শুভম বন্দোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী যে একাধিক শিল্প সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করবেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা গুলির মধ্যে মেদিনীপুরকে বিশেষ গুরুত্ব দিলেন তিনি। এর আগেও দীঘায় উন্নয়ন সংক্রান্ত একাধিক ঘোষণা তিনি করেছেন।
আর এবার তাজপুর বন্দরে কোন জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গভীর সমুদ্র বন্দর করার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। হলদিয়া বন্দরের পর এই গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে বিদেশের একাধিক বন্দরের সাথে বাণিজ্যে সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ২৫০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
তাজপুর সমুদ্র বন্দর ছাড়াও সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, পানাগড়ে বিনিয়োগের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সিঙ্গুর রীতিমতো গলার কাঁটা প্রশাসনের। চেষ্টা করেও সিঙ্গুরে ফের শিল্প করা যায়নি কারণ কৃষি জমিতে শিল্প বিরোধিতা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সিঙ্গুরের কৃষিকেই প্রাধান্য দিলেন তিনি। সিঙ্গুরের জমিতে যে ফসল ফলবে, তার ওপর নির্ভর করে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করার কথা ঘোষণা করলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ বাংলাকে গুজরাট হতে দেব না- সঙ্গীত মেলার উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর
তবে তিনি মূল জোর দেন তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করার বিষয়ে । সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তাজপুরে বন্দর গড়তে ইওআই বা এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সোমবার অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর সেই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবে। রাজ্য সরকারের এই বন্দর গড়তে বিশ্ব ও দেশের বিভিন্ন বন্দর নির্মাণ সংস্থার কাছে আবেদন চাওয়া হবে। ৪২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প গড়তে কোনও জমি অধিগ্রহণ হবে না বলে আরও একবার জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাজপুরে রাজ্যের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে কমপক্ষে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, এই বন্দর তৈরি হয়ে গেলে মেদিনীপুরের সঙ্গে সরাসরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ তৈরি হবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁর এই ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তুলতে রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০ থেকে ৩০ কাঠা জমি নিয়ে আবেদনের ভিত্তিতে যে কোনও সংস্থা তা করতে পারবে । পাশাপাশি, সিলিকন ভ্যালিতে জমি দেওয়ার জন্য বিশেষ উইন্ডো খুলছে হিডকো-ও। বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ে নয়, সারা বছর ধরেই সিলিকন ভ্যালিতে জমি নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারবে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গুলি।
আরও পড়ুনঃ জিতেন্দ্র তিওয়ারির ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জল্পনা
একইসঙ্গে পানাগড়ের শিল্প পার্কে ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গড়ে উঠবে ফুড প্যাকিং শিল্প। সেখানে ৩৮ একর জমি নিয়েছে ধানুকা গ্রুপ। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে বিধানসভা ভোটের আগে ৪২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির ঘোষণা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584