তপন চক্রবর্তী,উত্তর দিনাজপুরঃ
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর জয়ের পশ্চাতে শুধুমাত্র সিপিআইএম কংগ্রেসের বিরাট অংশের ভোট পেয়েছেন তাই নয়।দেবশ্রীর জয়ের পেছনে বিশাল ভাবে কাজ করেছে তৃণমূল দলের লাগাম ছাড়া সমর্থকদের বিশাল অঙ্কের ভোট।
কারন হিসাবে নাম প্রকাশে অনেক তৃণমূলের সমর্থক থেকে মাঝারি নেতারা বলছেন তারা তাদের নেত্রীর রুচিহীন কথাবার্তার কারনে বিবেকের তাড়নায় বিজেপিকে ভোট দিতে বাধ্য করিয়েছেন।তারা চিন্তা করেছেন তারা যে দলের সমর্থক সেই দলের একজন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা এত নিম্ন মানের হতে পারে তা ভাবনার বাইরে ছিল।
নির্বাচনী প্রচারের কয়েকটা দিন তাদের নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কে মানুষ যেভাবে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল সেই সমালোচনা একদম সঠিক বলেই তারা মনে করেছিল।তাদের সমালোচনাকে তারাও সমর্থন করেই মুখ্যমন্ত্রীর উপর রাগে অভিমানে তারা তাদের ভোট বিজেপিকে দিয়েছিল।একজন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লাগামহীন ভাষায় যেভাবে তুই তুকারি করে সম্বোধন,গালে কষে থাপ্পড়,কান ধরে উঠবোস,এক্সপেয়ারি প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন এসব কথা একজন তৃণমূলের কট্টর সমর্থক হয়েও মেনে নিতে পারিনি।তাই নিঃশব্দে অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ বিজেপিকে ভোট দিয়েছি।এটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে কিছু করার নেই।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যের সর্বত্র যে ভাবে উন্নয়ন করেছে আমরা সবসময় গর্ব করে বলে আসছি,তার প্রচার করেছি।আমাদের হারবার কোন কারন ছিলনা।কিন্তু সমস্ত উন্নয়নে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জল ঢেলে দিয়েছেন বলে জানায়।শুধু রায়গঞ্জ কেন কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, বালুরঘাট, মালদা উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই একটা কারণই তৃণমূলের হার হয়েছে বলে জানান।
তৃণমূলের রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের অনেক তৃণমূল সমর্থক বলেন আমাদের সরকার যত উন্নয়ন মূলক কাজ করেছে মানুষ এমনিতেই তৃণমূল দলকে ভোট দিত।কিন্তু আমাদের দিদি নিজেই সেই রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষ ও নিজের দলের সবাইকে ক্ষুব্ধ করে তোলার কারণেই রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের এই ফল আমাদের হয়েছে।সাধারণ মানুষের কোন দোষ নেই।
শনিবার রাজ্যের তৃণমূল নেত্রী তার কালীঘাটের বাড়িতে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের রাজ্যের ১৮টি আসনের ধ্বসের কারন নিয়ে আলোচনার জন্য তৃণমূলের নেতৃত্ব সহ সবাইকে ডেকেছেন।কিন্তু রাজ্যের তৃণমূল নেত্রী এই দলীয় বিপর্যয়ের কারন সব নেতাদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।আসলে কথায় আছে মরতে মর শানাইদার।এই ঘটনায় ঘটবে বলে তৃণমূলের অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে।কিন্তু সেখানে এসব হজম করে ছাড়া কারো এমন সাহস নেই যে দিদির সামনে রাজ্যে তৃণমূলের হারের আসল কারনকেও ব্যাখ্যা করে বলতে পারে।কারন বিড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাঁধবে?কার এমন সেই সাহস আছে যে নেত্রীর সামনে হারের আসল কারন তুলে ধরবে?কিন্তু হারের আসল কারন নিয়ে আলোচনার এটাই প্ৰকৃত সন্ধিক্ষন ছিল বলে অনেক তৃণমূল নেতাই মনে করেও তারা সব কিছু হজম করেই ঘরে ফিরে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।অনেক কেই বলতে শোনা গেল আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের চিনতে ভুল করেছেন যাদের নিয়ে তিনি ফেডারেল ফ্রন্ট তৈরি করবার চেষ্টা করে ছিলেন।কারা ছিল তার ফেডারেল ফ্রন্টে। যাদের ২৫টি আসন জিতবার ক্ষমতা নেই একক ভাবে।উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী দল,মায়াবতীর দল মিলে যারা ১৫টি আসন পায় তাদের নিয়ে দিদি মোদী বিরোধিতায় এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তাতে মনে হয়েছিল এবার বুঝি দিদি সত্যি সত্যিই একটা কিছু করে বসবেই।অনেকের ধারণা ছিল এবার হাঙ পার্লামেন্ট হচ্ছেই আর আমাদের বাংলার দিদি প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে আসছেন ই।
আরও পড়ুনঃ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপির বিজয় মিছিলে
অনেককেই বলতে শোনা গেছে দিদি এবারের নির্বাচনে রাজ্যের উন্নয়নের কথার চেয়ে দেশের সমস্যার সমাধান গদিতে বসলে করবেন সেই ব্যাপারেই বেশি প্রচার করেছেন।ভারতবর্ষের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে সর্বভারতীয় স্তরে দলের আসন সংখ্যা পাবার মত ক্ষমতা থাকতে হবে।যে যোগ্যতা বিজেপি দেশের মানুষদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন তিনি সেই দলের নেতা যে দল এককভাবে আসন পায় ৩০০র বেশি।দেশের মানুষ যে জনাদেশ দিয়েছেন তা ভারতবর্ষের মত দেশের পক্ষে একদম সঠিক বলেই মনে করছে উত্তর দিনাজপুর জেলার মানুষেরাও।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584