নকল করে ডি লিট উপাধি নেওয়ার অভিযোগ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে 

0
570

নিজস্ব প্রতিনিধি, কল্যাণী, নদীয়া:- ছাত্রছাত্রীদের লেখা টুকেই ডি লিট ডিগ্রি হাসিল করেছেন বলে অভিযোগ কল‍্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে । তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক তথা তৃমূল কংগ্রেস অফিসার এ্যাশোসিয়ান সংগঠনের সম্পাদক বিমলেন্দু বিশ্বাস ও উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষের অতি কাছের মানুষ হওয়ায় হাজার অপরাধ করেও তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। একটার পর একটা অভিযোগ জমা পড়লেও তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্ত্তৃপক্ষ কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

অভিযুক্ত তপন বাবু রাজ‍্যপালের সঙ্গে

এক ছাত্রীকে যৌন্য হেনস্থা করার অভিযোগও জমা পড়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি ডিন পদে বসেও না কি টোল খুলে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশানি দিতেন নিজের বাড়িতে এই বিষয় নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ায় শোরগোল পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

এখন তার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে আর এক অভিযোগ।ছাত্রছাত্রীদের লেখা টুকেই ডি লিট ডিগ্রি হাসিল করেছেন তিনি। শুধু ছাত্রছাত্রী নয় তার সহকর্মীর বই থেকেও নাকি হুবহু টুকে দিয়েছেন অধ্যাপক তপন কুমার বিশ্বাস। এমনটাই অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা দফতরে।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ আচার্য, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছেও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ও কমার্স বিভাগের ডিন তপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে। অভিযোগ জানিয়েছেন তার সহকর্মী অধ্যাপক সুজয় কুমার মণ্ডল। তাঁর বই থেকেও নাকি হুবাহু নকল করেছেন তিনি।

চলতি মাসের ২২ তারিখ রাজ্যপালকে জানানো চিঠিতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজয় কুমার মন্ডল অভিযোগ জানিয়েছেন, তপন কুমার বিশ্বাসকে ২০১২ সালে ডি লিট দেওয়া হয়েছিল ‘নদিয়া জেলার লোকসংস্কৃতির পরিচয় এবং সমাজ বিকাশে তার ভূমিকা’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের জন্য।
সুজয় কুমার মন্ডলের দাবি, তিনি সেই গবেষণাপত্র একাধিক বার খুঁটিয়ে পড়েছেন। তার একাধিক অংশ বিভিন্ন বই থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। কিন্তু মূল লেখার উল্লেখ না করে তপন কুমার বিশ্বাস নাকি প্রতিটি অংশই নিজের বলে দাবি করেছেন। চিঠিতে সুজয় কুমার বিশ্বাস লিখেছেন, “তপনকুমার বিশ্বাসের গবেষণাপত্রের ৬৪০ থেকে ৬৪৮ পৃষ্ঠার সব ক’টি অনুচ্ছেদই ২০০৬ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েরই স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্রী শিউলি ভৌমিকের জমা দেওয়া ডিসার্টেসন পেপার ‘নদিয়া জেলার পর্যটনের সঙ্গে লোক সংস্কৃতির সম্পর্ক’ থেকে নকল করা।” শুধু তাই নয়, সুব্রত বিশ্বাস নামে আরও এক ছাত্রের ডিসার্টেসন পেপার থেকেও নকল করা হয়েছে গবেষণাপত্রে। রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে অভিযোগকারী সুজয় কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, তাঁর সম্পাদিত নদিয়ার ইতিবৃত্ত বই থেকেও হুবহু টোকা হয়েছে গবেষণাপত্রে। আরও একাধিক বইয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখান থেকে নাকি এ ভাবেই নিজের গবেষণাপত্রে নকল করেছেন অধ্যাপক তপন কুমার বিশ্বাস। অভিযোগপত্রের সঙ্গে সুজয় কুমার মন্ডলের সমস্ত নথি জমাও দিয়েছেন।

যাঁর বিরুদ্ধে এই নকলের অভিযোগ, সেই তপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ না করা গেলেও তিনি এক দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকের কাছে সরাসরি কোনও উত্তর না দিয়ে বলেন, “যা করার বিশ্ববিদ্যালয় করবে। তারাই ঠিক করবে, কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা।” তাঁর দাবি তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু কী ভাবে? তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি।

নদিয়া জেলার মদনপুরের বাসিন্দা তপন কুমার বিশ্বাস কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর হন। প্রথমে তিনি আশুতোষ কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। পরে ২০০০ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন।

তপন কুমার বিশ্বাসের সহকর্মীদের এক জনের দাবি, “অনেক দিন আগেই আমরা আঁচ করেছিলাম। কারণ ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ডিসার্টেসন পেপারের বিষয় ঠিক করে দিতেন। প্রত্যেককেই নদিয়া জেলার কোনও একটা ব্লক ধরে কাজ করতে বলা হত। এ ভাবেই ২০১১ সালে ডি লিটের জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করার আগেই ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে গবেষণার কাজটা সেরে রেখেছিলেন। কারণ তাঁর নিজের গবেষণার বিষয়ও নদিয়া জেলা।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশের দাবি, পরীক্ষা নিয়ামক ও উপাচার্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই তপন কুমার বিশ্বাস ২০১৭ সালে যেমন ডিন পদে নিযুক্ত হন, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অধ্যাপক ও কর্মচারীরা বেজায় চটেছেন তার উপর।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here