজরদারি বাড়াতে হবে। ঘুমিয়ে থাকলে জল ছিটিয়ে জাগানোর কাজ চালিয়ে যান।” প্রসঙ্গত, বীরভূমের পুলিশ প্রশাসন এই অভিযান প্রায়ই করে থাকে। মদ্যপ অবস্থায় কেউ ঘুমিয়ে থাকলে, তার গায়ে জল ঢেলে ঘুম ভাঙায়। এই কথা শুনেই হেসে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “বাইরে থেকে পেট ভরে খেয়ে আসছে, আর আপনারা জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন!”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার পরই পথ দুর্ঘটনা রুখতে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প নিয়েছিলেন। বহু টাকা খরচ করে এর বিজ্ঞাপন করেছেন। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের যে গান সিগন্যালে সিগন্যালে বাজে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীরই লেখা। বছর দেড়েক আগে তো নবান্ন থেকে সার্কুলার জারি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের সমস্ত পেট্রল পাম্পে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, হেলমেট না থাকলে যেন পাম্প থেকে তেল না দেওয়া হয়। এত কিছু করার পরও যদি কোনও জেলায় দুর্ঘটনা বাড়ে, রাগ তো হবেই।
আরও পড়ুনঃ বালি খাদান বন্ধের দাবিতে কোতোয়ালি থানা ঘেরাও
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584