নিজস্ব সংবাদদাতা,মুর্শিদাবাদঃ
মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি ঘিরে বিতর্ক।জেলা শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী ২০১৮ সালে বদলি হওয়া শিক্ষকদের পূর্বের স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে এই বিতর্কের সূত্রপাত।
উঠছে আর্থিক লেনদেনের কথাও।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে মাসের পর জেলায় ৩২৯ জন প্রাথমিক শিক্ষক ড্রাফট বদলি হন এবং ১১০ জন শিক্ষক স্থায়ী বদলি হন।সাম্প্রতিক কালে জেলা শিক্ষা দফতর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে,ড্রাফট এবং স্থায়ী বদলি হওয়া শিক্ষকদের পূর্বের স্কুলে ফিরে যেতে হবে।
এবিষয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পূরবী দে বিশ্বাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, ড্রাফট বদলির কিছু ক্ষেত্রে দফতর লক্ষ্য করেছে যে এটি আইন অনুযায়ী হয়নি।এর ফলে অনেক স্কুলে একমাত্র শিক্ষক এবং শিক্ষক শূন্য হয়ে গেছে ফলে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তাদের পূর্বের স্কুলেই ফিরে যেতে হবে।তিনি আরও জানান,এখানে তৃতীয় কোন ব্যক্তির হস্তক্ষেপ মানা হবে না।একইসাথে এই বদলি ঘিরে টাকার লেনদেনের বিষয়ও তিনি উল্লেখ করে জানান যে,এইসব কিছু চলবে না আইন অনুযায়ী সরকারি নির্দেশ কার্যকরী করা হবে।
পূর্বের স্কুলে ফিরে যাওয়া বিষয়ে জেলা শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলি সোচ্চার হয়েছে।বঙ্গীয় নব উন্মেষ প্রাথমিক শিক্ষক সংঘের রাজ্য সম্পাদক সুদীপ্ত সিনহা এ বিষয়ে অভিযোগ করে জানান যে,শিক্ষার স্বার্থে শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছিল সেখানে শিক্ষার স্বার্থ যদি লঙ্ঘিত না হয় তাহলে তাদেরকে পূর্বের স্কুলে ফেরত পাঠানো যাবে না,বরং তাদের বদলি হয়ে আসা স্কুলেই পার্মানেন্ট বেসিসেই বদলি করা হোক।
এবিষয়ে তিনি একই সাথে আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনার অভিযোগও তোলেন। একই সাথে তিনি সরকারি এই সিদ্ধান্তকে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত বলেও ইঙ্গিত করেন।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি শুভজিৎ সিনহা জানান,আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু দাবি সনদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক তথা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পূরবী দে বিশ্বাসের কাছে রেখেছিলাম তিনি তার বেশীরভাগই মেনে নিয়েছেন।শুধু স্কুল ইউনিফর্ম বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য আছে।
অপরদিকে কংগ্রেস প্রভাবিত ডাব্লিউবিএপিটিএ’র জেলা সভাপতি অশোক সরকার জানান যে,শিক্ষকদের উপর আঘাত নেমে আসলে আমরা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবো।তবে বদলির ক্ষেত্রে সেটা যদি আইন অনুযায়ী না হয় তবে আমাদের কিছু বলার নেই।
একই সুর শোনা গেল নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সুশোভন খানের বক্তব্যেও।
অপরদিকে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক এবং পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অলোক গোস্বামী সরাসরি বদলি ঘিরে আর্থিক লেনদেনকে ইঙ্গিত করেছেন।
সমস্ত ড্রাফট বদলিকে পরিবর্তন না করে কেন বিশেষ কিছু ড্রাফট বদলি প্রাপ্ত শিক্ষককে তাদের পূর্বের স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবিষয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
এই বদলি বিতর্ক নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান জানান,অনেকে অনেকভাবে অসাধু উপায়ে এইসব কাজগুলো করেছিল,এই অসাধু কাজগুলো যখন প্রকাশ পেয়েছে তখন ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।
অপরদিকে বহরমপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নাড়ু গোপাল মুখোপাধ্যায় জানান,জেলা সভাপতি আবু তাহের খান এবং আমি শহর সভাপতি হিসাবে দলীয়ভাবে আলোচনা করে বদলির যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কোনটা থাকবে কোনটা থাকবে না সেগুলো আমরা ঠিক করবো।কেউ প্রভাব খাটাতে গেলে সেই শিক্ষকের চাকরি কিভাবে থাকে সেটাও আমরা দেখবো বলে হুমকি দেন।
একই সাথে তিনি বলেন,আমাদের দলের পক্ষে কাজ করে যে সমস্ত শিক্ষক তাদের প্রতি যাতে অবিচার করা না হয় সেটা দেখতে বলবো।
প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি ঘিরে এই বিতর্কের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে উঠে আসছে আর্থিক লেনদেনের প্রশ্ন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584