‘গোলি মারো’ স্লোগানের বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঐক্য বাংলা’র

0
98

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ

কলকাতার বুকে কুখ্যাত ধর্মীয় বিভাজন মূলক “গোলি মারো” স্লোগান ওঠার কালো দিন – ১লা মার্চ ২০২০ – কে অন্ধকার নয় আলোর পথে এগোনোর সূচনা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা। ঐদিন নিজেদের ফেসবুক পেজ থেকে তারা ঘোষণা করে, পরবর্তী এক সপ্তাহ তারা ধর্মীয় বিভাজন হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করবে বাঙালি জাতির মধ্যে।

তার সূত্র ধরেই ১লা মার্চ থেকে ৮ই মার্চ – এই এক সপ্তাহ ধরে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সপ্তাহ’ পালন করল ‘ঐক্য বাংলা’। বাঙালি জাতির যে দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে তা বাঙ্গালী জনতার মধ্যে প্রচার করা ছিল এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য । এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে পথে-ঘাটে-রাস্তায়-চায়ের দোকানে – বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছে পৌঁছে যায় ‘ঐক্য বাংলা’। তারা মানুষের কাছে বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য সম্পর্কে তাঁদের মতামত জানতে চায়। তাদের সাথে খোলাখুলি আলোচনায় যায়, এবং তাঁদের কাছে বাংলার অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের কথা, লালন ফকির, কবি নজরুল রবীন্দ্রনাথের বলে যাওয়া সম্প্রীতির কথা পৌঁছে দেয়।

Oikko bangla

সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ঐক্য বাংলার’র সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র

এই সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় রবিবার , ৮ই মার্চ বিকেলে , কলকাতার রাণু ছায়া মঞ্চে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঐক্য বাংলার সদস্যরা ছাড়াও অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এর সামনে সম্মিলিত সাধারণ বাঙালি জনতা যোগদান এই অনুষ্ঠানে এবং আলোচনায়। ‘ঐক্য বাংলা’ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতি সুলগ্না দাশগুপ্ত মনে করিয়ে দেন বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের কথা । তাঁর কথায় , ” বাঙালি লালন ফকিরের রক্ত ধমনীতে বহন করে , যে লালন ফকির বলে গিয়েছেন ‘জাত গেল জাত গেল বলে এ কি আজব কারখানা’ , যে লালন ফকির জাত-ধর্মের উর্ধ্বে উঠে , ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে বাঙালিকে সাধনা ও মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।” বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, বাঙালি দাঙ্গা করে না, ভারতের দাঙ্গার ৮৫% র জন্য দায়ী মূলত গো বলয়ের রাজ্যগুলি। রাস্তায় মানুষের মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা র ভিত্তিতে তিনি শোনান চরম আশাপ্রদ বার্তা, ” বাঙালি সত্যিই অসাম্প্রদায়িক। যতজন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা একজন মানুষের কাছ থেকেও কোনো সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য পাইনি আমরা।” তিনি আরো জানান বাঙালি অসাম্প্রদায়িক এটা সত্যি হলেও, বেশিরভাগ বাঙালি বর্তমানে মোটেই খুশি নয় রাজ্য এবং গোটা ভারতবর্ষে যেভাবে ধর্মীয় বিভাজন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তা নিয়ে। অধিকাংশ বাঙালিই মনে করছেন সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হচ্ছে এবং কয়েক দশক আগেও বাংলার পরিবেশ ও বাতাবরণ অনেক বেশি সম্প্রীতিমূলক ছিল।

সুলগ্না দেবী আরও জানান , “ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের মূল নীতিগুলির একটি , কিন্তু মানুষের মধ্যে এমন ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাঙালি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মূলক কথা জনসমক্ষে বলতে ভয় পাচ্ছেন, ‘সংখ্যালঘু তোষণকারী’ তকমা পেয়ে যাবার আশংকায়।” তিনি আপামর বাঙালিকে আহ্বান জানান এই ঘৃণার চক্রান্ত রুখে দিতে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সৌম্য চৌধুরী। তিনি বলেন , ” বাঙালি আজ শুভ দোলযাত্রা না বলে হ্যাপি হোলি বলছে।” এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বাংলায় অনুপ্রবেশ ঘটছে ঠিকই তবে সেটা বাংলা ভাষার ওপর , বাঙালির ওপর হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের, হিন্দি ভাষার ও অন্য রাজ্যের সংস্কৃতির।” দেবায়ন সিংহের গলায় ও ফুটে ওঠে সেই হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের তৈরি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের আগ্ৰাসনের কথা। তাঁর কথায়, “বাংলায় কথা বললেই আজ সমগ্ৰ ভারতবর্ষে বাঙালিকে বাংলাদেশি দাগিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে যা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত।” তবে দেবায়ন ব্যাপারটার মধ্যে ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন কারণ তাঁর মতে, “হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাঙালি জাতিকে ভয় পায় কারণ তারা জানে এই শক্তির কোমর ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র বাঙালি জাতিরই রয়েছে।”

অভিজ্ঞান সাহার গলায় ফুটে ওঠে ক্ষোভের আগুন। তিনি বলেন , ” অনান্য রাজ্যে‌ সেখানকার ভূমিপুত্র ও প্রধান সরকারি ভাষার সর্বোচ্চ স্থান আছে , তাহলে বাংলায় তার ব্যতিক্রম হবে কেন ?” তিনি পরিষ্কার বলেন ,” বাংলায় বাঙালি তথা বাংলার ভূমিপুত্রদের সর্বোচ্চ অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে অনান্য রাজ্যের মত ।”

সাম্প্রতিক কালে ভারতের সর্বত্রই সাম্প্রদায়িক হিংসাত্মক ঘটনা ক্ষেত্রে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমের একটা ধ্বংসাত্মক ভূমিকা থেকেছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ঐক্যযোদ্ধা রাজিত বাগ বাঙালি জাতির কাছে আবেদন করেন যাতে যাচাই না করে কেউ কোনো রকম উস্কানিমূলক ভিডিও বা লেখা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে। তিনি আরো বলেন , ” ভুয়ো ভিডিও আর ছবির মাধ্যমেই ইচ্ছাকৃত ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয় । এই ফাঁদে পা না দিলে সাম্প্রদায়িক শক্তির চক্রান্ত অনেকাংশেই ব্যর্থ হবে। ”

বলা যেতে পারে “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সপ্তাহ” একটি অভিনব প্রয়াস, কারণ এখন পর্যন্ত ঐক্য বাংলাই একমাত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে এই ধরনের কর্মসূচি পালন করলো। কেন এরকম অন্যরকম কর্মকাণ্ডের ভাবনা? এই প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতি সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান, “আমরা নিজেরা নয়, বাঙালি জনগণ থাকুক ঐক্য বাংলা সংগঠনের প্রত্যেক চিন্তা, সিদ্ধান্ত, এবং কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে – এটুকু আমরা সুনিশ্চিত করব, এটা আমাদের প্রথম ও শেষ প্রতিজ্ঞা।”

মাত্র এক মাসেরও কম বয়স ঐক্য বাংলা সংগঠনটির। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? সুলগ্না জানান এই ধরণের জনসচেতনতামূলক এবং জনসংযোগ মূলক কর্মসূচি ভবিষ্যতেও পালন করবে ঐক্য বাংলা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here