নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
আসন্ন খড়গপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী কোন্দলের জন্য আপাতত পিছু হটলেন দিলীপ ঘোষ। নিজের মনোনীত প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝা-এর সঙ্গেই জেলা সভাপতি সমিত দাসকেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি এমনই জানা যাচ্ছে । বুধবার খড়গপুর মহকুমা শাসকের দফতরে প্রেমচাঁদ ঝা-এর পাশাপাশি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আর এস এস ঘনিষ্ঠ পশ্চিম মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সমিত দাসও।
দিলীপ ঘোষ নিজে যদিও একে পিছু হটা বলতে নারাজ। তিনি তাঁর ঘনিষ্ট মহলে বলেছেন, কৌশলগত কারনে মনোনয়ন জমা দেওয়ানো হচ্ছে সমিত দাসকে। যদি ঝা বিতর্কিত জমি হস্তান্তর মামলায় গ্রেফতার হয়ে যান তবে ময়দানে নামবেন সমিতই । অর্থাৎ সেক্ষেত্রে সমিত দাসই হবে বিজেপির অফিসিয়াল প্রার্থী।
উল্লেখ্য খড়গপুর শহরের তলঝুলিতে এক স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের জমি বেআইনি ভাবে কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে বিক্রি করার মদতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। ওই পরিবারের দাবি ৩কোটি টাকা মূল্যের ওই সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন ঝা।
এই মামলায় জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে ঝা-এর বিরুদ্ধে। যদিও আগামী ১৩ই নভেম্বর অবধি ঝা কে গ্রেপ্তার না করার কথা বলেছে আদালত। ১৩ তারিখ ঝা আবার কোর্টে হাজিরা দেবেন, যদি কোর্ট রক্ষা কবচ তুলে নেন তবে ওই দিনই গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন ঝা। সেই অবস্থাতে সমিত দাসকে নিয়েই বিজেপি খড়গপুর উপনির্বাচনের ময়দানে নামতে পারে।
পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে ঝা বিরোধি কোন্দল আরও তীব্র হয়েছে। বিজেপি বাঁচাও কমিটি তৈরি করে ঝা বিরোধিরা প্রবীন বিজেপি নেতা প্রদীপ পট্টনায়ককে প্রার্থী করে ময়দানে নামছে। যদি শেষ অবধি ঝা প্রার্থী থেকে যায় তবে পট্টনায়কও লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন। অন্যদিকে সমিত দাস প্রার্থী হলে পট্টনায়ক লড়াই ছেড়ে দিতে পারেন। এই অবস্থায় ভোট ভাগাভাগি আটকাতে এবং সমস্ত স্তরের কর্মীদের মাঠে নামাতে সমিত দাসকেই রেখে দিতে পারে দল। যদিও আর এস এস এবং বিজেপির শতকরা নব্বই ভাগ কর্মী সমর্থকরাও চাইছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সমিত দাসকে। কারন সমিত দাস দলের জন্য প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করে। আর প্রেম চাঁদ ঝা-এর পরিচয় দিলীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। দলের কাজে বেশি সময় দিতেন না। দলের মাটির কাছাকাছি কর্মীদের সাথে কোনো জনসংযোগ ছিলো না। সেই তুলনায় সমিত দাস অনেকটাই এগিয়ে।
তবে ঘটনা এটাই যে সমিত দাস প্রার্থী হলে লড়াই কঠিন হয়ে যাবে তৃণমূলের কারন ঝা-এর তুলনায় সমিত অনেক শক্তিশালী প্রার্থী। যে কারনে তৃনমূলও চাইছিল ঝা-ই প্রার্থী হোক। বিজেপির কর্মীরা ব্যঙ্গ করে বলছেন, একমাত্র দিলীপ ঘোষ আর তৃনমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারই চাইছেন যে প্রেমচাঁদ ঝা বিজেপির প্রার্থী হোক।
আরও পড়ুনঃ উপনির্বাচনে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে তৃণমূলের মিছিল কালিয়াগঞ্জে
এদিকে সমিতকে মনোনয়ন করতেই, তা শুনেই বিজেপির ভাঙা পালে আবার জোরালো হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। তাঁরা চাইছেন সমিতই শেষ অবধি টিকে যাক প্রার্থী হিসাবে তাহলে জি জান লড়িয়ে দেবেন তাঁরাও। শুধু তাই নয় সমিত প্রার্থী হলে খুশি তৃণমূলের অভ্যন্তরে প্রদীপ সরকার বিরোধিরাও। তাঁরা চাইছেন কড়া প্রতিদ্বন্দিতার মুখে পড়ুক প্রদীপ সরকার, হেরে যান তিনি।
যদি শেষ পর্যন্ত সমিত এর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে যায় তবে তৃণমূল কংগ্রেসকেও আলাদাভাবে রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করতে হবে, যা এতদিন ঝা এর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল তা এখন অচল হয়ে গিয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584