করোনা আতঙ্কে শুনশান সোনাগাছি, খদ্দেরের অভাবে মাথায় হাত যৌনকর্মীদের

0
396

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

তাদের নিষিদ্ধ বাহুডোরে যেন জীবনের স্বস্তি খুঁজে পায় আপামর কলকাতা। আর সেই স্বস্তিকেই মূলধন করেই শহরের প্রত্যেক যৌনপল্লীতে প্রত্যেক রাত যেন হয়ে ওঠে আগের থেকেও আরও রঙিন।

Sex workers | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

কিন্তু করোনা ভাইরাসের রক্তচক্ষুতে কার্যত সেই ব্যবসাই যেন বন্ধের মুখে। নোট বাতিলের পর ফের অজানা আতঙ্কে খদ্দেরের অভাবে মাথায় হাত পড়েছে শহরের যৌনকর্মীদের।

Sonagachi | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট হয়ে রবীন্দ্র সরণি হোক অথবা বউবাজার, কালীঘাট, খিদিরপুর, ওয়াটগঞ্জের যৌনপল্লি, সর্বত্র ছবিটা কম বেশি যেন একই। যৌনকর্মীদের ৯০% যৌনপল্লীতে থাকেন না। অনেক দূর থেকে এসে বাড়ি ভাড়া নিয়ে এখানে দেহ ব্যবসা করে ফের চলে যান।

আরও পড়ুনঃ করোনা:৩১ শে মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

corona panic | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

আবার আছেন অনেক ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীও, যারা অন্যের ভাড়াবাড়িতে ঘন্টা হিসেবে টাকা দেন। তাদের শরীর রোজগারে চলে অনেক পরিবার, অনেক সংসার। আর ব্যবসা হোক না হোক, বাড়ি ভাড়ার টাকাটা অবশ্যই গুনতে হয় প্রত্যেককেই।

corona fears | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

করোনা আতঙ্ক মানুষের মনে জাঁকিয়ে বসার পর থেকে এই যৌনকর্মীরাই বলছেন, খদ্দের আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার টাকা পর্যন্ত উঠছে না। মাসিক ৫-৭ হাজার টাকা থেকে রয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকার ভাড়ার ঘরও।

আরও পড়ুনঃ করোনা মোকাবিলায় তৎপর রাজ্য সরকার, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ

সবরকম সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও করোনা ভাইরাসের অজানা আতঙ্ক কাটিয়ে যৌনকর্মীদের দরজায় পা রাখতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। কারণ এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে প্রতিকার এখনও অনেকেরই অজানা।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, মসজিদ বাড়ি লেন, রবীন্দ্র সরণি, শেঠবাগান, রামবাগান মিলিয়ে দৈনিক ৩০-৪০ হাজার খদ্দের আসেন।

সঙ্গে স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মী মিলিয়ে ১০-১২ হাজার যৌনকর্মী। পরিস্থিতি সামলাতে যেখানে করমর্দন করতেও বারণ করা হচ্ছে, সেখানে যৌনপেশায় সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভবই নয়। তাই আতঙ্কে যৌনপল্লি যাওয়া কমিয়েছেন খদ্দেররা।

যৌন কর্মীরা বলছেন ভ্রাম্যমান ছাড়া তাদের কিছু নিয়মিত বাঁধা খদ্দের রয়েছে। যারা প্রত্যেক সপ্তাহে এক দুবার নিয়মিত আসেন। এখন করোনা ভ্রাম্যমাণরা তো বটেই, নিয়মিত খদ্দেররাও আর আসছেন না।

দোলের পর থেকেই করোনা আতঙ্ক যেন বেশি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। বউবাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক যৌনকর্মীর জবাব, ‘ভয় যে আমাদের নেই তা নয়, কিন্তু কী করব! আমাদের যা কাজ, তাতে তো মাস্ক পরে থাকলে চলবে না!’ পাশে দাঁড়ানো আরেক যৌনকর্মী বলেন, ‘খদ্দের করোনা ভাইরাস নিয়ে এলে ক্ষতি তো হবে আমাদেরও। কিন্তু অত ভয় পেলে আমাদের চলবে না। প্রতিদিন যা মরছি, তাতে অতসব ভাবার সময় নেই।’

আয় কমেছে দালাল হিসেবে কাজ করা কয়েক হাজার ব্যক্তিরও। এক দালালের আক্ষেপ, ‘ফোন করলেই করোনার কথা বলছে। মেসেজ আসছে। রোগের কথা জানে না, এমন কেউ নেই। সবারই তো প্রাণের ভয় আছে!’

যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্পাদিকা তথা সচিব কাজল বোস বলেন, ‘মেয়েদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, দেখতে রাতে আমরা পরিদর্শনে বেরোই। লোকজন কম আমাদেরও চোখে পড়েছে। কিন্তু এখানে কারোরই কিছু করার নেই। তবে ওদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তাই প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু জায়গায় করোনা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তাই সচেতনতার লক্ষ্যে এ বার করোনা নিয়েও কর্মসূচি তৈরি করা হচ্ছে।সোমবার থেকেই সচেতনতা অভিযানে ফের আমরা পথে নামব।’

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here