তপন চক্রবর্তী,কালিয়াগঞ্জঃ
এক সময়কার মাঠ কাঁপানো ফুটবলার ছিলেন কুন্তল চক্রবর্তী।বর্তমানে ফুটবল খেলা থেকে বিদায় নিয়েছেন।এখন তিনি শিশুদের মধ্যে ফুটবলের নেশা তৈরী করার কাজে উদ্যোগী হয়েছেন।আর সেই কারণেই উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের ফুটবল কোচ কুন্তল চক্রবর্তীকে শুধু মাত্র শনিবার দিন বাদ দিয়ে সপ্তাহের ছয়টি দিনই রায়গঞ্জ স্টেডিয়াম মাঠে থাকেন।৪-১২বছরের শিশুদেরকে নিয়ে তিনি সকাল বিকাল ফুটবল প্রশিক্ষণের কাজে চরম ব্যাস্ততার মধ্যে কাটান।বৃহস্পতিবার বিকালে রায়গঞ্জ স্টেডিয়াম মাঠে ফুটবল কোচ কুন্তল চক্রবর্তীকে ক্ষুদে খেলোয়াড়দের নিয়ে ফুটবলের অ আ ক খ খ বোঝাতে দেখা গেল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্টেডিয়াম মাঠে গিয়ে কুন্তল বাবুকে প্রতিবেদকের পরিচয় দিতেই তিনি কিছুক্ষনের জন্য প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখেন।ফুটবল কোচ কুন্তল চক্রবর্তীকে প্রথম প্রশ্ন ছিল এই সমস্ত কচিকাঁচাদের নিয়ে এত অল্প বয়সে ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেবার আসল কারণ টা কি?এই প্রশ্নের উত্তরে কুন্তল বাবু একরকম পরিষ্কার করেই বললেন “আমাদের জেলা বা রাজ্যে যদি সত্যি সত্যি ভালো ফুটবল খেলোয়াড় আমরা তৈরী করতে চাই তাহলে আমরা যারা ফুটবল খেলার সাথে ওতোপ্রতভাবে যুক্ত আছি তাদেরকে একটা কথা মনে রাখতে হবে শিশুকালে যে কাজটা অতি সহজেই হতে পারে তা বয়স বেড়ে গেলে সেই কাজটা তেমনভাবে হয়না।কুন্তল বাবু বলেন এই শিশুদেরকে আমার ইচ্ছা মত তৈরী করতে পারবো।ঠিক যেমন মৃৎশিল্পীরা কাদামাটি দিয়ে নিজের ইচ্ছামত যে কোন মূর্তি গড়তে পারে।আমিও ঠিক আমাদের কোচিং ক্যাম্পের এই শিশুদের সেই ভাবেই প্রতিদিন ওদের সাথে খেলার ছলে ফুটবলকে ওদের মনের মধ্যে গেঁথে দিতে পারি সেই ভাবেই আমি আমার ছেলেদের ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি।”
ফুটবল কোচ কুন্তল বাবু বলেন উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ক্ষুদে ক্ষুদে বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দেবার কাজ করে চলেছেন।কুন্তল বাবু বলেন তাদের ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে প্রতিদিনগড়ে ৫০ জন অধিক শিশুরা আসে।তিনি বলেন তার সাথে সহ যোগী দুজন কোচ আছেন যাদের নাম সুরজিৎ ঘোষ এবং মনোতোষ সাহা।এই দুজন কোচ ছাড়া এতগুলো বাচ্চাদের একার পক্ষে কোনভাবেই সামাল দেওয়া সম্ভব ছিলনা।
এক প্রশ্নের উত্তরে কুন্তল বাবু জানান তাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোচিং ক্যাম্প থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ফুটবলার তৈরী করা গেছে যারা বর্তমানে কেউ স্যাই (বর্ধমান) কেউবা বেঙ্গল একাডেমি (সল্টলেক) কেউ এথলেটিকো ডি কোলকাতা একাডেমিতে ফুটবলের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।যারা প্রশিক্ষন নিচ্ছে তাদের মধ্যে প্রসেনজিৎ সাহা,ভি কি সিং,সৌমেন কুন্ডু,শম্ভু রায় অন্যতম।তিনি এদের জন্য গর্ব বোধ করেন।এরা সবাই একদিন এই রাজ্যের ফুটবল খেলায় বিশেষ জায়গা করে নেবেই বলেই তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।
ফুটবল কোচ কুন্তল চক্রবর্তী বলেন “ফুটবল খেলা ছেড়ে ফুটবলের কোচ হবার ক্ষেত্রে যিনি আমায় হাত ধরে নিয়ে এসে ছিলেন তিনি আমার ফুটবলের কোচের গুরু ও পথ প্রদর্শক বিশিষ্ট ফুটবল কোচ তুষার কান্তি রায়।তিনি বলেন আমার প্রথম জীবনে বিশিষ্ট ফুটবল কোচ তুষার কান্তি রায়ের কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে আমি যেমন ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম,তেমনি তুষার কান্তি রায়ের হাত ধরেই ফুটবল কোচ হবার সুযোগ পাই।ফুটবল কোচ কুন্তল বাবু বলেন “উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুদীপ বিশ্বাস যে ভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের ফুটবল কোচিং ক্যাম্প সুষ্ঠ ভাবে চলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে চলেছে তা আমাদের সবসময় উৎসাহ জুগিয়ে থাকে।”কথায় কথায় কুন্তল বাবু বলেন তিনি একসময় শ্যাম থাপা,পিকে ব্যানার্জী, অমল দত্ত এবং মেওয়া লালের কাছ থেকে ফুটবল কোচিং এর প্রশিক্ষণ নেবার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন।যা তার জীবনে সব থেকে বড় পাওনা বলা যেতে পারে।ফুটবল কোচের দায়িত্বে এর পূর্বে ছিলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন দপ্তরে,বীরনগর স্পোর্টস এসোসিয়েশনে,বিভিন্ন ক্লাবের কোচিংযে ক্যাম্পে।কুন্তল বাবু বলেন বর্তমানে তিনি রায়গঞ্জ সেন্ট জেভিয়ার্স বিদ্যালয়ের গেম টিচার হিসাবে কাজ করছেন।সেন্ট জেভিয়ার্স বিদ্যালয় পরপর তিনবার ফুটবলে জেলা চ্যাম্পিয়ান হয়।কুন্তল বাবু ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে উত্তরবঙ্গ একাদশের হয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়িতে খেলেছেন,অসমের গৌহাটি নবজ্যতি ক্লাব,শিলিগুড়ি রামকৃষ্ণ ক্লাব,উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন দপ্তর, রায়গঞ্জ স্পোর্টস ক্লাব,রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট ও মালদা রেলের হয়ে অনেকদিন খেলেছেন বলে জানান।এখন কুন্তল বাবুর একটাই ধ্যানজ্ঞান কি করে তার কোচিং কেন্দ্রে আসা শিশুদেরকে ভবিষ্যতের দক্ষ ফুটবলার হিসাবে গড়ে তুলে রাজ্যের ও জেলার সন্মান বৃদ্ধি করবেন,আর সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন এই কোচ।
আরও পড়ুনঃ পলতা রেলস্টেশন সংলগ্ন নবপল্লী সবুজ সংঘের পুজো
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584