পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুরঃ
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজেপি সমর্থিত অধ্যাপক ও গবেষক সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন করা এবং সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক দেবাশীষ বিশ্বাসকে শোকজ করেছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই শোকজ ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দূর্লভ সরকারের এই শোকজ চিঠি সামনে আসতেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংবিধানিক স্বাধীনতা হরনের অভিযোগ তুলে পাল্টা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক এদিনেও ওই শোকজের কোনও জবাব দেননি বলে জানা গিয়েছে।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১ আগস্ট ( বিজেপি সমর্থিত) জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়েছিল।আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলার শিক্ষক ও অধ্যাপকদের সম্মান জানাতে গুরু বন্দনা নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এই অনুষ্ঠানের জন্য সংগঠনের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার হলের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করাও হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে ওই সেমিনার হল ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলগেটে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়।
ওই বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দূর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন সংগঠনের সদস্য তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনিতির অধ্যাপক দেবাশীষ বিশ্বাস।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দূর্লভ সরকার অর্থনীতির অধ্যাপক দেবাশীষ বাবুকে শো-কজ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ তোলা হয় ওই চিঠিতে।পাশাপাশিভাবে তাঁর তোলা সমস্ত অভিযোগের প্রমান দাখিল করার নির্দেশও দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। এই শো-কজের জবাব দেবার জন্য তাকে ৭ দিন সময় দেওয়া হয়।
অধ্যাপক দেবাশীষ বিশ্বাস জানিয়েছেন,“ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কাউকে শোকজ করার ক্ষমতা বা এক্তিয়ার রেজিস্টারের নেই।আমরা রেজিস্টারের অধীনস্থ কর্মচারী নই। ভাইস চ্যান্সেলর বা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে শোকজ করা হয়েছে, এমন কোনও উল্লেখ নেই। কোন ক্ষমতায় রেজিস্ট্রার এই এক্তিয়ার বর্হিভূত কাজ করেছেন জানি না। সংবিধান প্রদত্ত বাক স্বাধীনতা হরন করার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রারকে পাল্টা চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
দেবাশিসবাবু আরও জানিয়েছেন,“ চিঠিতে যে অবমাননাকর মন্তব্যের কথা বলেছেন তা আমি করিনি।আমাদের অনুষ্ঠানে বিজেপি সাংসদের (রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট) আসার কথা শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে অনুষ্ঠান বাতিল করার চক্রান্ত করা হয়েছে।তবে আমি এখনও ওই চিঠির জবাব দিইনি। এর আগেও ওই রেজিস্ট্রার আমার বিরুদ্ধে একাধিকবার চক্রান্ত করেছেন।’’
আরও পড়ুনঃ রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকদের ধর্ণা প্রদর্শন কর্মসূচি
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অনীল ভুঁইমালি জানিয়েছেন,“চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ব্যাপারেই কোনও শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মচারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংবাদ মাধ্যমের কাছে মন্তব্য করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও নির্দেশ অমান্য করে ওই অধ্যাপক বিবৃতি দিয়েছেন। ভিত্তিহীন কিছু অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তাকে শো-কজ করার জন্য রেজিস্ট্রারকে বলা হয়েছে।তার জবাব পেলে সেটি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে বিবেচনা করা হবে।’’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584