কোভিড পরবর্তী দ্বিতীয় প্রশাসনিক বৈঠকেও দরাজ মুখ্যমন্ত্রী

0
70

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতির জন্য ওই প্রশাসনিক বৈঠকের ১৩০ জন উপস্থিত ছিলেন।

Mamta Banerjee | newsfront.co
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

ভার্চুয়াল উপস্থিতির ব্যবস্থা করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন এবং কোথায় কি কাজ হয়েছে তা বিস্তারিত ভাবে জেলাশাসক রেশমি কমলের কাছে জানেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বহুবার বলেছি তা সত্ত্বেও কেন্দ্র সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন করেনি। একই সাথে তিনি বলেন, রাজ্য সরকার গরিব হতে পারে তবে ঘাটাল দাসপুর এলাকার মানুষকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হবে।

আরও পড়ুনঃ ঝাড়গ্রাম পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তবে ধীরে ধীরে হবে এবং ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে যাবে। আগামী দিনে ঘাটালের মানুষ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমাদের হাতে অর্থ নেই তাই যেটুকু পারি সেটুকু দিয়ে ধীরে ধীরে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করব।

তিনি আরও বলেন, ঘাটাল দাসপুর এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘাটাল দাসপুর চন্দ্রকোনা ফিরে এসেছেন তারা ওই ক্লাস্টারে কাজ করতে পারবে যারা বেশিরভাগই ছিলেন স্বর্ণশিল্পী।

আরও পড়ুনঃ আগামীকাল থেকে চালু হচ্ছে পুরী-আনন্দবিহার ভায়া আদ্রা স্পেশাল ট্রেন

সেই সঙ্গে তিনি বলেন রাস্তা তৈরিতে যেন কোন স্বজনপোষণ করা চলবে না। রাস্তা তৈরির কাজ করতে হবে। আদিবাসীদের শিক্ষার স্কিম যেন পড়ে না থাকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তিনি বলেন রাজ্যের চামড়ার ইন্ডাস্ট্রিতে পাঁচ লক্ষ মানুষ কাজ করছে। হাওড়াতে ক্লাস্টার তৈরি করা হয়েছে সেখানে তিন লক্ষ মানুষের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তা তৈরিতে বাংলা এক নম্বরে রয়েছে।

আমি প্রথমে আমলাশোল সব থেকে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করি ১৬ হাজার কিলোমিটার। তারপর ভাঙ্গড় থেকে ২৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করি। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে ৯২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ জনপ্রতিনিধিদের ঝুলে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পতির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

গত ৮ বছরে ৩ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করার জন্য পথ শ্রী অভিযান প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। আয়ুষ্মান প্রকল্প আমার কোনো বাধা নেই। আয়ুষ্মান প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ রাজ্যকে দিতে হয় ৪০ শতাংশ।

আমি তো স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প করেছি ১০০ শতাংশ দিয়ে। তাই কেউ প্রকল্প চালু করতে চাইলে করবে। ওরা দেবে মাত্র দেড় কোটি মানুষকে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পৌঁছে দিয়েছি।

সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়টিও তিনি এদিন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৭০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছিল তাদের মধ্যে ১০০ দিনের প্রকল্পে ২০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। করোনা পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০০দিনের প্রকল্পের কাজ ভালো হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুনঃ হাতির হামলায় কেউ মারা গেলে পরিবারের একজনকে চাকরি, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

উন্নয়নের ব্যাপারে কোনো ত্রুটি রাখা চলবে না বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন মহাশ্বেতা দেবী লোধা শবরদের উন্নয়নে কাজ করতেন। তাঁর অবর্তমানে আমার একটা দায়িত্ব থাকে তাই আমি লোধা শবরদের উন্নয়নে কোন ত্রুটি দেখতে চাই না। সেইসঙ্গে জঙ্গলমহলে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ৪,২৮৪ জন জুনিয়ার কনস্টেবলের পদোন্নতি হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সেই সঙ্গে তিনি বলেন আদিবাসীদের স্কুলের জন্য যে সমস্যাগুলি রয়েছে সেই সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করতে হবে। তিনি পুলিশ সুপারকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি ভালো করে দেখার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের পীঠস্থান মেদিনীপুরের উন্নয়নে কোন ত্রুটি রাখা চলবেনা।

বাংলা সহায়তা প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৫৭টি সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। তিনি বলেন তার কাছে ৬২ হাজার ৮০৩ টি অভিযোগ পড়েছিল তারমধ্যে ৬২ হাজার ৫২টি অভিযোগের সমাধান হয়েছে। বাকিগুলোর তিনি সমাধানের আশ্বাস দেন।

তিনি বিভিন্ন বিষয় বিধায়কদের কাছে জানতে চান তাদের এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম নিয়ে। তিনি আরও বলেন যে কোথাও যদি কোনো সমস্যা হয় বিডিও জেলাশাসকের সাথে কথা বলে সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। উন্নয়নে কোনরকম ফাঁকি দেওয়া চলবে না।

কিষান ক্রেডিট কার্ড তিনি বলেন ব্যাংকগুলির সাথে কথা বলে কিষান ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন আমি মানবিক তাই রাজনীতির উর্ধ্বে কাজ করি মানুষের বড় পরিচয় হল মনুষ্যত্ব। তাই আমি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলতে চাইনা।

রাজনীতিকে সরিয়ে রেখে আমি কাজ করছি, আগামীদিনেও করবো। মেদিনীপুর খড়্গপুরের মাঝে একটি অডিটরিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খড়্গপুর শিল্প তালুকের জন্য ৫০০ কোটি টাকা তিনি ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন যে, মানুষ যদি কাজ পেয়ে খুশি হয়। তাই মানুষের পাশে থেকে মানুষের উন্নয়নে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থেকে বিডিও জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার-সহ আধিকারিকদের কাজ করার নির্দেশ দেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here