পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় পথ দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারকে সাহায্য দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হল বিজেপিতে। এমনকি সেই সময় জেলবন্দীদের সাহায্যের নামে ডেকে কোনও সাহায্য না করা নিয়েও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক এলাকায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে।
কাল সকালে বীরভূমে আসেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। বীরভূম জেলায় তাঁর বেশ কয়েকটি বৈঠক করার কথা ছিল। ঠিক ছিল, পঞ্চায়েতে নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে দেখা না করে বা একমাসের উপর যাঁরা দলের জন্য জেল খাটলেন তাঁদের কোনওরকম সাহায্য না করে পথ দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারের হাতে এক লাখ টাকা সাহায্য করেন সুব্রতবাবু। এই নিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এপ্রিল পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সেই সময় পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে লরিতে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় লাল্টু রবিদাস নামে এক যুবকের। মৃত ওই যুবক দলীয়কর্মী বলে দাবি করলেও মৃতের পরিবারের বক্তব্য, তারা বিজেপি করে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই পরিবার বামফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত। এমনকী, বিজেপি নেতৃত্ব রামপুরহাট মর্গে দাঁড়িয়ে থেকে মৃতদেহে দলীয় পতাকা চড়াতে পারেনি। এদিকে মনোনয়নের দিন পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশ ২৬ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল। ৩৩ দিন পর তাঁরা ছাড়া পান। গতকাল ডেকেও সাহায্য না করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে রাজ্য নেতৃত্ব নিয়ে ঘুরপথে রামপুরহাট পৌঁছায় জেলা নেতৃত্ব।
নলহাটির হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্যামা রায় দাস বলেন, “রবিবার যুবমোর্চার রাজ্য সম্পাদক ধ্রুব সাহা আমাদের ফোনে জানান রাজ্য নেতৃত্ব আসছেন। যাঁরা জেল খেটেছেন তাঁদের সাহায্য দেবেন। সেই মতো আমরা ২৩ জন উপস্থিত হয়েছিলাম নলহাটি শিশু মন্দিরে। সেখানে রাজ্য নেতৃত্ব সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল ও রাজ্য নেতা শ্যামাপদ মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। মিনিট দশেক বিভিন্ন কথা বলেন। তারপরই কোনওরকম সাহায্য না করে বেরিয়ে যান।
সেখান থেকে সোজা চলে যান বাউটিয়া গ্রামে মৃত লাল্টুর বাড়ি। তাঁর স্ত্রীর হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে নলহাটিতে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা রাজ্য নেতৃত্বের গাড়ি আটকে ক্ষোভের কথা জানাতে জোট বাঁধতে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাজ্য নেতৃত্ব আয়াস, বৈধড়া হয়ে রামপুরহাট পোঁছায়।”
ধ্রুব সাহা বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের আসার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু সাহায্য দেওয়ার কথা বলিনি। যাঁরা এসব কথা বলছেন তাঁরা মিথ্যা বলছেন।” এদিকে এলাকায় রাজ্য নেতৃত্ব সফর করলেও সেকথা জানানো হয়নি জেলার নেতাদের। এই নিয়ে দলের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
নলহাটির বাসিন্দা দলের জেলা সম্পাদক অনিল সিংহ বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের সফরের বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি।” দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, “ওই পরিবার আমাদের সাহায্য চেয়েছিল। আমরা দুঃস্থ পরিবারের কথা চিন্তা করে মৃত লাল্টুর স্ত্রীকে টাকা দিয়েছি। আগামীদিনে লাল্টুর বাবাকেও সাহায্য দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।” তবে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া কর্মীদের সাহায্য করার কথা তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, “ধ্রুব সাহা এরকম বলে থাকলে তিনিই তার জবাব দেবেন। তবে রাজ্য নেতৃত্বের ঝটিকা সফর সম্পর্কে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। আর ফোনে বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আশিস ঘোষকে।” আশিসবাবু বলেন, “আমাকে দু’জকে সূচনা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। আমি সেই মতো শ্রাবস্তী মুখোপাধ্যায় এবং স্বরূপ রতন সিনহাকে জানিয়েছিলাম।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584